মালদা, 16 অগাস্ট : প্রতিদিন দু'বেলা পেট ভরে খাবার জোটে না । তাতে কী ! অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যাবসায়ের কাছে হার মেনেছে সব বাধা । প্রাণশক্তিতে ভরপুর সপ্তমী এবার রাজ্য অ্যাথলেটিকস মিটে ছিনিয়ে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক ৷ এবার তার লক্ষ্য রিজিওনাল মিট ৷ সবজি বিক্রেতা বাবার পরিবারে এখন শুধুই আনন্দের বন্যা । তার এই সাফল্য কি কোথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে অসমের হিমা দাসকে !
নাম সপ্তমী মণ্ডল ৷ বাড়ি মালদা শহরের তেলিপুকুরে ৷ এলাকাটি ইংরেজবাজার পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হলেও, এখনও গ্রামের ছাপ সেখানে স্পষ্ট । মাধাইপুর A R হাইস্কুলে ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী সপ্তমী ৷ বাবা অমল মণ্ডল সবজি বিক্রি করে যা আয় করেন তাতে দু'বেলা সবার খাবার জোটে না । এদিকে বাড়িতে রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন মা নন্দরানী মণ্ডল, ভাই সূর্য ও বোন ঝরনা । সূর্য ক্লাস সেভেনের ছাত্র এবং ঝরনা ক্লাস ফাইভের ছাত্রী । বছর ছ'য়েক আগে সরকারি সাহায্যে দুটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল । সংস্কারের অভাবে সেই ঘরের দেওয়ালে ধরেছে নোনা । গজিয়ে উঠেছে আগাছা । কিন্তু সেই ঘর দু'টিই পরিবারের পাঁচজনের মাথা গোঁজার আস্তানা । সেখান থেকেই নিজের লড়াই লড়ছে সপ্তমী ।
পশ্চিমবঙ্গ অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় গত 8 থেকে 11 অগাস্ট কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বসেছিল 69 তম রাজ্য অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের আসর । সেখানে অনূর্ধ্ব কুড়ি বিভাগে 10 হাজার মিটার রেস ওয়াকিং ও 5 হাজার মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল সপ্তমী । দুটি প্রতিযোগিতাতেই প্রথম হয় সে । রেস ওয়াকিং-এ সে সময় নেয় 59 মিনিট 43.9 সেকেন্ড এবং দৌড় প্রতিযোগিতায় 19 মিনিট 36.2 সেকেন্ড ৷
সপ্তমী বলে, "এবার আমার লক্ষ্য পূর্বাঞ্চলীয় মিটে অংশগ্রহণ করা । সম্ভবত পুজোর আগেই সেই মিট অনুষ্ঠিত হবে । 2014 সাল থেকে আমি হাঁটা ও দৌড়ানোর অভ্যাস করছি । এর আগে ন্যাশনাল মিটেও অংশগ্রহণ করেছিলাম । তবে সেখানে নিজের ইভেন্টে অংশ নিতে পারিনি । ক্রস কান্ট্রিতে অংশ নিয়ে 18 তম স্থান পেয়েছিলাম । আমার সব ব্যাপারেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন প্রশিক্ষক মানসকুমার রায়বর্মণ । প্রথম থেকে তিনিই আমাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন । তবে পরিবারের আর্থিক সমস্যায় আমার প্রয়োজন মেটে না । এখানেই যেন কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছি আমি ।"
মানসবাবু বলেন, "আর্থিক সমস্যাই সপ্তমীর এগোনোর পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে । প্র্যাকটিস করার মত কিটও ওর নেই । অন্যদের সাহায্যেই সব চলছে । ওর বাবা একজন সবজি বিক্রেতা । মা প্রায় পাগল । ওর বাবার রোজগারের বেশিরভাগটাই মায়ের চিকিৎসার জন্য চলে যায় । এই অবস্থায় পুষ্টিকর খাবার তো অনেক দূরের কথা, দু'বেলা পেট ভরে খেতেও পায় না । 2014 সাল থেকে আমি ওকে দেখছি । ওর মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে । দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মতোও ক্ষমতা রাখে সপ্তমী । আমাদের সবার আশা ছিল 10 হাজার মিটার রেস ওয়াকিং-এ এবার সপ্তমী মিট রেকর্ড করবে । কিন্তু অল্প সময়ের জন্য সেই রেকর্ড হাতছাড়া হয় । এসব কাটিয়ে উঠতে গেলে সবার আগে ওর পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন । আমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করি । কিন্তু সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে মেয়েটা যদি একটু সাহায্য পায়, তবে আরও অনেক দূর এগোতে পারে । বাংলা থেকেও একটা হিমা দাস মিলতে পারে ।"