ETV Bharat / state

শোকস্তব্ধ প্রসেনজিতের পরিবার, আশঙ্কায় অভিযুক্তের পরিজনরা - prasenjit's family is bereaved

মাত্র 3 কিলোমিটার দূরে একই থানার দুই গ্রাম । দুই গ্রামে এখন দুই ছবি । এক গ্রামে যখন ছেলে হারানোর যন্ত্রণা, অন্য গ্রামে তখন আশঙ্কার আবহ ।

অভিযুক্তর মা ও মৃতের পরিবার
author img

By

Published : Aug 20, 2019, 7:11 AM IST

মালদা, 20 অগাস্ট : মাত্র 3 কিলোমিটার দূরে একই থানার দুই গ্রাম । দুই গ্রামে এখন দুই ছবি । এক গ্রামে যখন ছেলে হারানোর যন্ত্রণা, অন্য গ্রামে তখন আশঙ্কার আবহ । শনিবার কলকাতার আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরে এক জলাশয়ে ভেসে উঠেছিল রতুয়া 2 ব্লকের পুখুরিয়া থানার মুরচা গ্রামের যুবক প্রসেনজিৎ সিংহের (28) দেহ । পুলিশের বেষ্টনীতে থাকা জলাশয় থেকে তাঁর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় পুলিশ মহলে । সেই ঘটনায় রবিবার কলকাতার ওয়াটগঞ্জ থানায়, পুখুরিয়া থানারই হরিপুর গ্রামের দুই ভাই বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রসেনজিতের বাবা উত্তমকুমার সিংহ । তিনিও রাজ্য পুলিশের একজন কর্মী । বর্তমানে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার থানায় কর্মরত । কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত তদন্তের স্বার্থে মালদা জেলা পুলিশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি । আটক করা হয়েছে বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিৎ মণ্ডলকে ৷

মুরচা গ্রামের সিংহ পরিবার পুলিশ পরিবার হিসাবে পরিচিত এলাকায় । উত্তমবাবুরা 6 ভাই । সবাই পুলিশে কর্মরত । ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সুভাষচন্দ্র সিংহ কলকাতা পুলিশে 42 বছর কাজ করার পর গতবছর অবসর নিয়েছেন । বাকি ভাইরা রয়েছেন রাজ্য পুলিশে । প্রসেনজিতের ঠাকুরদাও ছিলেন পুলিশকর্মী । এমন এক পরিবারের ছেলে কী ভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হল, সেটাই ভাবাচ্ছে গ্রামবাসীদের । তবে কি টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার চক্রের শিকার হলেন প্রসেনজিৎ?

কলকাতায় ময়নাতদন্তের পর গতকাল ভোর চারটেয় মৃতদেহ ঘরে ফিরে এসেছিল প্রসেনজিতের । ভোরেই দেহ সৎকারে নিয়ে যাওয়া হয় । দুপুরে শ্মশান থেকে ফিরে আসার পর কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না উত্তমবাবু । আর মাত্র 8 মাস চাকরি রয়েছে তাঁর । ছেলের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন প্রসেনজিতের মা'ও । তাঁদের এক নিকটাত্মীয় উত্তম সিংহ বলেন, "টাকা দেওয়ার ঘটনাটি 2017 সালের । কলকাতা পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করে দেবে বলে প্রসেনজিতের কাছে 6 লাখ টাকা দাবি করে ইন্দ্রজিৎ ও তার দাদা বিশ্বজিৎ । তারা স্থানীয় হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা । তিন দফায় প্রসেনজিৎ তাদের তিন লাখ টাকা দেয় । টাকা দেওয়ার কথা সে প্রথমে বাড়ির কাউকে বলেনি । ইন্দ্রজিৎ নিজেও কলকাতা পুলিশে চাকরি করে । কলকাতাতেই কর্মরত । তার দাদা সেখানে একটি পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার । পরে উত্তমবাবুরা জানতে পারেন, ছেলে চাকরির জন্য তিন লাখ টাকা দিয়েছে । কিন্তু টাকা দিলেও প্রসেনজিতের চাকরি হচ্ছিল না । তাই তিন লাখ টাকা ফেরত চায় সে । আজ দেব, কাল দেব বলে তাকে ঘোরাচ্ছিল ইন্দ্রজিৎরা । শেষ পর্যন্ত প্রসেনজিৎ তাদের বলে, টাকা ফেরত না দিলে তারা মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা ঘটনা জানাবে । এরপরই ইন্দ্রজিৎ টাকা ফেরত দিতে রাজি হয় । 20 দিন আগে তারা প্রসেনজিতকে কলকাতায় ডাকে । শেষ পর্যন্ত 9 আগস্ট তারা শেষবার প্রসেনজিতকে কলকাতায় যেতে বলে । সেই মতো সে নির্দিষ্ট দিনে কলকাতা পৌঁছে যায় । 16 অগাস্ট রাত পৌনে একটা নাগাদ প্রসেনজিৎ তার বাবাকে ফোন করে জানায়, পরদিন সে বাড়ি ফিরে আসবে । এরপরই তার ফোন সুইচ অফ হয়ে যায় । শনিবার সকালে তার দেহ আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরে একটি জলাশয় ভাসতে দেখা যায় । সম্ভবত ইন্দ্রজিতই প্রসেনজিৎকে বডিগার্ড লাইন্সে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল । এই ঘটনায় আমরা যথাযথ পুলিশি তদন্ত দাবি করছি ।"

এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের জলাশয়ে ডুবে মৃত্যু প্রসেনজিতের ! আটক 2

এদিকে হরিপুর গ্রামে বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিতের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে ভুট্টা ছড়াচ্ছেন তাঁদের মা চঞ্চলাদেবী ও ছোটো ভাই সত্যজিৎ । 11 মাসের ছেলে অংশুজিৎকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ইন্দ্রজিতের স্ত্রী অর্পিতা । মাত্র দু'বছর আগে বিয়ে হয়েছে তাঁর । তিনি এই ঘটনায় ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে অস্বীকার করেন । তবে দুই ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশে খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ার কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন চঞ্চলাদেবী । কেঁদে ফেলে সত্যজিৎও । সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সবে কলেজে ভরতি হয়েছে । চঞ্চলাদেবী কোনওরকমে বলেন, "আমার ছেলেরা কোনওদিন এমন কাজ করতে পারে না । গ্রামের কেউ আমাদের বিষয়ে কোনও অভিযোগ করতে পারবে না ।" সত্যজিৎ বলে, "গত সপ্তাহে বাবা কাঞ্চন মণ্ডল ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন । শুক্রবার সকালে তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে । আমার দুই দাদা তাঁকে দেখাশোনা করছে । আমার মেজো দাদা (ইন্দ্রজিৎ) থাকে পাতিপুকুরে । বড় দাদা (বিশ্বজিৎ) থাকে শ্যামবাজারে । আমার দাদারা কখনও কাউকে খুন করতে পারে না । টাকার জন্য আমরা বাবার চিকিৎসা ঠিকমতো করাতে পারছি না । বাড়িঘর ঠিক করতে পারছি না । আর আমার দাদারা অন্যের কাছ থেকে টাকা নেবে ৷ এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে । প্রসেনজিৎ কিংবা তার বাবাকে আমরা চিনি না । আমাদের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগও নেই । কেন আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে জানি না ।"

তবে রতুয়া 2 এলাকায় টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার একটি চক্র সক্রিয় থাকার অভিযোগ করছেন মুরচা গ্রামের লোকজন । গ্রামবাসীদের তরফে ধনঞ্জয় সিংহ বলেন, "প্রসেনজিৎ খুব ভালো ছেলে ছিল । সৎ হিসাবে এলাকায় তার পরিচিত ছিল । অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়াত । কোনও নেশাও ছিল না তার । চাকরি পেতে সে কী লেনদেন করেছে তা জানি না । শুনেছি, সে 9 তারিখ কলকাতা গেছিল । শনিবার শুনতে পাই, সে মারা গেছে । এই গ্রামের ছেলেরা চাকরির জন্য অনেককে টাকা দিয়েছে । কিন্তু কারও চাকরি হয়নি । কেউ পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেনি । আসলে প্রথমে আমরা এসব বিষয়ে জানতেই পারছি না । পরে জানতে পারছি । তাই আমরাও পুলিশ কিছু জানাতে পারছি না । প্রসেনজিতের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ।" গ্রামের আরেক বাসিন্দা জনার্দন সিংহ বলেন, "এখানে এই চক্র রমরমিয়ে কাজ করছে । এবার প্রথম এনিয়ে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হল । আইনের মাধ্যমেই এই চক্রের ব্যবসা বন্ধ করা যাবে । এই চক্রের দালালদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত ।"

পুখুরিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় শনিবার কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা তাঁর পরিবারকে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছিল । তারপর কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে আর কোনও যোগাযোগ করা হয়নি । কলকাতা পুলিশকে সবরকম সহযোগিতা করার জন্য থানা তৈরি রয়েছে ।

মালদা, 20 অগাস্ট : মাত্র 3 কিলোমিটার দূরে একই থানার দুই গ্রাম । দুই গ্রামে এখন দুই ছবি । এক গ্রামে যখন ছেলে হারানোর যন্ত্রণা, অন্য গ্রামে তখন আশঙ্কার আবহ । শনিবার কলকাতার আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরে এক জলাশয়ে ভেসে উঠেছিল রতুয়া 2 ব্লকের পুখুরিয়া থানার মুরচা গ্রামের যুবক প্রসেনজিৎ সিংহের (28) দেহ । পুলিশের বেষ্টনীতে থাকা জলাশয় থেকে তাঁর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় পুলিশ মহলে । সেই ঘটনায় রবিবার কলকাতার ওয়াটগঞ্জ থানায়, পুখুরিয়া থানারই হরিপুর গ্রামের দুই ভাই বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রসেনজিতের বাবা উত্তমকুমার সিংহ । তিনিও রাজ্য পুলিশের একজন কর্মী । বর্তমানে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার থানায় কর্মরত । কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত তদন্তের স্বার্থে মালদা জেলা পুলিশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি । আটক করা হয়েছে বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিৎ মণ্ডলকে ৷

মুরচা গ্রামের সিংহ পরিবার পুলিশ পরিবার হিসাবে পরিচিত এলাকায় । উত্তমবাবুরা 6 ভাই । সবাই পুলিশে কর্মরত । ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সুভাষচন্দ্র সিংহ কলকাতা পুলিশে 42 বছর কাজ করার পর গতবছর অবসর নিয়েছেন । বাকি ভাইরা রয়েছেন রাজ্য পুলিশে । প্রসেনজিতের ঠাকুরদাও ছিলেন পুলিশকর্মী । এমন এক পরিবারের ছেলে কী ভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হল, সেটাই ভাবাচ্ছে গ্রামবাসীদের । তবে কি টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার চক্রের শিকার হলেন প্রসেনজিৎ?

কলকাতায় ময়নাতদন্তের পর গতকাল ভোর চারটেয় মৃতদেহ ঘরে ফিরে এসেছিল প্রসেনজিতের । ভোরেই দেহ সৎকারে নিয়ে যাওয়া হয় । দুপুরে শ্মশান থেকে ফিরে আসার পর কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না উত্তমবাবু । আর মাত্র 8 মাস চাকরি রয়েছে তাঁর । ছেলের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন প্রসেনজিতের মা'ও । তাঁদের এক নিকটাত্মীয় উত্তম সিংহ বলেন, "টাকা দেওয়ার ঘটনাটি 2017 সালের । কলকাতা পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করে দেবে বলে প্রসেনজিতের কাছে 6 লাখ টাকা দাবি করে ইন্দ্রজিৎ ও তার দাদা বিশ্বজিৎ । তারা স্থানীয় হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা । তিন দফায় প্রসেনজিৎ তাদের তিন লাখ টাকা দেয় । টাকা দেওয়ার কথা সে প্রথমে বাড়ির কাউকে বলেনি । ইন্দ্রজিৎ নিজেও কলকাতা পুলিশে চাকরি করে । কলকাতাতেই কর্মরত । তার দাদা সেখানে একটি পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার । পরে উত্তমবাবুরা জানতে পারেন, ছেলে চাকরির জন্য তিন লাখ টাকা দিয়েছে । কিন্তু টাকা দিলেও প্রসেনজিতের চাকরি হচ্ছিল না । তাই তিন লাখ টাকা ফেরত চায় সে । আজ দেব, কাল দেব বলে তাকে ঘোরাচ্ছিল ইন্দ্রজিৎরা । শেষ পর্যন্ত প্রসেনজিৎ তাদের বলে, টাকা ফেরত না দিলে তারা মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা ঘটনা জানাবে । এরপরই ইন্দ্রজিৎ টাকা ফেরত দিতে রাজি হয় । 20 দিন আগে তারা প্রসেনজিতকে কলকাতায় ডাকে । শেষ পর্যন্ত 9 আগস্ট তারা শেষবার প্রসেনজিতকে কলকাতায় যেতে বলে । সেই মতো সে নির্দিষ্ট দিনে কলকাতা পৌঁছে যায় । 16 অগাস্ট রাত পৌনে একটা নাগাদ প্রসেনজিৎ তার বাবাকে ফোন করে জানায়, পরদিন সে বাড়ি ফিরে আসবে । এরপরই তার ফোন সুইচ অফ হয়ে যায় । শনিবার সকালে তার দেহ আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরে একটি জলাশয় ভাসতে দেখা যায় । সম্ভবত ইন্দ্রজিতই প্রসেনজিৎকে বডিগার্ড লাইন্সে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল । এই ঘটনায় আমরা যথাযথ পুলিশি তদন্ত দাবি করছি ।"

এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের জলাশয়ে ডুবে মৃত্যু প্রসেনজিতের ! আটক 2

এদিকে হরিপুর গ্রামে বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিতের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে ভুট্টা ছড়াচ্ছেন তাঁদের মা চঞ্চলাদেবী ও ছোটো ভাই সত্যজিৎ । 11 মাসের ছেলে অংশুজিৎকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ইন্দ্রজিতের স্ত্রী অর্পিতা । মাত্র দু'বছর আগে বিয়ে হয়েছে তাঁর । তিনি এই ঘটনায় ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে অস্বীকার করেন । তবে দুই ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশে খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ার কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন চঞ্চলাদেবী । কেঁদে ফেলে সত্যজিৎও । সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সবে কলেজে ভরতি হয়েছে । চঞ্চলাদেবী কোনওরকমে বলেন, "আমার ছেলেরা কোনওদিন এমন কাজ করতে পারে না । গ্রামের কেউ আমাদের বিষয়ে কোনও অভিযোগ করতে পারবে না ।" সত্যজিৎ বলে, "গত সপ্তাহে বাবা কাঞ্চন মণ্ডল ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন । শুক্রবার সকালে তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে । আমার দুই দাদা তাঁকে দেখাশোনা করছে । আমার মেজো দাদা (ইন্দ্রজিৎ) থাকে পাতিপুকুরে । বড় দাদা (বিশ্বজিৎ) থাকে শ্যামবাজারে । আমার দাদারা কখনও কাউকে খুন করতে পারে না । টাকার জন্য আমরা বাবার চিকিৎসা ঠিকমতো করাতে পারছি না । বাড়িঘর ঠিক করতে পারছি না । আর আমার দাদারা অন্যের কাছ থেকে টাকা নেবে ৷ এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে । প্রসেনজিৎ কিংবা তার বাবাকে আমরা চিনি না । আমাদের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগও নেই । কেন আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে জানি না ।"

তবে রতুয়া 2 এলাকায় টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার একটি চক্র সক্রিয় থাকার অভিযোগ করছেন মুরচা গ্রামের লোকজন । গ্রামবাসীদের তরফে ধনঞ্জয় সিংহ বলেন, "প্রসেনজিৎ খুব ভালো ছেলে ছিল । সৎ হিসাবে এলাকায় তার পরিচিত ছিল । অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়াত । কোনও নেশাও ছিল না তার । চাকরি পেতে সে কী লেনদেন করেছে তা জানি না । শুনেছি, সে 9 তারিখ কলকাতা গেছিল । শনিবার শুনতে পাই, সে মারা গেছে । এই গ্রামের ছেলেরা চাকরির জন্য অনেককে টাকা দিয়েছে । কিন্তু কারও চাকরি হয়নি । কেউ পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেনি । আসলে প্রথমে আমরা এসব বিষয়ে জানতেই পারছি না । পরে জানতে পারছি । তাই আমরাও পুলিশ কিছু জানাতে পারছি না । প্রসেনজিতের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ।" গ্রামের আরেক বাসিন্দা জনার্দন সিংহ বলেন, "এখানে এই চক্র রমরমিয়ে কাজ করছে । এবার প্রথম এনিয়ে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হল । আইনের মাধ্যমেই এই চক্রের ব্যবসা বন্ধ করা যাবে । এই চক্রের দালালদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত ।"

পুখুরিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় শনিবার কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা তাঁর পরিবারকে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছিল । তারপর কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে আর কোনও যোগাযোগ করা হয়নি । কলকাতা পুলিশকে সবরকম সহযোগিতা করার জন্য থানা তৈরি রয়েছে ।

Intro:assigned copy
মালদা, 19 অগাস্ট : মাত্র 3 কিলোমিটার দূরে একই থানার দুই গ্রাম। দুই গ্রামে এখন দুই ছবি। এক গ্রামে যখন ছেলে হারানোর যন্ত্রণা, অন্য গ্রামে তখন আশঙ্কার আবহ। গত শনিবার কলকাতার আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের এক জলাশয়ে ভেসে উঠেছিল রতুয়া 2 ব্লকের পুখুরিয়া থানার মুরচা গ্রামের যুবক, 28 বছরের প্রসেনজিৎ সিংহের দেহ। পুলিশের বেষ্টনীতে থাকা জলাশয় থেকে তাঁর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে ছিল পুলিশ মহলে। সেই ঘটনায় গতকাল কলকাতার ওয়াটগঞ্জ থানায়, পুখুরিয়া থানারই হরিপুর গ্রামের দুই ভাই, বিশ্বজিৎ মন্ডল, ইন্দ্রজিৎ মন্ডল সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রসেনজিতের বাবা উত্তমকুমার সিংহ। তিনিও রাজ্য পুলিশের একজন কর্মী। বর্তমানে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার থানায় কর্মরত। এই ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গেছে মুরচা ও হরিপুর, দুই গ্রামেই। এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত তদন্তের স্বার্থে মালদা জেলা পুলিশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। জানা গেছে, অভিযুক্তরা এখনো অধরা।


Body:মুরচা গ্রামের সিংহ পরিবার পুলিশ পরিবার হিসাবেই চিহ্নিত এলাকায়। উত্তমবাবুরা 6 ভাই। সবাই পুলিশে কর্মরত। ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো সুভাষচন্দ্র সিংহ কলকাতা পুলিশে 42 বছর কাজ করার পর গত বছর অবসর নিয়েছেন। বাকি ভাইরা রয়েছেন রাজ্য পুলিশে। প্রসেনজিতের ঠাকুরদাও ছিলেন পুলিশকর্মী। এমন এক পরিবারের ছেলে কীভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হল, সেটাই ভাবাচ্ছে গ্রামবাসীদের। তবে কি টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার চক্রের শিকার হল তরতাজা প্রসেনজিৎ?
কলকাতায় ময়নাতদন্তের পর আজ ভোর চারটেয় মৃতদেহ ঘরে ফিরে এসেছিল প্রসেনজিতের। ভোরেই দেহ সৎকারে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুরে শ্মশান থেকে ফিরে আসার পর কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না উত্তমবাবু। আর মাত্র 8 মাস চাকরি রয়েছে তাঁর। ছেলের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন প্রসেনজিতের মা'ও। তাঁদের এক নিকটাত্মীয় উত্তম সিংহ বলেন, "ঘটনাটি 2017 সালের। কলকাতা পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করে দেবে বলে প্রসেনজিতের কাছে 6 লক্ষ টাকা দাবি করে ইন্দ্রজিৎ ও তার দাদা বিশ্বজিৎ। তারা স্থানীয় হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিন দফায় প্রসেনজিৎ তাদের তিন লক্ষ টাকা দেয়। টাকা দেওয়ার কথা সে প্রথমে বাড়ির কাউকে বলেনি। ইন্দ্রজিৎ নিজেও কলকাতা পুলিশে চাকরি করে। কলকাতাতেই কর্মরত। তার দাদা সেখানে একটি পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার। পরে উত্তমবাবুরা জানতে পারেন, ছেলে চাকরির জন্য তিন লক্ষ টাকা দিয়েছে। কিন্তু টাকা দিলেও প্রসেনজিতের চাকরি হচ্ছিল না। তাই তিন লক্ষ টাকা ফেরত চায় সে। আজ দেব, কাল দেব বলে তাকে ঘোরাচ্ছিল ইন্দ্রজিতরা। শেষ পর্যন্ত প্রসেনজিৎ তাদের বলে, টাকা ফেরত না দিলে তারা মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা ঘটনা জানাবে। এরপরেই ইন্দ্রজিৎ টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়। 20 দিন আগে তারা প্রসেনজিতকে কলকাতায় ডাকে। শেষ পর্যন্ত গত 9 আগস্ট তারা শেষবার প্রসেনজিতকে কলকাতায় যেতে বলে। সেই মতো সে নির্দিষ্ট দিনে কলকাতা পৌঁছে যায়। 16 অগাস্ট রাত পৌনে একটা নাগাদ প্রসেনজিৎ তার বাবাকে ফোন করে জানায়, পরদিন সে বাড়ি ফিরে আসবে। এরপরেই তার ফোন সুইচ অফ হয়ে যায়। গত শনিবার সকালে তার দেহ আলিপুর বডিগার্ড লাইন্স-এর ভিতরে একটি জলাশয় ভাসতে দেখা যায়। সম্ভবত ইন্দ্রজিতই প্রসেনজিৎকে বডি গার্ড লাইনসে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এই ঘটনায় আমরা যথাযথ পুলিশি তদন্ত দাবি করছি।"
এদিকে হরিপুর গ্রামে বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিতের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে ভুট্টা ছড়াচ্ছেন তাদের মা চঞ্চলাদেবী ও ছোটো ভাই সত্যজিৎ। 11 মাসের ছেলে অংশুজিতকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ইন্দ্রজিতের স্ত্রী অর্পিতাদেবী। মাত্র দু'বছর আগে বিয়ে হয়েছে তাঁর। তিনি এই ঘটনায় ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তবে দুই ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশে খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ার কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন চঞ্চলাদেবী। কেঁদে ফেলে সত্যজিতও। সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সবে কলেজে ভরতি হয়েছে। চঞ্চলাদেবী কোনোরকমে বলেন, "আমার ছেলেরা কোনোদিন এমন কাজ করতে পারে না। গ্রামের কেউ আমাদের বিষয়ে কোনও অভিযোগ করতে পারবে না।" সত্যজিৎ জানায়, "গত সপ্তাহে বাবা কাঞ্চন মন্ডল ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত শুক্রবার সকালে তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। আমার দুই দাদা তাঁকে দেখাশোনা করছে। আমার মেজো দাদা (ইন্দ্রজিৎ) থাকে পাতিপুকুরে। বড়ো দাদা (বিশ্বজিৎ) থাকে শ্যামবাজারে। আমার দাদারা কখনও কাউকে খুন করতে পারে না। টাকার জন্য আমরা বাবার চিকিৎসা ঠিকমতো করাতে পারছি না। বাড়ি ঘর ঠিক করতে পারছি না। আর আমার দাদারা অন্যের কাছ থেকে টাকা নেবে! এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে। প্রসেনজিৎ কিংবা তার বাবাকে আমরা চিনি না। আমাদের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগও নেই। কেন আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে জানি না।"
তবে রতুয়া 2 এলাকায় টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার একটি চক্র সক্রিয় থাকার অভিযোগ করছেন মুরচা গ্রামের লোকজন। গ্রামবাসীদের তরফে ধনঞ্জয় সিংহ বলেন, "প্রসেনজিৎ খুব ভালো ছেলে ছিল। সৎ হিসাবে এলাকায় তার পরিচিত ছিল। অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়াত। কোনও নেশাও ছিল না তার। চাকরি পেতে সে কী লেনদেন করেছে তা জানি না। শুনেছি, সে 9 তারিখ কলকাতা গিয়েছিল। শনিবার শুনতে পাই, সে মারা গেছে। এই গ্রামের ছেলেরা চাকরির জন্য অনেককে টাকা দিয়েছে। কিন্তু কারোর চাকরি হয়নি। কেউ পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেনি। আসলে প্রথমে আমরা এসব বিষয়ে জানতেই পারছি না। পরে জানতে পারছি। তাই আমরাও পুলিশ কিছু জানাতে পারছি না। প্রসেনজিতের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা।" গ্রামের আরেক বাসিন্দা জনার্দন সিংহ বলেন, "এখানে এই চক্র রমরমিয়ে কাজ করছে। এবার প্রথম এনিয়ে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হল। আইনের মাধ্যমেই এই চক্রের ব্যবসা বন্ধ করা যাবে। এই চক্রের দালালদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত।"


Conclusion:পুখুরিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় গত শনিবার কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা তাঁর পরিবারকে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছিল। তারপর কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে আর কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। কলকাতা পুলিশকে সব রকম সহযোগিতা করার জন্য থানা তৈরি রয়েছে।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.