মালদা, 18 সেপ্টেম্বর : গুজব ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে খুব শিগগিরই চালু হতে চলেছে NRC । তার জেরে দেশ ছাড়তে হবে নাকি অনেককেই । এরপরই আধার কার্ড সংশোধন করতে ভিড় উপচে পড়ছে জেলায় জেলায় । একই ছবি মালদাতেও । একটি কেন্দ্রে সারা দিনে মাত্র 17টি কার্ড সংশোধন করা হয় । এদিকে, আবেদনকারীর সংখ্যা কোথাও হাজার, কোথাও বা তারও বেশি । তাই কেউ রাত কাটাচ্ছেন ব্যাঙ্কের গেটের বাইরে, কেউ বা পোস্ট অফিসের বারান্দায় ।
আধার কার্ড সংশোধন করতে ভোর থেকে সন্ধে পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসের সামনে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ । কারোর আধার কার্ডে নাম ভুল, কারোর আবার বয়স ভুল । সমস্যা হচ্ছে, প্রতিটি সংশোধন কেন্দ্রে দিনে মাত্র কয়েকটি কার্ড ঠিক করা হচ্ছে । ফলে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককেই । তাই এবার ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস চত্বরে রাত কাটাতে শুরু করেছেন অনেকেই । গতরাতে মালদা শহরের অতুল মার্কেটের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে দেখা গেল বন্ধ গেটের সামনে প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন । সবাই আধার কার্ড সংশোধনের জন্য এসেছেন ।
আধার কার্ড সংশোধন করতে এসেছেন রতুয়া থানার পরানপুর গ্রামের বাসিন্দা রানা ঘোষ । বলেন, "গতকাল থেকে এখানে রয়েছি । আধার কার্ডে আমার বয়স ভুল রয়েছে । সেটা সংশোধন করতেই এখানে আসা । NRC চালু হলে আধার কার্ডের তথ্যে যাতে কোনও ভুল না থাকে তার জন্যই সংশোধন করতে এসেছি । এখানে অনেকেই আধার কার্ড সংশোধন করাতে এসে ফিরে যাচ্ছেন । কারণ, দিনে 17টির বেশি কার্ড সংশোধন করা হয় না । তাই বাধ্য হয়ে এখানেই রাত কাটাতে হচ্ছে । NRC নিয়ে আতঙ্কিত হয়েই নিজেদের আধার কার্ড সংশোধন করাতে আসছে সবাই । ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ।"
মানিকচকের বাসিন্দা দুলাল হক আবার NRC-র নাম মুখে আনতেই চাইলেন না । গতকাল সকালে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মালদা শাখায় নিজের আধার কার্ড সংশোধনের জন্য এসেছেন । বলেন, "আমার আধার কার্ড এখনও সংশোধন হয়নি । ব্যাঙ্ক থেকে বলেছে, প্রতিদিন 17টি করে কার্ড সংশোধন করা হবে । দিনে প্রায় দেড়শো মানুষ কার্ড সংশোধন না করাতে পেরে ফিরে যাচ্ছেন । এদিকে, ব্যাঙ্ক থেকে বলা হয়েছে রাতে যারা থাকবেন, তাঁদের কার্ডই সংশোধন হবে । আমার কার্ডে বয়স ভুল আছে । সংশোধন করাতে হবে । আমি ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করি । এবার বাড়ি এসেছি । কার্ড সংশোধন করিয়ে ফের চলে যাব । তবে NRC-র জন্য আমি কার্ড সংশোধন করাতে আসিনি ।"
অতুল মার্কেটে একটি হোটেলে কাজ করেন বেলেঘাটার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দাস । তিনি বলেন, "প্রতিদিন ব্যাঙ্কে আধার কার্ড সংশোধনের জন্য প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে । আমি মাস দুয়েক ধরে একই ছবি দেখছি । আধার কার্ড ঠিক করাতে এসে অনেকে দু-তিনদিন ধরে ব্যাঙ্কের সামনেই রাত কাটাচ্ছেন । NRC নিয়ে বাংলার মানুষের মনে একটা ভয় তৈরি হয়েছে । কার কী হবে, কে কোথায় থাকবে, তার ঠিক নেই । তাই আগে আধার কার্ড, তারপর ভোটার কার্ড ঠিক করার ধুম পড়েছে ।"
অতুল মার্কেটের ব্যবসায়ী বলাই সাহা বলেন, "আধার কার্ড সংশোধনের জন্য মাস দুয়েক ধরে মানুষ আসছে । দিন-রাত ব্যাঙ্কে ভিড় । সারারাত ধরে মানুষ ব্যাঙ্কের সামনে থাকছে । মনে হয় NRC নিয়েই আতঙ্কিত । তার জন্যই তড়িঘড়ি আধার কার্ড সংশোধন করাতে আসছে ।"