মালদা, 14 অগস্ট: গুটেনবার্গ ছাপাখানা আবিষ্কার করলেও মুদ্রণযন্ত্রের সঙ্গে বাংলার প্রথম পরিচয় করিয়েছিলেন উইলিয়াম কেরি ৷ বাংলায় শিক্ষার প্রসারে এই ব্রিটিশ ভদ্রলোকের ভূমিকা সর্বাগ্রে স্বীকার্য ৷ তবে ভারতে আগমণের পর প্রথম কয়েক বছর কেরির মালদার স্মৃতি আজ ধুয়েমুছে সাফ ৷
বাংলার মানুষকে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করতে বাংলা হরফে বাইবেল অনুবাদ করেছিলেন শ্রীরামপুর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ কেরি ৷ বাংলা হরফে বাংলার মাটিতে প্রথম মুদ্রিত বই ছিল সেটিই ৷ যেটি ছাপা হয়েছিল হুগলির শ্রীরামপুর থেকে ৷ যদিও সেটি হতে পারত মালদা থেকেই ৷ কিন্তু ইতিহাসে নাম লেখাতে ব্য়র্থ হয় মালদার মদনাবতীর ছাপাখানা ৷ 261তম জন্মবার্ষিকীর আগে ধর্মপ্রচারক হিসেবে এদেশে আসা কেরির স্মৃতিবিজড়িত সেই স্থান ঘুরে দেখলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ কথা বললেন মালদা জেলার ইতিহাস গবেষকদের সঙ্গেও (Nilkuthi of Madnabati is a treasure of memory of British missionary William Carey) ৷
মদনাবতীর নীলকুঠির ম্যানেজারের দায়িত্ব নেওয়ার পর 40 পাউন্ড খরচ করে মালদায় বাংলা হরফের মুদ্রণযন্ত্র আনিয়েছিলেন ধর্মপ্রচারক কেরি ৷ কিন্তু আসার পথে কাঠের তৈরি সেই যন্ত্রের ক্ষতি হয় ৷ যা সারাই করার লোক এখানে খুঁজে পাননি ব্রিটিশ মিশনারি ৷ একইসময়ে ছেলে পিটার কেরির মৃত্যুও তছনছ করে দিয়েছিল উইলিয়ামকে ৷ এ বিষয়ে কী বলছেন ইতিহাস গবেষক গোপাল লাহা বলেন, "প্রবল আর্থিক সংকটে মাসিক 20 টাকা মাইনেয় উইলিয়াম কেরি মদনাবতী নীলকুঠির ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়ে কাজে যোগ দেন। মালদায় প্রথম ছাপাখানা চালু হয়েছিল 1780 সালে। ওই প্রেস থেকে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় বই প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু বাংলা ভাষায় ছাপানো বই বের করার কথা ভেবেছিলেন কেরিই। তার জন্য তিনি মদনাবতীতে মুদ্রণ যন্ত্র নিয়ে আসেন। দুর্ভাগ্যবশত এখানে সেই যন্ত্রে বই ছাপা হয়নি। পরে শ্রীরামপুর থেকেই এই যন্ত্রে ছাপানো বাংলা বাইবেল প্রকাশিত হয়।"
আরও পড়ুন: আদিবাসী মেয়েদের স্বপ্ন পূরণের দিশারী ইস্কোর হাসপাতাল
অর্থাৎ, কেরির নীলকুঠিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে সবকিছুই ৷ ব্রিটিশ ভদ্রলোকের তৈরি আবাসিক স্কুলের ঐতিহ্য রক্ষার্থে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে বহুবার ৷ সম্প্রতি আশ্বাস মিলেছে সেখানে নাকি গড়ে উঠবে পর্যটন কেন্দ্র ৷ যদিও তার আগে পর্যন্ত কেরির মদনাবতীর নীলকুঠিতে স্মৃতিই একমাত্র সম্বল ৷