মালদা, 6 অক্টোবর: দেবীর বিসর্জন (Durga Puja 2022) মিটতেই গঙ্গা ভাঙনে (River Erosion) তলিয়ে গেল মন্দিরের একাংশ ৷ নদীতে তলিয়ে গেল বিএসএফ ক্যাম্পও ৷ বুধ-বৃহস্পতিবারের রাতে (ঘড়ির সময় অনুসারে 6 অক্টোবর, 2022) ঘটনাটি ঘটে মালদার (Malda) কালিয়াচক-3 নম্বর ব্লকের পারলালপুর গ্রামে ৷ ভাঙনের আশংকায় নদীর পাড়ে থাকা বাড়িগুলির বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন ৷ ভাঙন শুরু হয়েছে মানিকচকের গোপালপুরেও ৷ তবে সেখানে শুধুমাত্র কৃষিজমিই নদীতে তলিয়ে গিয়েছে ৷ জেলাশাসক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেচ দফতর প্রস্তুত রয়েছে ৷
কালিয়াচক-3 নম্বর ব্লকের পারদেওনাপুর শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পারলালপুর গ্রাম ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত ৷ এখান থেকেই গঙ্গা আর পদ্মা আলাদা হয়েছে ৷ গ্রামের উলটোদিকে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ৷ দুই জেলার মধ্যে গঙ্গায় ফেরি যোগাযোগ চালু রয়েছে ৷ নদীর পাড়েই রাধাগোবিন্দ মন্দির ৷ সেই মন্দিরে প্রতি বছর দুর্গাপুজো হয় ৷ এবারও হয়েছে ৷ বুধবার রাতেই প্রতিমা গঙ্গায় বিসর্জন দিয়েছেন গ্রামবাসী ৷ কয়েক দিনের পুজোর ঝক্কিতে শরীরে ক্লান্তি ভর করেছিল ৷ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সবাই ৷ ভোররাতে বিএসএফ জওয়ানদের চিৎকারে তড়িঘড়ি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন তাঁরা ৷ দেখেন, গঙ্গার জল ধাক্কা মারছে মন্দিরের গায়ে ! ভেঙে পড়ছে মন্দিরের একাংশ ৷ এমনকী যেখানে দুর্গাপুজো হয়েছিল, সেই মণ্ডপও নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে ! ঘুম মাথায় ওঠে সবার ৷ নদীর ধারে থাকা বাড়িগুলির বাসিন্দারা সময় থাকতে ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ৷
আরও পড়ুন: গত বছরের আতঙ্ক উস্কে ফের শুরু গঙ্গা ভাঙন, সামসেরগঞ্জে তলিয়ে গেল বাড়ি
গ্রামবাসী ইরকুগুল্লা হালদার বলেন, "রাত দুটো থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে ৷ অবশ্য তখনও আমরা সেটা জানতে পারিনি ৷ প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ৷ ভোর চারটে নাগাদ বিএসএফ-এর চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় ৷ ওদের ক্যাম্প গঙ্গার ভাঙনে বসে গিয়েছে ৷ ওদের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, মন্দির নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে ৷ আজ আমাদের বাড়ি, ঘরের ক্ষতি হয়নি ৷ তবে মন্দির নদীতে চলে যাওয়ায় আমরা খুব দুঃখিত ৷ আমাদের ঘরবাড়িও সরানো শুরু হয়েছে ৷"
আর এক গ্রামবাসী বরুণকুমার সরকার জানান, "হঠাৎ করেই রাধাগোবিন্দ মন্দিরের নাটমন্দির, বিএসএফ ক্যাম্প বসে গিয়েছে ৷ এখনও মন্দিরের কিছুটা করে অংশ নদীতে ভেঙে পড়ছে ৷ আমরা মন্দিরের বাকি অংশগুলি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছি ৷"
জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া জানিয়েছেন, "ভোর রাতে পারলালপুরে গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়েছে ৷ প্রকৃতির উপর কারও হাত থাকে না ৷ ভাঙনে ওই গ্রামের রাধাগোবিন্দ মন্দিরের কিছুটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ সেচ দফতর ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে ৷ তবে ভাঙন কতটা আটকাতে পারব, তা জানি না ৷ আমাদের অনুমান, ভাঙন এখন বন্ধ থাকলেও আবার শুরু হবে ৷ ঘটনাস্থলে কালিয়াচক-3 নম্বর ব্লকের বিডিও পৌঁছে গিয়েছেন ৷ দুর্গতদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ নদীর ধারে কয়েকটি ঘর রয়েছে ৷ সেই ঘরগুলি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৷"
ভাঙন শুরু হয়েছে মানিকচক ব্লকের গোপালপুরেও ৷ সেকথা শুনে এলাকায় আসেন সিপিএম-এর জেলা কমিটির সদস্য দেবজ্যোতি সিনহা ৷ তিনি বলেন, "গঙ্গার ভাঙনের সঙ্গে মানিকচকের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে ৷ বিজয়ার দিনও এখানে ভাঙন চলছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ৷ কিন্তু গঙ্গার ভাঙনে বিপর্যস্ত মানুষজনকে পুনর্বাসন কিংবা আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেননি ৷ বৈষ্ণবনগরে (কালিয়াচক-3 ব্লক) গত 3 বছরে প্রায় 1 হাজার বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে ৷ কোশির ভাঙনে কালুটোনটোলা গ্রাম প্রায় সম্পূর্ণ নদীগর্ভে ৷ অথচ কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার গঙ্গার ভাঙন আটকাতে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ৷ শুধুই গঙ্গার আরতি চলছে ৷"