মালদা, 9 এপ্রিল : এ’যেন উলটপুরাণ ৷ কোরোনার জেরে লকডাউনের মধ্যে ভিনরাজ্য থেকে শ্রমিকরা লুকিয়ে ঘরে ফেরার চেষ্টা করছে ৷ যারা বাড়ি ফিরতে পারছে তারা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছে ৷ এমন অবস্থায় ঠিক উলট ছবি দেখা গেল রতুয়ার বাহারালে ৷ ইন্সটিটিউশনাল কোয়ারান্টাইনে থাকা 21 শ্রমিক নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও থেকে যেতে চায় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ৷ ফিরতে চায় না বাড়িতে ৷ কারণ আধপেটা খেয়ে থাকা শ্রমিকদের খাওয়া মিলছে পেটপুরে ৷ বাড়ি ফিরলে সেসব তো আর পাওয়া যাবে না ৷ আজ দুপুরে মটন বিরিয়ানি খাওয়ার পর অনেক শ্রমিকই জানিয়েছে, এখনই তারা ঘরে ফিরতেই চায় না আর ৷ 14 দিনের নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তারা এখানেই থেকে যেতে চায় আরও কিছুদিন ৷
কোরোনা মোকাবিলায় রতুয়া 1 ব্লকের বাহারাল PLS হাইস্কুলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ইন্সটিটিউশনাল কোয়ারান্টাইন সেন্টার ৷ এই এলাকার প্রচুর মানুষ ভিনরাজ্যে কাজ করতে যায় ৷ কোরোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই তারা ঘরে ফিরতে শুরু করেছে ৷ তাই তাদের থাকতে হচ্ছে কোয়ারান্টাইনে ৷ তবে লকডাউনের জেরে এখনও ভিনরাজ্যে আটকে রয়েছে বহু শ্রমিক ৷ এই মুহূর্তে এই সেন্টারে কোয়ারান্টাইনে রয়েছে 21 জন শ্রমিক ৷ তাদের অনেকের এখানে থাকা প্রায় 12 দিন হয়ে গেছে ৷ এই শ্রমিকদের জন্য এখানে নিয়মিত তিনবেলা স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ আর রয়েছে চারবেলা সুখাদ্যের আয়োজন ৷ প্রতিদিনই দুপুরে মাছ, মাংস কিংবা ডিম দেওয়া হয় ৷ রাতেও জোটে আমিষের নানা পদ ৷ সঙ্গে রয়েছে সকাল-বিকেলের টিফিন ৷ আজ দুপুরে এই শ্রমিকদের মটন বিরিয়ানি খাওয়ান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষা পায়েল খাতুন ৷
কোয়ারান্টাইনে থাকা এক শ্রমিক জিয়াউল শেখ ৷ তিনি বলেন, " 12 দিন ধরে এখানে আছি ৷ দারুণ ব্যবস্থা ৷ প্রতিদিন মাছ, মাংস কিংবা ডিম দেওয়া হয় ৷ আজ সুস্বাদু মটন বিরিয়ানি খেয়েছি ৷ মহানন্দে রয়েছি ৷ এখানে তিনবেলা স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে ৷ কারোর শরীরে কোরোনার উপসর্গ পাওয়া যায়নি ৷ হিসাব অনুযায়ী আর মাত্র দু’দিন এখানে আমাদের থাকার কথা ৷ কিন্তু আর ক’দিন বেশি থাকতে পারলে ভালো হয় ৷ " একই বক্তব্য আর এক শ্রমিক বেলাল হোসেনের ৷ তিনিও আরও কয়েকদিন এখানেই থেকে যেতে চান ৷ তিনি বলেন, " বাড়ি গেলে তো একজনের পেট বাড়বে ৷ এখন রোজগার বন্ধ ৷ এখানে ভালোমন্দ খাবার পাচ্ছি ৷ তাই আরও কয়েকদিন এখানে থাকতে পারলে ভালোই হয় ৷ "
এ বিষয়ে পায়েল খাতুন বলেন, " এখানে 21 জন শ্রমিককে ইন্সটিটিউশনাল কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে ৷ তারা সবাই সুস্থ রয়েছে ৷ কারওর শরীরে কোরোনার উপসর্গ দেখা দেয়নি ৷ এদের খুব যত্নে রাখা হয়েছে ৷ প্রতিদিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে ৷ পুষ্টিকর খাবারও দেওয়া হচ্ছে ৷ আজ আমি এদের মটন বিরিয়ানি খাইয়েছি ৷ শ্রমিকরা যাতে কেউ অবসাদে না ভোগে তার সব চেষ্টা চালানো হচ্ছে ৷ "