মালদা, 22 নভেম্বর: এতদিন বিরোধীরা অভিযোগ জানিয়ে আসছিল, প্রশাসনকে ব্যবহার করে রাজনীতি করছে রাজ্যের শাসকদল ৷ বিরোধীদের সেই অভিযোগে কার্যত সিলমোহর দিয়ে দিল মানিকচক ব্লক যুব তৃণমূল ৷ তাদের সদ্য প্রকাশিত নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন চারজন সিভিক ভলান্টিয়ার ৷ তাঁদের মধ্যে 2 জনকে আবার বড়সড় পদ দেওয়া হয়েছে ৷ এনিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি ৷ যদিও সেই অভিযোগ মানতে রাজি নয় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব (Name of 4 Civic Volunteers in Block Committee of TMC) ৷
জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র এনিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ৷ তাঁর অভিযোগ, এই মুহূর্তে দেশের বিচার ব্যবস্থাও গৈরিকীকরণ হয়ে গিয়েছে ৷ সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ডঙ্কা বাজার আগেই সরগরম মালদার রাজনীতি ৷
সম্প্রতি মালদা জেলার 15টি ব্লকেই যুব তৃণমূলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ৷ মানিকচক ব্লকে সেই কমিটিতে রয়েছেন 49 জন ৷ ওই কমিটিতে নাম রয়েছে অলোক মণ্ডল, বিরু মণ্ডল, প্রশান্ত মহালদার এবং ছোটন রজকের ৷ এঁরা চারজনই 2013 সাল থেকে মানিকচক থানার অধীনে সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করেন ৷ নয়া কমিটিতে ছোটন রজককে সাধারণ সম্পাদক, অলোক মণ্ডলকে সম্পাদক এবং বাকি 2 জনকে এগজিকিউটিভ সদস্য করা হয়েছে ৷ এনিয়েই শোরগোল পড়েছে জেলার রাজনীতিতে ৷
বিষয়টি সবার আগে সামনে নিয়ে আসেন এলাকার বাসিন্দা তথা বিজেপির জেলা নেতা গৌরচন্দ্র মণ্ডল ৷ একসময় তিনি তৃণমূল সদস্য হিসাবে জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন ৷ এলাকার প্রায় সবাইকে চেনেন তিনি ৷ যুব তৃণমূলের নতুন ব্লক কমিটির তালিকা দেখে চোখ কপালে ওঠে তাঁর ৷ তাঁর বক্তব্য, "তৃণমূল হল সিন্ডিকেট পার্টি ৷ সিন্ডিকেট নিয়েই এদের চলাফেরা ৷ কাটমানি, তোলাবাজি, পাচার করাই এদের কাজ ৷ ওই লোকগুলোকেই কমিটিতে নেওয়া হয়েছে ৷ মানিকচক ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সহ কমিটিতে থাকা বেশ কয়েকজন ঠিকাদার ৷ এর থেকেও বড় বিষয়, ব্লক যুব তৃণমূল কমিটিতে চারজন সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম রয়েছে ৷ আমরা বারবার বলে এসেছি, এখানে শাসকের আইন চলে, আইনের শাসন চলে না ৷ পুলিশ এখন তৃণমূলের দলদাস ৷ এই ঘটনা সেই বক্তব্যকে প্রমাণ করে দিয়েছে ৷ তবে মানুষ এদের চিনে ফেলেছে ৷ মানুষই এদের ছুড়ে ফেলবে ৷"
এনিয়ে বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ বলেন, "যাদের সিভিক ভলান্টিয়ার করা হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই তৃণমূলের ক্যাডার ৷ গোটা রাজ্য জুড়েই এদের তৃণমূলের দলীয় কাজে ব্যবহার করা হয় ৷ অর্থাৎ সরকারি পয়সায় ক্যাডার পোষা হচ্ছে ৷ এটা সবাই জানে ৷ এতদিন আমরা পরোক্ষভাবে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতাম ৷ কিন্তু এখন আদালতে এদের কুকীর্তি প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে ৷ রাজ্য জুড়ে এদের প্রকাশ্যেই চোর বলা হচ্ছে ৷ আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এরা এখন থেকেই পুলিশকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে ৷ সিভিক ভলান্টিয়ারদের দলীয় সংগঠনের কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে ৷ এদের ভোট লুটে ব্যবহার করা হবে ৷ এরা সংবিধান বা গণতন্ত্র মানে না ৷ লজ্জাও নেই ৷ এদের এক মন্ত্রী প্রকাশ্যে রাষ্ট্রপতিকে অসম্মান করে৷ মানুষ এদের উপর বিরক্ত ৷ গণ আন্দোলনই এদের অপসারিত করবে ৷"
আরও পড়ুন: নিশীথের নামে 'চোর ধরো, জেল ভরো' ব্যানার, তৃণমূল-বিজেপি তরজা তুঙ্গে
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র শুভময় বসুর বক্তব্য, "সিভিক ভলান্টিয়াররা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে কিনা, ব্যক্তিগতভাবে আমার জানা নেই ৷ একটা ব্লকে একই নামে দু'জন ব্যক্তি থাকতেই পারে ৷ বিরোধীরা কী অভিযোগ করছে, তা আমাদের জানা নেই ৷ তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে কমিটি প্রস্তুতকারকদের অনেক সতর্ক থাকা উচিত ছিল ৷ আমরা এই ভুলভ্রান্তি শুধরে নেব ৷ তবে বিজেপির কোনও কথার উত্তর আমরা দেব না ৷ কারণ, বিজেপি গোটা দেশে বিচার ব্যবস্থাতেও রাজনীতিকরণ ও গৈরিকীকরণ করে ফেলেছে ৷ প্রশাসনের মধ্যেও বিভেদ তৈরি করেছে ৷"
শুভময়বাবু এক নামে দুই ব্যক্তির প্রসঙ্গ তুললেও প্রকাশিত কমিটিতে নামের পাশে যে ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে, সেই নম্বরে ফোন করা হলে ওই চার সিভিককর্মীই ফোন তুলেছেন ৷ তাঁরা প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন, কীভাবে তাঁদের নাম যুব তৃণমূলের কমিটিতে গেল তা তাঁরা জানেন না ৷ তাঁরা সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবেই কাজ করে যেতে চান ৷