ETV Bharat / state

Shibram's House Condition: জন্মভূমিতেই উপেক্ষিত রসসম্রাট শিবরাম, ভগ্নপ্রায় বাড়ি সংস্কার করে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি

রসসম্রাট শিবরাম চক্রবর্তীর জন্ম 1903 সালের 13 ডিসেম্বর ৷ তাঁর বাড়ি মালদার চাঁচলের পাহাড়পুরে ৷ যে বাড়িতে তিনি বসবাস করতেন, সেই বাড়ি এখন ভেঙে পড়ার মুখে ৷ অথচ তাঁর সেই বাড়ি বাংলা সাহিত্যপ্রিয় মানুষের দর্শনীয় জায়গা হয়ে থাকতে পারত ৷ তাঁর সেই বাড়ি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা (Shibram Chakraborty's Family Members) ৷

author img

By

Published : Feb 3, 2023, 5:33 PM IST

Shibram's House Condition
শিবরামের ভগ্নপ্রায় বাড়ি সংস্কার করে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি
জন্মভূমিতেই উপেক্ষিত রসসম্রাট শিবরাম

মালদা, 2 ফেব্রুয়ারি: শুরু হয়েছে কলকাতা বইমেলা (Kolkata Book Fair 2023) ৷ আরও অনেক লেখকের সঙ্গে বইমেলায় এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বাংলা সাহিত্যের রসসাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী (Shibram Chakraborty) ৷ অবশ্য নিজেকে তিনি শিব্রাম চক্কোত্তি লিখতেই বেশি পছন্দ করতেন ৷ সেই শিবরামের জন্ম এবং ছেলেবেলা কেটেছে মালদাতেই ৷ চাঁচলের পাহাড়পুরে ৷ যে শিবরাম কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে বাংলা সাহিত্যে অবাধে পদচারণা করেছেন, তাঁকে কতটা যোগ্য সম্মান দিয়েছে প্রশাসন ? যে বাড়িতে তিনি বসবাস করতেন, সেই বাড়ি এখন ভেঙে পড়ার মুখে ৷ তাঁর নামে চাঁচলে আজ পর্যন্ত কোনও রাস্তার নামকরণও হয়নি ৷ অথচ তাঁর সেই বাড়ি বাংলা সাহিত্যপ্রিয় মানুষের দর্শনীয় জায়গা হয়ে থাকতে পারত ৷ তাঁর সেই বাড়ি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷

1903 সালের 13 ডিসেম্বর চাঁচলের পাহাড়পুরেই জন্ম হয় শিবরামের ৷ সেখানে কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা ৷ তাঁর মাসি সিদ্ধেশ্বরীদেবী ছিলেন চাঁচলরাজ ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরীর স্ত্রী ৷ শিবরামের বাবা শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী থাকতেন মুর্শিদাবাদ জেলার নিমতিতায় ৷ অভাব ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গীর ৷ এদিকে ঈশ্বরচন্দ্র ও সিদ্ধেশ্বরীদেবী ছিলেন নিঃসন্তান ৷ সিদ্ধেশ্বরীদেবী তাঁর বোনপো শিবরামকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন ৷ সেকারণেই শিবরামের মনে এসেছিল, মেসোমশায় উত্তরাধিকারী হিসাবে তাঁকে মনোনীত করবেন ৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি ৷

পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র তাঁদের আত্মীয়, বড়িশার জমিদার পরিবারের সন্তান শরৎচন্দ্রকে দত্তক নেন ৷ স্বপ্নভঙ্গ হয় শিবরামের ৷ মাত্র 16 বছর বয়সে তিনি পাহাড়পুর ছেড়ে চলে যান কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের ভাঙাচোরা ঘরে ৷ সেখান থেকেই লেখেন একের পর এক রসালো উপন্যাস ৷ যেসব বাংলা সাহিত্যে এখনও মণিমানিক্য ৷ বর্তমানে 81 নম্বর জাতীয় সড়কের ধারেই শিবরামের সেই পৈতৃক ভিটে ৷ এখান থেকে কলকাতা চলে যাওয়ার পর আর কখনও চাঁচলে ফিরে আসেননি তিনি ৷ তবে তাঁর লেখায় বারবার উঠে এসেছে চাঁচলের নানা কথা ৷

আরও পড়ুন: দোকানেই সাহিত্যচর্চা, পাগল কটাক্ষেও হার না-মানার নাম বেহালার পিন্টু

তাঁর বংশধররা এখনও সেই ভিটের একাংশেই বসবাস করেন ৷ রসসম্রাটের বাড়িটি এখন ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে ৷ ঝরে পড়ছে পলেস্তারা, বেরিয়ে এসেছে চাঙড় ৷ ঘরের ভিতরে এখনও রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত কিছু আসবাবপত্র ৷ আলমারিতে রয়েছে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বইপত্রও ৷ কিন্তু প্রশাসনিক উদাসীনতায় সেসব কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে ৷ চক্রবর্তী পরিবারের এক সদস্য বিথি চক্রবর্তী বলেন, "শিবরাম চক্রবর্তীর বসতবাড়ি প্রায় ভেঙে পড়েছে ৷ ওই বাড়িতে কেউ থাকতে পারেন না ৷ আমরা চাই, এই বাড়িটির দিকে প্রশাসন তথা সরকারের নজর পড়ুক ৷ মানুষ জানুক, এখানে শিবরামের বাড়ি ছিল ৷ বাংলা সাহিত্যে তাঁর অনেকটাই অবদান রয়েছে ৷ সেই অবদানের জন্য তাঁকে একটু সম্মান জানানো হোক ৷

তিনি আরও বলেন, "আমরা চাইছি, এই বাড়িটিকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করা হোক ৷ তার জন্য আমরা প্রশাসনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানাচ্ছি ৷ তাঁর ঘরে এখনও পুরোনো আসবাবপত্র কিছু রয়েছে ৷ তবে সেসবে ঘুনপোকা ধরে গিয়েছে ৷ কড়ি-বরগার ছাদ কখন ভেঙে পড়বে, ঠিক নেই ৷ বাড়িটার একটু সংস্কার হলে এখানকার ছোট ছোট বাচ্চারাও জানতে পারত, এই বাড়ির লোক বাংলা সাহিত্যে কতটা সাড়া জাগিয়েছিলেন ৷ দেশ-বিদেশে কতটা খ্যাতি পেয়েছিলেন ৷" চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলছেন, "ওখানে শিবরাম চক্রবর্তীর একটি মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে ৷ তার জন্য আমি টাকাও দিয়েছি ৷ কিন্তু শিবরামের বসতবাড়ির ভগ্নদশা নিয়ে তাঁর পরিবারের কেউ আমাকে কিছু জানাননি ৷ তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি নিশ্চয়ই তাঁর বাড়িটি নতুন করে সংস্কার করে দেওয়ার চেষ্টা করব ৷"

জন্মভূমিতেই উপেক্ষিত রসসম্রাট শিবরাম

মালদা, 2 ফেব্রুয়ারি: শুরু হয়েছে কলকাতা বইমেলা (Kolkata Book Fair 2023) ৷ আরও অনেক লেখকের সঙ্গে বইমেলায় এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বাংলা সাহিত্যের রসসাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী (Shibram Chakraborty) ৷ অবশ্য নিজেকে তিনি শিব্রাম চক্কোত্তি লিখতেই বেশি পছন্দ করতেন ৷ সেই শিবরামের জন্ম এবং ছেলেবেলা কেটেছে মালদাতেই ৷ চাঁচলের পাহাড়পুরে ৷ যে শিবরাম কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে বাংলা সাহিত্যে অবাধে পদচারণা করেছেন, তাঁকে কতটা যোগ্য সম্মান দিয়েছে প্রশাসন ? যে বাড়িতে তিনি বসবাস করতেন, সেই বাড়ি এখন ভেঙে পড়ার মুখে ৷ তাঁর নামে চাঁচলে আজ পর্যন্ত কোনও রাস্তার নামকরণও হয়নি ৷ অথচ তাঁর সেই বাড়ি বাংলা সাহিত্যপ্রিয় মানুষের দর্শনীয় জায়গা হয়ে থাকতে পারত ৷ তাঁর সেই বাড়ি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷

1903 সালের 13 ডিসেম্বর চাঁচলের পাহাড়পুরেই জন্ম হয় শিবরামের ৷ সেখানে কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা ৷ তাঁর মাসি সিদ্ধেশ্বরীদেবী ছিলেন চাঁচলরাজ ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরীর স্ত্রী ৷ শিবরামের বাবা শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী থাকতেন মুর্শিদাবাদ জেলার নিমতিতায় ৷ অভাব ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গীর ৷ এদিকে ঈশ্বরচন্দ্র ও সিদ্ধেশ্বরীদেবী ছিলেন নিঃসন্তান ৷ সিদ্ধেশ্বরীদেবী তাঁর বোনপো শিবরামকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন ৷ সেকারণেই শিবরামের মনে এসেছিল, মেসোমশায় উত্তরাধিকারী হিসাবে তাঁকে মনোনীত করবেন ৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি ৷

পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র তাঁদের আত্মীয়, বড়িশার জমিদার পরিবারের সন্তান শরৎচন্দ্রকে দত্তক নেন ৷ স্বপ্নভঙ্গ হয় শিবরামের ৷ মাত্র 16 বছর বয়সে তিনি পাহাড়পুর ছেড়ে চলে যান কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের ভাঙাচোরা ঘরে ৷ সেখান থেকেই লেখেন একের পর এক রসালো উপন্যাস ৷ যেসব বাংলা সাহিত্যে এখনও মণিমানিক্য ৷ বর্তমানে 81 নম্বর জাতীয় সড়কের ধারেই শিবরামের সেই পৈতৃক ভিটে ৷ এখান থেকে কলকাতা চলে যাওয়ার পর আর কখনও চাঁচলে ফিরে আসেননি তিনি ৷ তবে তাঁর লেখায় বারবার উঠে এসেছে চাঁচলের নানা কথা ৷

আরও পড়ুন: দোকানেই সাহিত্যচর্চা, পাগল কটাক্ষেও হার না-মানার নাম বেহালার পিন্টু

তাঁর বংশধররা এখনও সেই ভিটের একাংশেই বসবাস করেন ৷ রসসম্রাটের বাড়িটি এখন ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে ৷ ঝরে পড়ছে পলেস্তারা, বেরিয়ে এসেছে চাঙড় ৷ ঘরের ভিতরে এখনও রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত কিছু আসবাবপত্র ৷ আলমারিতে রয়েছে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বইপত্রও ৷ কিন্তু প্রশাসনিক উদাসীনতায় সেসব কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে ৷ চক্রবর্তী পরিবারের এক সদস্য বিথি চক্রবর্তী বলেন, "শিবরাম চক্রবর্তীর বসতবাড়ি প্রায় ভেঙে পড়েছে ৷ ওই বাড়িতে কেউ থাকতে পারেন না ৷ আমরা চাই, এই বাড়িটির দিকে প্রশাসন তথা সরকারের নজর পড়ুক ৷ মানুষ জানুক, এখানে শিবরামের বাড়ি ছিল ৷ বাংলা সাহিত্যে তাঁর অনেকটাই অবদান রয়েছে ৷ সেই অবদানের জন্য তাঁকে একটু সম্মান জানানো হোক ৷

তিনি আরও বলেন, "আমরা চাইছি, এই বাড়িটিকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করা হোক ৷ তার জন্য আমরা প্রশাসনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানাচ্ছি ৷ তাঁর ঘরে এখনও পুরোনো আসবাবপত্র কিছু রয়েছে ৷ তবে সেসবে ঘুনপোকা ধরে গিয়েছে ৷ কড়ি-বরগার ছাদ কখন ভেঙে পড়বে, ঠিক নেই ৷ বাড়িটার একটু সংস্কার হলে এখানকার ছোট ছোট বাচ্চারাও জানতে পারত, এই বাড়ির লোক বাংলা সাহিত্যে কতটা সাড়া জাগিয়েছিলেন ৷ দেশ-বিদেশে কতটা খ্যাতি পেয়েছিলেন ৷" চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলছেন, "ওখানে শিবরাম চক্রবর্তীর একটি মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে ৷ তার জন্য আমি টাকাও দিয়েছি ৷ কিন্তু শিবরামের বসতবাড়ির ভগ্নদশা নিয়ে তাঁর পরিবারের কেউ আমাকে কিছু জানাননি ৷ তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি নিশ্চয়ই তাঁর বাড়িটি নতুন করে সংস্কার করে দেওয়ার চেষ্টা করব ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.