মালদা, 18 মে : দু’জনের আদায় কাঁচকলায় সম্পর্কের বিষয়টি জানা ছিল সবারই ৷ পারতপক্ষে দু’জন একে অন্যের ধারে কাছে ঘেষতেন না ৷ তেমন কথাবার্তাও ছিল না ৷ সম্পর্ক যা ছিল, সবই কাগজে কলমে ৷ তাঁদের একজন পুরাতন মালদার বিডিও ইরফান হাবিব, আরেকজন পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী মৃণালিনী মণ্ডল মাইতি ৷ গতকাল সন্ধেয় এই দু’জনকে প্রকাশ্যেই বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখলেন কয়েকশো মানুষ ৷ তাও আবার শূকর পালন নিয়ে (Quarrel Between BDO and Panchayet Samiti Leader Over Pig Rearing Project in Old Malda) ৷ সেই দৃশ্য দেখে আড়ালে মুচকি হেসেছেন অনেকেই ৷ আবার সভ্যমহলে দুই পদাধিকারীর এমন আচরণের সমালোচনাও শুরু হয়েছে ৷
শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনার সূত্রপাত শূকর নিয়ে ৷ তফসিলি উপজাতিভুক্ত মহিলাদের শূকর পালনের জন্য একটি প্রকল্প রয়েছে রাজ্য সরকারের ৷ সেই প্রকল্পে আদিবাসী মহিলাদের শূকরছানা বিলি করার কথা ৷ পুরাতন মালদা ব্লকেও এমন অনেক আদিবাসী মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধে পেতে ব্লক অফিসে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ৷ তবে শূকরছানা নয়, তার পরিবর্তে টাকা দাবি করেন তাঁরা ৷ তাঁদের বক্তব্য, এই প্রকল্পে ব্লক অফিস থেকে প্রথম পর্যায়ে বেশ কিছু মহিলাকে টাকা দেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু, তার পর থেকে টাকার বদলে অত্যন্ত নিম্নমানের শূকর দেওয়া হচ্ছে ৷ কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই শূকর মারা যাচ্ছে। অথচ সরকারি প্রকল্প অনুযায়ী প্রত্যেক মহিলাকে সাড়ে 12 হাজার টাকা দেওয়া হলে, তাঁরা সেই টাকায় গোরু-ছাগলও প্রতিপালন করতে পারেন ৷
এই দাবি নিয়েই গত দু’বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পুরাতন মালদার আদিবাসী মহিলারা ৷ নিজেদের দাবিতে এর আগে তাঁরা পাঁচবার বিডিও অফিসে এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ৷ অফিসের ভিতর শূকর ছেড়ে দিয়েছেন ৷ কিন্তু, বিডিও কোনওবারই তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি বলে অভিযোগ ৷ একই দাবিতে গতকাল বিকেলে আবারও পাঁচশোরও বেশি আদিবাসী মহিলা বিডিও অফিসে যান ৷ সেই খবর আগাম বিডিও-র কানে পৌঁছে যায় ৷ তার জেরে গতকাল সকাল থেকে অফিসের গেট বন্ধ রাখা হয় ৷ নির্দিষ্ট প্রমাণপত্র ছাড়া কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ৷ ফলে বিক্ষোভকারীরা অফিসের ভিতরে যেতে পারেননি ৷
বিডিও তাঁর প্রতিনিধি মারফৎ আদিবাসী মহিলাদের জানান, তিনি পাঁচজনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন ৷ কিন্তু, তাতে রাজি হননি মহিলারা ৷ তাঁরা দাবি করেন, বিডিওকে বাইরে বেরিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে ৷ কিন্তু, দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও বিডিও বাইরে না আসায় মহিলারা অফিসের সামনে 12 নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ শুরু করেন ৷
জাতীয় সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মালদা থানার পুলিশ ৷ বিক্ষোভকারীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য আর্জি জানান পুলিশ আধিকারিকরা ৷ কিন্তু, আদিবাসী মহিলাদের সাফ কথা, আসতে হবে বিডিওকে ৷ এভাবেই প্রায় ঘণ্টা দুয়েক কেটে যায় ৷ জাতীয় সড়কে তখন প্রবল যানজট ৷ শেষ পর্যন্ত বিডিও দফতরে যান মহকুমাশাসক সুরেশ রানো ৷ তাঁর সঙ্গেই অবরোধস্থলে যান বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী ৷
আরও পড়ুন : Sand Theft from Phulhar River : ফুলহরের বালি চুরি রুখতে বসল সিসি ক্যামেরা, ড্রোনে নজরদারি
এর পর তাঁদের জাতীয় সড়ক থেকে সরিয়ে এনে বিডিও দফতরের সামনে কথা বলতে শুরু করেন প্রশাসনিক কর্তারা ৷ এই সময়ই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী ৷ প্রকাশ্যে দু’জনের বিতণ্ডায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে যান মহকুমাশাসক ৷ শেষ পর্যন্ত তিনিই মহিলাদের জানান, তাঁদের দাবির বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন ৷ সাতদিনের মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন ৷ তাঁর আশ্বাস পেয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরে যান আদিবাসী মহিলারা ৷