মালদা, 6 সেপ্টেম্বর: 2011সালের জনসুমারি অনুযায়ী মালদা জেলার জনসংখ্যা 39 লাখ 88 হাজার 845 ৷ আধার কার্ডের পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে এই জেলার জনসংখ্যা 55 লাখ 44 হাজার 495 জন ৷ এর মধ্যে 15.1 শতাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন ৷ সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে প্রায় 8 লক্ষ 40 হাজার ৷ অথচ এই বিপুল সংখ্যক আদিবাসী পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য জেলায় সাঁওতালি ভাষা এবং অলচিকি হরফ শেখানোর একটি মাত্র স্কুল রয়েছে ৷ বেহাল দশা থুকড়াবাড়ি অলচিকি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুলের পরিকাঠামো ৷ এই পরিস্থিতিতে জেলায় আরও অলচিকি হরফ ও সাঁওতালি ভাষার স্কুল চালু করার দাবি উঠেছে ৷
মালদায় অলচিকি হরফ ও সাঁওতালি ভাষার একমাত্র স্কুলটি রয়েছে পুরাতন মালদার ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের থুকড়াবাড়ি গ্রামে ৷ মালদা শহর থেকে প্রায় 20 কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এই গ্রাম ৷ যাতায়াতের ব্যবস্থাও খুব ভালো নয় ৷ 2014 সালের 12 জুন থুকড়াবাড়ি অলচিকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু হয়েছিল ৷ যদিও তখন বাংলা মাধ্যমের শিক্ষকদেরই সেখানে নিয়োগ করা হত ৷ পরবর্তীকালে প্রাথমিক থেকে জুনিয়র হাইস্কুলে উন্নীত হয় স্কুলটি ৷ বর্তমানে থুকড়াবাড়ি অলচিকি জুনিয়র হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন চলছে ৷ নিয়োগ করা হয়েছে সাতজন শিক্ষক ৷ তাঁরা সকলেই সাঁওতালি ভাষা এবং অলচিকি হরফ জানেন ৷
স্কুলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রামা ঠাকুর বলেন, "2020 সালে এই স্কুল জুনিয়র হাইস্কুলে উন্নীত হয়েছে ৷ বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে 55 জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৷ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা 30 জন ৷ স্কুলে ক্লাসরুম মাত্র তিনটি ৷ শিক্ষক রয়েছেন 7জন ৷ সকলেই অলচিকি মাধ্যমের ৷ স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার জন্য আলাদা রান্নাঘরও রয়েছে ৷ তিনটি ক্লাসরুম থাকায় ক্লাস করতে সমস্যা হয় পড়ুয়াদের ৷" তাই বাধ্য হয়ে পড়ুয়াদের কয়েকজন বারান্দায় বসে পড়াশোনা করছে ৷ ওই শিক্ষক আরও জানান, এই স্কুলে বামনগোলা, গাজোল, হবিবপুর ব্লকের ছেলেমেয়েরাও পড়তে আসে ৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না-থাকায় স্কুলে আসতে সমস্যা হয় পড়ুয়াদের ৷
স্কুলে ক্লাসরুম আর হস্টেলের অভাব ভালোভাবেই টের পাচ্ছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী পুনমি হাঁসদা ৷ তার কথায়, "চার বছর ধরে এই স্কুলে পড়ছি ৷ আগে আমাদের বাড়ির কাছে ইজাতপুর কুতুবপুর প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম ৷ এখানে সাঁওতালিচিকি আর ইংরেজি পড়ানো হয় ৷ সঙ্গে বিজ্ঞান, অংক-সহ অন্যান্য বিষয় তো আছেই ৷ একেকটা ঘরে দু’টো থেকে তিনটে ক্লাস চলে ৷ এতে সমস্যা হয় ৷ যদিও কিছু করার নেই ৷ ওভাবেই চলতে হচ্ছে ৷ স্কুলে মিড ডে মিল, শৌচাগার, পানীয় জলের ভালো ব্যবস্থা থাকলেও নবম ও দশম শ্রেণি চালু হয়নি ৷ তাই এবার পাস করার পর কোথায় পড়ব, আমরা জানি না ৷"
আরও পডু়ন: পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে সবুজ সাথীর সাইকেল, প্রশাসন ফেরত না নেওয়ায় সমস্যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ
স্কুলের আরেক ছাত্র নির্মল সোরেন বলেন, "আগে ফরাক্কায় পড়তাম ৷ হস্টেলে থাকতাম ৷ দারিয়াল গ্রামে আমার বাড়ি ৷ এখান থেকে অনেক দূরে বাড়ি ৷ চার বছর আগে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছি ৷ গ্রামের একজনের বাড়িতে থাকি ৷ এখানে পড়াশোনা ভালো হয় ৷ সাঁওতালি মাধ্যমে পঠনপাঠন চলে ৷ অলচিকি হরফে লেখাপড়া চলে ৷ ছোট থেকে এই হরফই শিখেছি ৷ কিন্তু হস্টেল না-থাকায় আমার মতো ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন: কংগ্রেস কর্মীকে অপহরণের অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে, উত্তপ্ত মানিকচক
জানা গেল, উচ্চশিক্ষার সুযোগ না-পেয়ে এই স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ বেশ কয়েকজন পড়ুয়ার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ তারা শ্রমিক হিসাবে কাজকর্মও শুরু করে দিয়েছে৷ আরও জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র সঠিক পরিকাঠামো না থাকায় বহু ছেলেমেয়ে এই স্কুলে ভর্তি হচ্ছে না৷ অনেকে দূরদূরান্ত থেকে ভর্তির উদ্দেশ্যে স্কুলে আসলেও বেহাল পরিকাঠামো দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অভিভাবকরা ৷