মালদা, 30 অগাস্ট : হঠাৎ গঙ্গার ভাঙনে নদীগর্ভে তলিয়ে গেল 40টিরও বেশি বাড়ি ৷ গৃহহীন হয়েছে দেড়শোটিরও বেশি পরিবার ৷ আজ ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকের বীরনগর 1 গ্রাম পঞ্চায়েতের চিনাবাজার এলাকায় ৷ এলাকায় গঙ্গার জল ঢুকছে হু হু করে ৷ জলে রয়েছে তীব্র পাক ৷ আতঙ্কে এলাকার মানুষজন নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছে ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে যান BDO গৌতম দত্ত, বৈষ্ণবনগর থানার IC ত্রিদীপ প্রামাণিক, এলাকার বিধায়ক স্বাধীনকুমার সরকারসহ অনেকে ৷ খবর পেয়ে আজ সন্ধেয় ওই এলাকা পরিদর্শন করতে যান জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি প্রসেনজিৎ দাসও ৷ প্রশাসনের তরফে দুর্গতদের ত্রিপল ও খাদ্যসামগ্রী বিলি করা হয়েছে ৷
গত কয়েকদিন ধরেই বৈষ্ণবনগরের বিভিন্ন এলাকায় গঙ্গার বিক্ষিপ্ত ভাঙন চলছিল ৷ কয়েকদিন আগে ভাঙনে চিনাবাজার এলাকায় গঙ্গার মার্জিনাল বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে যায় ৷ গঙ্গার ভাঙনরোধের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সংস্থা, ফরাক্কা ব্যারেজ প্রোজেক্টের ৷ তারা ক্ষতিগ্রস্ত মার্জিনাল বাঁধ মেরামতিও শুরু করে ৷ কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাথরের পরিবর্তে ওই বাঁধ বালির বস্তা দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছিল ৷ আজ সকাল থেকেই গঙ্গায় পাহল (পাক) শুরু হয়েছিল ৷ সকাল 7.30 নাগাদ নদীর জলের তোড়ে ভেঙে যায় মার্জিনাল বাঁধ ৷ বাঁধভাঙা জল ধেয়ে আসে চিনাবাজারের দিকে ৷ ঘণ্টাখানেক পর থেকেই শুরু হয়ে যায় তীব্র ভাঙন ৷ তলিয়ে যেতে থাকে একের পর এক বাড়ি ৷ খবর পেয়ে দ্রুত এলাকায় ছুটে আসেন প্রশাসনিক কর্তারা ৷ পৌঁছে যান জনপ্রতিনিধিরাও ৷
আজ গঙ্গার ভাঙনে ঘর চলে গিয়েছে দায়েদা খাতুনের ৷ তিনি বলেন, “এর আগেও একবার গঙ্গার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছিলাম ৷ যা টাকাপয়সা ছিল, তা দিয়ে এখানে বাড়ি তৈরি করেছিলাম ৷ কিছুটা জমিও ছিল ৷ গঙ্গার ভাঙনে আগেই সেই জমি চলে গিয়েছে ৷ আজ বাড়িও চলে গেল ৷ এখন কোথায় থাকব, কীভাবে বাঁচব, কিছুই জানি না ৷ এখন কী নিয়ে থাকব? কোথায় যাব? তলিয়ে যাওয়ার আগে ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি ৷ মুহূর্তের মধ্যে সব নদীতে চলে গিয়েছে ৷” একই বক্তব্য মোহব্বত শেখ, রাব্বান শেখদের ৷ তাঁদের অভিযোগ, ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ বালির বস্তা দিয়ে মার্জিনাল বাঁধের কাজ করার জন্যই আজ এভাবে ভাঙনে এত মানুষকে ভিটেহারা হতে হল ৷
ঘটনাস্থানেই ছিলেন মালদা জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি চন্দনা সরকারের প্রতিনিধি ফাগু সরকার ৷ তিনি বলেন, “সকাল 7.30 থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে৷ 30-40টি বাড়ি এখনও পর্যন্ত গঙ্গায় চলে গিয়েছে ৷ যেভাবে ভাঙন হচ্ছে, তাতে নদী থেকে 100 মিটার দূরে থাকা মানুষজনও ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরে যাচ্ছে ৷ খবর পেয়ে এখানে BDO, থানার IC এসেছিলেন৷ BDO ইতিমধ্যে জেলাশাসককে রিপোর্ট করেছেন ৷ এই মুহূর্তে ফরাক্কা ব্যারেজের 106 থেকে 109 নম্বর গেট খোলা রয়েছে ৷ এতে জলের চাপ এই এলাকায় বেশি ৷ ফলে ভাঙনের মাত্রাও বেশি ৷ পরিস্থিতি বুঝে জেলাশাসক এই গেটগুলি বন্ধ করার জন্য ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানিয়েছেন বলে শুনতে পেয়েছি ৷ দুর্গত মানুষজনকে ইতিমধ্যে ডিজ়াস্টার কিট দেওয়া হয়েছে ৷ তবে ভাঙন যদি রাতে শুরু হত, তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হত ৷ তবে দুর্গতদের পুনর্বাসনের জায়গা এখনও চিহ্নিত করা যায়নি ৷ জেলাশাসককে জানিয়েছি, ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু জায়গা খালি রয়েছে ৷ সেখানে এই ঘরহারাদের আপাতত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে ৷”
কালিয়াচক 3-এর BDO গৌতম দত্ত জানিয়েছেন, “আজকের গঙ্গা ভাঙনে চিনাবাজার এলাকার প্রায় 40টি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে ৷ 50-60 মিটার এলাকা জুড়ে তীব্র ভাঙন চালিয়েছে গঙ্গা ৷ সমস্ত বিষয়ের উপর আমরা নজর রাখছি ৷ এনিয়ে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে ৷ সেখানকার ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেছেন ৷ ইতিমধ্যে দুর্গতদের ত্রিপল ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে ৷ তবে এখনও তাদের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা করা যায়নি ৷ গোটা ঘটনা জেলাশাসককে জানানো হয়েছে ৷”