মালদা, 8 অগাস্ট : এ যেন প্রদীপের নিচেই অন্ধকার । 78তম প্রয়াণ দিবসে যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান জানাচ্ছে গোটা বিশ্ব, তখন খোদ সরকারি ভবনেই ব্রাত্য থাকলেন বিশ্বকবি । গলায় মালা তো দূর অস্ত, তাঁর আবক্ষ মূর্তিটি আজ সাফসুতরোও করা হল না । অপরিষ্কার জায়গায় থাকা সেই মূর্তি আজও কাপড় ঢাকাই পড়ে রইল । সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিককে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি । যদিও তিনি নিজেদের গাফিলতি মেনে নিয়েছেন । তবে যাঁর জন্য বাঙালির বুক এখনও গর্বে ফুলে ওঠে, প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি প্রশাসনের এই অবহেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আম বাঙালির মনে ।
মালদা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে রবীন্দ্রভবন । ভবন জুড়ে রবীন্দ্রনাথ । রয়েছে তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তিও । এই ভবনটি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধীনে । দপ্তরের পক্ষ থেকে আজ সন্ধ্যায় ঘটা করে বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস পালন করা হবে জেলা গ্রন্থাগারে । তার জন্য সরকারি আমন্ত্রণপত্রও তৈরি হয়েছে । কিন্তু নিজের নামাঙ্কিত ভবনে আজ ব্রাত্যই থাকলেন বিশ্বকবি । দুপুর পর্যন্ত ভবনের গেটে ঝুলতে দেখা গেছে তালা । ভিতরে রবীন্দ্রমূর্তিটি কাপড় দিয়ে ঢাকা । চারপাশে নোংরা । মূর্তিটি আজও পরিষ্কার করা হয়নি । সেখানে দেখা যায়নি তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের কোনও কর্মীকে ।
সকাল থেকেই বিষয়টি নজরে পড়েছে অনেকেরই । এলাকার বাসিন্দা কার্তিক দাস এনিয়ে প্রশ্ন তোলেন । তিনি বলেন, "এই কাজটা সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঠিক করেনি । আজ অন্তত কবিগুরুর মূর্তিটি পরিষ্কার করে গলায় একটি মালা পরানো উচিত ছিল । কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে কেউ আজ তা করেননি । রবীন্দ্রনাথ বাঙালির গর্ব । আজ তাঁর সঙ্গে সরকারি দপ্তরের পক্ষ থেকে যে আচরণ করা হয়েছে, তা আমি একেবারেই সমর্থন করি না । প্রশাসনের কাছে আমার বার্তা, ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে । তাছাড়া এই রবীন্দ্রভবনও বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে । সেদিকেও প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি ।"
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক শাশ্বতী সাহা এবিষয়ে জানান, আজ বিকেলে জেলা গ্রন্থাগারে তাঁর দপ্তরের উদ্যোগে এবং জেলা গ্রন্থাগার ও শিল্পী সংসদের সহযোগিতায় কবিগুরুকে একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে । সেই অনুষ্ঠানে কবির লেখা গান, আবৃত্তি, প্রবন্ধের মাধ্যমে তাঁকে নৈবেদ্য প্রদান করা হবে । কিন্তু কেন নিজের প্রয়াণ দিবসে সরকারি স্তরে ব্রাত্য হয়ে রইলেন রবীন্দ্রনাথ? কেন রবীন্দ্রভবনে তাঁর মূর্তিতে একটি মালাও পড়ল না? কেন বিশ্বকবির মূর্তি আজকের মতো দিনেও পরিষ্কার করা হল না? এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে শাশ্বতীদেবী প্রথমেই বলেন, "এনিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না ।" পরে তিনি অবশ্য বলেন, "রবীন্দ্রভবনে এখন সংস্কারের কাজ চলছে । ওই ভবনটি ঢেলে সাজানো হচ্ছে । তাই হয়ত সেখানে কোনও অসুবিধে ছিল । 25 বৈশাখ সেখানে রবীন্দ্রমূর্তিতে মালা দেওয়া হয়েছিল । আজ অবশ্য এখনও পর্যন্ত মূর্তিতে মালা দেওয়া হয়নি ।"
বাঙালি হয়ে আজকের দিনে একটা সরকারি দপ্তর যেভাবে রবীন্দ্রনাথকে অবহেলা করল, তা মেনে নিতে পারছে না মালদা শহর ।