মালদা, 20 মার্চ: আরও এক দুর্নীতির গন্ধ ৷ এবার শিশু-কিশোরদের খাবারে দুর্নীতি ৷ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় অডিট টিম গঠিত হতেই রাজ্যের মিড ডে মিলের অ্যাপ থেকে গায়েব ছ’বছরের নথি (Mid Day Meal Data) ! এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষক মহলে ৷ সরব শিক্ষক সংগঠনগুলিও ৷ সম্প্রতি এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে মিড ডে মিল সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ কেন্দ্রের কাছে জমা পড়েছিল ৷ এনিয়ে কেন্দ্রকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও ৷ অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে চলতি বছরের শুরুতেই বেশ কয়েক দফায় রাজ্যে আসে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল ৷ দলের সদস্যরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যান ৷ বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে তাঁরা মিড ডে মিল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন ৷
দিল্লি ফিরে তাঁরা নিজেদের রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে জমা দেন ৷ তাঁদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই প্রধানমন্ত্রী পোষণ যোজনার আওতায় থাকা রাজ্যের স্কুলগুলিতে মিড ডে মিলের অডিট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ শুধু স্কুলই নয়, অডিট করা হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্লক ও জেলা দফতরেও ৷ এই অডিট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়ান অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস দফতরকে ৷ ইতিমধ্যে সিনিয়র অডিট অফিসার অরিজিৎ মজুমদারের নেতৃত্বে ছ’জনের অডিট টিম গঠন করা হয়েছে ৷ গত শনিবার এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছেন কেন্দ্রীয় দফতরের ডেপুটি অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল লিঙ্গরাজ নায়েক এস ৷
জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে রাজ্যের পাঁচটি জেলায় মিড ডে মিলের অডিট করবেন ওই টিমের ছয় সদস্য ৷ আগামী শুক্রবার উত্তর 24 পরগনা থেকে সেই অডিট শুরু হবে ৷ কিন্তু এই অডিট টিম গঠন হওয়া মাত্রই রাজ্য সরকারের মিড ডে মিলের অ্যাপ্লিকেশন অ্যাপ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে 2017 থেকে 2023 সাল পর্যন্ত যাবতীয় তথ্য বলে সূত্রের খবর ৷ অথচ এই অ্যাপ থেকেই যে কোনও স্কুল, ব্লক ও জেলার মিড ডে মিল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা যেত ৷
এই অ্যাপ যে ক’দিন ধরে কাজ করছে না তা সুনিশ্চিত করে দিয়েছেন মালদা জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকরা ৷ নাম গোপন রাখার শর্তে তাঁরা জানিয়েছেন, কোনও স্কুলে মিড ডে প্রতিদিন কত পড়ুয়ার রান্না হচ্ছে, কী রান্না হচ্ছে, কত পড়ুয়া খাবার পাচ্ছে, তার যাবতীয় তথ্য তাঁরা এই অ্যাপে আপলোড করেন ৷ অ্যাপের ডেটা ব্যাংকে সেই তথ্য জমা থাকে ৷ এই অ্যাপের মাধ্যমেই যে কোনও স্কুলের মিড ডে মিলের উপর নজরদারি চালাতে পারে রাজ্য শিক্ষা দফতর ৷ কিন্তু অডিট শুরুর আগে সেই অ্যাপ থেকে ডেটা হাপিশ হল কীভাবে? কেনই বা হল ! এসবই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন ৷ আরও প্রশ্ন, দুর্নীতি ধামাচাপা রাখতেই কি এই অ্যাপ থেকে ছ’বছরের তথ্য উবে গিয়েছে?
এনিয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সংগঠনের নেতা কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, "ওই অ্যাপেই আমাদের নিয়মিত মিড ডে মিল সংক্রান্ত তথ্য আপলোড করতে হয় ৷ কিন্তু ক’দিন ধরে সেই অ্যাপে কোনও ডেটা দেখা যাচ্ছে না ৷ ফলে কত পড়ুয়া মিড ডে মিল খেয়েছে, তার কোনও পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে না ৷ এই অ্যাপে আপলোড থাকা তথ্যের ভিত্তিতেই মিড ডে মিলের যাবতীয় হিসাব করা হয় ৷ এনিয়ে আমরাও কিছুটা আতঙ্কে রয়েছি ৷ কেন এমন হয়েছে, আমাদের জানা নেই ৷"
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারীর বক্তব্য, অনলাইনে যে সরকারি তথ্য থাকে, সেটা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার সবার জন্যই ৷ স্বচ্ছতার জন্য এটাই হওয়া উচিত ৷ এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে অডিটও করা যায় ৷ অথচ সেই তথ্যই মুছে ফেলা হয়েছে ৷ এতেই বোঝা যাচ্ছে, কিছু একটা হয়েছে ৷ সন্দেহ তো হবেই ৷ কেন এভাবে সরকারি অ্যাপ থেকে তথ্য মুছে দেওয়া হল, সেটা কেন্দ্রীয় সরকারই দেখুক ৷ প্রকৃত ঘটনা সামনে আনার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে ৷ রাজ্য সরকারকেও নিজেদের ভুল প্রকাশ্যে আনতে হবে ৷ বাচ্চাদের পুষ্টি নিয়ে এমন ঘটনা ঘটলে মানুষের কাছে কোন ছবি উঠে আসবে ! প্রতিটি বিষয়ে দুর্নীতি ঢাকতে লুকোচুরি খেলা মেনে নেওয়া যায় না বলে তাঁর মত ৷
অবশ্য এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র ৷ তিনি বলেন, "এমন কোনও ঘটনা আমাদের জানা নেই ৷ রাজ্যে এখন রাজনৈতিকভাবে অনেক কিছুই হচ্ছে ৷ মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার তো মিড মিলের টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল ৷ সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও রাজ্য সরকার পড়ুয়া পিছু সপ্তাহে 20 টাকা করে বরাদ্দ করেছে ৷ বাচ্চারা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায়, তার দিকে নজর রাখা হয়েছে ৷ রাজ্যের মিড ডে মিলের অ্যাপ থেকে ডেটা গায়েব হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই ৷ শিক্ষকদের কোনও সমস্যা হলে তাঁরা শিক্ষা দফতরকে জানান ৷"
আরও পড়ুন: দুই শিক্ষকের কাজিয়ার জেরে আটদিন মিড-ডে-মিল বন্ধ স্কুলে