মালদা, 7 মার্চ : একে দু'বছর ধরে চলে আসা করোনায় সবকিছুর মতো চাষেরও ক্ষতি হয়েছে, তার ওপর সঙ্গ দিয়েছে বৃষ্টি ৷ চলতি মরশুমে শীতকালে বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হয়েছে ৷ আর তাতেই আলুর ফলনে প্রভাব পড়েছে মারাত্মক ৷ যদিও রাজ্যের বেশিরভাগ জেলায় এখনও আলু তোলা শুরু হয়নি, তবে কয়েকটি জেলায় আলু তুলতে শুরু করেছে চাষিরা ৷ যদিও এবারে বৃষ্টির জন্যে আলু পাততেও দেরি হয়েছে ৷ তাই আলু চাষ যে কনকনে ঠান্ডায় হয়, সে আবহাওয়া এবারে আলুচাষের (Potato Cultivation in Malda) জন্যে একেবারেই উপযোগী ছিল না ৷ আর তাই হয়তো ফলনের এই হাল ৷
মালদা জেলায় সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয় পুরাতন মালদা ব্লকে । ব্লকের ছ'টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে চাষ সবচেয়ে বেশি হয় মহিষবাথানি ও ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বীজ লাগানোর সময় আবহাওয়া মোটামুটি ছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় শীতে। এবার গোটা শীত জুড়েই দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে দু'বার বৃষ্টি হয়েছিল খুব বেশি। এই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় কৃষিজমির নিকাশি ব্যবস্থা নেই। তখনই চাষিরা আশঙ্কা করেছিলেন, শীতের অকাল বৃষ্টিতে আলুচাষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। একই আশঙ্কা করেছিল ব্লক কৃষি দফতরও।
আরও পড়ুন : আদালতের নির্দেশের পরেও সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ
এখনও মাঠ থেকে আলু তোলার মরশুম সেভাবে শুরু হয়নি । তবে কিছু আলুচাষি আগাম আলু তুলছেন। আর মাটি খুঁড়তেই কপালে চিন্তার ভাঁজ চাষিদের। আলু কোথায়, বেশিরভাগই তো পচে গিয়েছে ৷
এক চাষি ফেলানু রাজবংশী বলছেন, "বৃষ্টিতে অর্ধেক আলু পচে গিয়েছে। বিঘাতে মাত্র 50 বস্তা আলু পাচ্ছি। এই ফলনে খাব কী, আর ঋণ মেটাবই বা কী করে? সার, বীজের দাম মেটাতে হবে। কীভাবে সব সামাল দেব, বুঝতে পারছি না। হিমঘর খুলেছে। সেখানে আমার শেয়ার থাকায় 200 বন্ড পেয়েছি। গতকাল গাজোলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে বন্ডের জন্য মারপিট শুরু হয়ে যাওয়ায় ফিরে এসেছি।"
আরও পড়ুন : ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত ২৪টি বাড়ি, ঝলসে মৃত্যু বেশ কয়েকটি গবাদি পশুর
আরেক চাষি রঞ্জিত রাজবংশী এবার আট বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েলেন। তিনি জানালেন, "মাটির নীচে অর্ধেক আলুই পচে গিয়েছে। শীতের বৃষ্টির জন্যই আলুর ফলন মার খেয়েছে। আলুর সাইজও ছোট। লাভ হবে না। চাষ করতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবু আমাকে বীজ কিনতে হয়নি। বাড়ির বীজ দিয়েই চাষ করেছিলাম। আমারও কিছু ঋণ রয়েছে। তা মেটাতে হবে। তাই জমি থেকে আগাম আলু তুলছি। তবে আলু তুললেও হিমঘরের বন্ড পাইনি। আমাদের মতো চাষিদের বন্ড দেওয়া হচ্ছে না। যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের শেয়ার রয়েছে, তারাই বন্ড পাচ্ছে।"