মালদা, ২০ নভেম্বর : বামেদের সঙ্গে জোট করে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে লড়াই করছে কংগ্রেস ৷ অথচ এখনও পর্যন্ত সেখানে সেভাবে প্রচারে নামতে দেখা যায়নি দীপা দাশমুন্সি কিংবা মহম্মদ সেলিমকে ৷ যদিও এনিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷ দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমশ কমছে ৷ অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের সেদিকে কোনও নজর নেই ৷ তারা রাম মন্দির আর বাবরি মসজিদ নিয়ে ব্যস্ত ৷ এভাবেই এই সরকার মানুষকে প্রতারিত করতে চায় ৷ এই ভাষাতেই কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র ৷
রাজ্যের যে তিনটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে ,তার মধ্যে অন্যতম উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র ৷ কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথ রায়ের মৃত্যুতেই এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ৷ ফলে এই কেন্দ্র ধরে রাখা কংগ্রেসের কাছে একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ ৷ তবে সেই লড়াই যে সহজ হবে না তা বিলক্ষণ জানে কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷
গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিল BJP ৷ তৃণমূল ছিল দ্বিতীয় স্থানে ৷ ফলে প্রিয়ভূমে কংগ্রেসের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ৷ সেটা বিলক্ষণ জানেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও ৷ সম্ভবত সেকারণেই আজ তিনি যেন কিছুটা পিছন থেকে খেলতে নেমেছেন ৷ তিনি বলেন, "সবসময় যে জনসভা করলেই প্রচার হবে তা নয় ৷ আমরা প্রচারের ধারাটা একটু পালটেছি ৷ আমরা দেখেছি, এদের অর্থ, ক্ষমতা, প্রশাসনের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করা যাবে না ৷ তাই আমরা দলের নেতা-কর্মীদের বলেছি মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে ৷ দীপা দাশমুন্সিও সেই কাজ করে যাচ্ছেন ৷ আর বামেদের সঙ্গে আমাদের শুধুই নির্বাচনি জোট হয়নি, এই জোট রাজ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জোট ৷ দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদকে সোচ্চার করার জোট ৷ আমরা ভোটে সিট পাব কি পাব না তা বড়ো কথা নয় ৷ আমাদের কাছে অনেক বড়ো কথা রাজ্য ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, তার ধর্মনিরপেক্ষতা আর মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা ৷
গতকালই জেলায় প্রশাসনিক সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ইশু নিয়ে জেলার দুই সাংসদকে বিঁধেছেন ৷ দক্ষিণ মালদা কেন্দ্রের সাংসদ কংগ্রেসের ৷ মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সোমেনবাবু বলেন, "মালদা কোথায়? লন্ডনে, নাকি আফগানিস্তানে? মালদা তো রাজ্যেরই মধ্যে ৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সেটা কি অস্বীকার করতে পারেন? তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ৷ বাংলার কোনও সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব তাঁর হাতেই তুলে দিয়েছে সবাই ৷ তিনি গতকাল বলেছেন, যার যেটা কাজ তাকেই সেটা করতে হবে ৷ উনি নিজের কাজটা ঠিকমতো করছেন না কেন? উনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাজীব কুমারকে ছাড়াতে পারেন ৷ আর প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারছেন না, মালদার জাতীয় সড়কের খারাপ অবস্থা ৷ সেটা ঠিক করে দিন ৷ এটা তাঁর দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ অবশ্য এটা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ৷"
সম্প্রতি কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির SPG নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ সেপ্রসঙ্গে সোমেনবাবু বলেন, "ওরা কি ভেবেছে, সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধির SPG নিরাপত্তা তুলে নিলে তাঁরা ঘরে ঢুকে যাবেন? নেহরু পরিবারের রয়েছে আত্মত্যাগের ইতিহাস ৷ আর এদের ভোগের ইতিহাস ৷ SPG না থাকলে ওরা রাস্তায় বেরোতে পারবে না ৷ এই রাজ্যে BJP ও তার দোসরকে রোখার জন্য শুধু বামেদের নয়, আমরা সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি ৷" প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, "৪৫ বছরের মধ্যে দেশে বেকারত্ব বর্তমানে রেকর্ড তৈরি করেছে ৷ বিশ্বের অর্থনীতিবিদ্রা বলছেন, ভারতবর্ষের অর্থনীতি এমন তলানিতে এসে দাঁড়াবে, যখন দারিদ্র্যের তাড়নায় মানুষ মানুষকে খেয়ে ফেলবে ৷ ক'দিন আগেই কাগজে বেরিয়েছে, গ্রামীণ ও শহুরে ভারতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছে ৷ অথচ এই সরকারের সেদিকে কোনও নজর নেই ৷ তারা রাম মন্দির আর বাবরি মসজিদ নিয়ে ব্যস্ত ৷ এভাবেই এই সরকার মানুষকে প্রতারিত করতে চায় ৷"