মালদা, 4 জুন : চাঁচলের সাহাপাড়ার বাসিন্দা মনি সাহা ও তাঁর স্ত্রী গীতা সাহা। মনিবাবুর বয়স সত্তরের কোঠায়। তাঁর একমাত্র ছেলে সেনাকর্মী। বর্তমানে শিলিগুড়িতে কর্মরত। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে একাই থাকেন তিনি। এই বয়সেও ধান-পাট প্রভৃতি ফসলের ব্যবসা করেন। শুক্রবার রাত দু'টো নাগাদ তাঁদের বাড়িতেই হানা দেয় 6-7 জনের ডাকাতদল। তাদের হাতে ধারাল অস্ত্র-সহ আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল (Robbers attack army home in Chanchal) । মুখে মুখোশ পরা ডাকাতরা বৃদ্ধ দম্পতিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে, মারধর করে ঘণ্টাখানেক ধরে লুটপাট চালায়।
প্রাণের ভয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা চিৎকারও করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ঘর থেকে লক্ষাধিক টাকা, বেশ কিছু সোনার গহনা-সহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীর। এরপরেই চিৎকার শুরু করেন সাহা দম্পতি। ছুটে আসেন পড়শিরা। খবর দেওয়া হয় চাঁচল থানায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন চাঁচল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু মণ্ডল। ছিলেন চাঁচল থানার আইসি সুকুমার ঘোষও। ঘটনার তদন্ত শুরু করেন তাঁরা। নাকাবন্দি করে দেওয়া হয় চাঁচল থেকে বেরোনোর প্রতিটি রাস্তা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ডাকাতদলের কোনও সন্ধান পায়নি পুলিশ।
আরও পড়ুন : ছাড়া পেয়েই ফের পিস্তল হাতে তৃণমূল নেতা, ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার অভিযুক্ত
খবর পেয়ে শনিবার সকালে বাবার বাড়িতে আসেন সাহা দম্পতির বড় মেয়ে দীপু সাহা। তিনি বলেন, "বাড়িতে বাবা-মা একাই থাকেন। ভোর সাড়ে তিনটের সময় পাড়ার লোকজনই ফোন করে আমাদের খবর দেন যে বাবার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। পরে শুনলাম, ডাকাতরা ছাদের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। তারা প্রথমে বাবার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ৷ তারপর হাত-পা বেঁধে চাকু-পিস্তল দেখিয়ে খুন করার হুমকি দেয়। মায়ের গলায় চাকু ঠেকিয়ে রাখে। মুখেও আঘাচ করে। মায়ের শরীরে থাকা গহনা নিয়ে নেয়। এরপর ঘরে ঢুকে আলমারি, শোকেস-সহ সব ভেঙে যাবতীয় দামি জিনিসপত্র নিয়ে যায়। ডাকাতরা দেড় লাখ টাকা আর 10-14 ভরি সোনার গহনা নিয়ে গিয়েছে। কে বা কারা এই কাজ করেছে, আমরা বুঝতে পারছি না। তবে এই ঘটনায় আমরা ভীষণ আতঙ্কিত ৷"
বৃদ্ধা গীতাদেবী বলেন, "ডাকাতরা ছ'জন ছিল। সবার মুখ কাপড়ে ঢাকা ছিল। তাদের হাতে ছিল চাকু-পিস্তল। রাত দুটো নাগাদ দরজা ভাঙার আওয়াজ পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই ওরা আমাকে ধরে ফেলে। খুনের ভয়ও দেখায়। আমার মুখে খুব মারতে শুরু করে। আমি তাদের মারতে বারণ করি। আমাদের একটাই ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বুড়ো-বুড়ি একাই থাকি। ওরা লাখ দেড়েক টাকা আর 10 ভরির বেশি সোনার গহনা নিয়ে গিয়েছে ৷"
আরও পড়ুন : মালদায় আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ-সহ গ্রেফতার 1
এলাকায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। অশোক সাহা নামে মনিবাবুর এক প্রতিবেশী বলেন, "কয়েকদিন আগে মহানন্দপুরে একটা বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এবার মনিকাকুর বাড়িতেও ডাকাতি হল। আমরা দেখছি, পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করলেও পরে তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাতেই এলাকায় ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। আমরা এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি চাই। নইলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। গতকাল ডাকাতদের হামলায় আহত মনিকাকু এখনও চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷" চাঁচল থানার পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনার সঙ্গেও বিহারের দুষ্কৃতীদের যোগ থাকতে পারে।