মালদা, 21 অক্টোবর: শব্দবাজিতে রাশ টানতে এবার বাজি বাজারের আয়োজন করেছে মালদা জেলা পুলিশ ও প্রশাসন ৷ মালদা কলেজ ময়দানে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সেই বাজার ৷
কিন্তু যেখানে বজ্র আঁটুনি, সেখানেই ফস্কা গেরো ৷ পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারিতে এই বাজি বাজারের স্টলে ব্যবহার করা হয়েছে কাপড় ৷ যা পুরোপুরি নিয়ম বিরুদ্ধ ৷ এখনও পর্যন্ত কোনও স্টলে আগুন নেভানোর মতো কোনও ব্যবস্থাও নজরে আসেনি ৷ নেই দমকলের কোনও ইঞ্জিনও ৷
যদিও এই নিয়ে বাজারে উপস্থিত দমকল বিভাগের আধিকারিক বিলাস বণিক বলেন, "আমরা বাজি বিক্রেতাদের নিয়ে দফায় দফায় সচেতনতামূলক আলোচনা চালাচ্ছি ৷ প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে নিজেদের স্টলে ফায়ার এক্সটিংগুইজার লাগাতে বলা হয়েছে ৷ ছোট স্টলগুলিতে একটি করে এবং বড়গুলিতে একাধিক ফায়ার এক্সটিংগুইজার মজুত রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ৷ কী করে সেসব ব্যবহার করতে হয় তা আমরা ব্যবসায়ীদের হাতেকলমে শেখাচ্ছি ৷ তাঁরা নিজেরাই সেসব কিনবেন ৷ প্রতিটি স্টলে বালিও রাখতে হবে ৷ বাজারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের গাড়ি থাকবে ৷ আমরাও থাকব ৷ স্টলগুলিতে যথেচ্ছ কাপড়ের ব্যবহার করা হয়েছে ৷ আমরা ব্যবসায়ীদের স্টল থেকে কাপড় খুলতে বলেছি ৷ শুধু টিন দিয়েই স্টল তৈরি করতে হবে ৷"
আরও পড়ুন : 'কাঁচামালের চড়া দাম ও সরকারি নীতির কারণে' সংকটে বুড়িমার বাজির বাজার
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, যে কোনও মূল্যে এবার কালীপুজোয় শব্দবাজির ব্যবহার বন্ধ করা হবে ৷ তার জন্য প্রধান যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা হল বাজি বাজার ৷ এবার পাড়ার মোড়ে খুচরো ব্যবসায়ীদের আর বাজি বিক্রি করতে দেওয়া হবে না ৷ কোনও দোকান থেকেও কেউ বাজি বিক্রি করতে পারবেন না ৷ তার পরিবর্তে শুধুমাত্র মালদা কলেজ ময়দানের অস্থায়ী বাজারে বাজি বিক্রি করা যাবে ৷ যেসব বাজি ব্যবসায়ীর লাইসেন্স 2019 সালে পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তাঁরাই এই বাজারে ব্যবসা করতে পারবেন ৷ শুধু দুই শহর নয়, এই নির্দেশিকা জারি হয়েছে গোটা জেলার জন্য ৷
জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলায় মোট 35 জন বাজি ব্যবসায়ীর লাইসেন্স 2019 সালে পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে ৷ কিন্তু শুধুমাত্র রথবাড়ি পাইকারি বাজারে অন্তত 50 জন ব্যবসায়ী বাজির পাইকারি ও খুচরো ব্যবসা করেন ৷ গোটা জেলায় সংখ্যাটা একশোরও বেশি ৷ এর সঙ্গে মরশুমি ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন ৷ তাঁরা বিভিন্ন পুজোর আগে অল্পবিস্তর পুঁজি এই ব্যবসায় নিয়োগ করেন ৷ প্রশাসনিক নির্দেশিকায় এবার সেই মরশুমি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ ৷ তবে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা কলেজ মাঠের স্টলে ব্যবসা শুরু করেছেন ৷
আরও পড়ুন : সবুজ বাজি কতটা সুরক্ষিত ? কী বলছেন চিকিৎসকরা
জেলায় 35 জন লাইসেন্সধারী বাজি ব্যবসায়ী থাকলেও মালদা কলেজ ময়দানে মোট 28টি বাজির স্টল করা হয়েছে ৷ এর মধ্যে 10টি পাইকারি ও 18টি খুচরো স্টল ৷ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তিনবার বৈঠক করা হয়েছে ৷ বৈঠকেই বলা হয়েছিল, 28টি স্টল হলেই লাইসেন্সধারী সবাই বাজির ব্যবসা করতে পারবেন ৷ ওই বাজারে নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷ অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা ৷ প্রথমে বলা হয়েছিল 21 থেকে 25 অক্টোবর পর্যন্ত এই অস্থায়ী বাজার বসবে ৷ পরে অবশ্য ছটপুজোর কথা মাথায় রেখে বাজারের স্থায়িত্ব বাড়িয়ে 30 অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে ৷
কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগে বাজার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এতে তাঁদের ব্যবসা মার খাবে ৷ নিরাপত্তা নিয়েও তাঁদের প্রশ্ন রয়েছে ৷ 53 বছর ধরে বাজির খুচরো ব্যবসা করছেন পুরাতন মালদার মহানন্দা কলোনির গণেশচন্দ্র সাহা ৷ তাঁর কথায়, "শব্দবাজিতে রাশ টানতে প্রশাসন এই বাজার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ আট মাস আগে আমি তামিলনাড়ু থেকে মাল তুলেছি ৷ তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি ৷ নইলে মাল ঘরে থেকে যাবে ৷ প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের লাভের থেকে লোকসানই বেশি হবে ৷ দূরের মানুষজন আর ঘরের কাছে বাজি কিনতে পারবেন না ৷ কারণ, এই বাজার ছাড়া অন্য কোথাও বাজি বিক্রি করায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে ৷ তাছাড়া আবহাওয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ৷ খোলা জায়গায় হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বাজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে ৷ যেসব ব্যবসায়ী একা ব্যবসা করেন, তাঁদের পক্ষে এখানে ব্যবসা করা খুব মুশকিল ৷ এবার যদি এই বাজারে লাভ না হয়, তবে আগামী বছর ক'জন ব্যবসায়ী বাজির ব্যবসা করবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৷"
আরও পড়ুন : দু'বছর পর টালায় ফিরছে পরিবেশবান্ধব বাজি বাজার
আরেক পাইকারি বাজি ব্যবসায়ী আনন্দকুমার পাল বলেন, "সাড়ে 16 হাজার টাকা দিয়ে স্টল নিতে হয়েছে ৷ এর সঙ্গে বিদ্যুৎ, নৈশপ্রহরী, দমকলর্মীদের খরচ আমাদেরই দিতে হবে ৷ প্রশাসনের লোকজনের খরচও আমাদের ৷ বৈঠকে আমাদের সেকথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ আমরা প্রশাসনকে অনেকবার আবেদন জানিয়েছিলাম, অন্তত এবার আমাদের দোকান থেকেই ব্যবসা করতে দেওয়া হোক ৷ কিন্তু প্রশাসন আমাদের কথা মানেনি ৷ এবার ছোট মরশুমি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না ৷ তাঁরা আমাদের কাছ থেকে কেনা মাল ফেরত দিতে শুরু করেছেন ৷ এতে আমাদের সমস্যা আরও বেড়েছে ৷ আমরা চাই, হয় সরকার বাজির ব্যবসা বন্ধ করে দিক, অথবা আমাদের দোকানেই ব্যবসা করতে দেওয়া হোক ৷ তবে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বাজি বিক্রি করতে দেওয়া হবে বলে শুনেছি ৷ সেটাও যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তবে আমরা পথে বসব ৷"
বাজি ব্যবসায়ীদের এখন একটাই চিন্তা, সাড়ে 16 হাজার (পাইকারি) কিংবা আট হাজার (খুচরো) টাকায় স্টল নিয়ে, তার সঙ্গে আনুষাঙ্গিক খরচ যোগ করে যে টাকা এই বাজারে ব্যয় হবে, ব্যবসার পর সেই টাকা ঘরে আসবে কি না ৷ লাভ তো অনেক দূরের ব্যাপার ৷
আরও পড়ুন : ছৌ নাচের মাধ্যমে বাজি না ফাটানোর আবেদন জেলা পুলিশের