মালদা, 13 অক্টোবর : তন্ত্রসাধনার (Black Magic) জন্যই কি আট বছরের নাবালিকাকে গলা কেটে খুন (Minor Girl Murdered) ? মালদার (Malda) চাঁচলের গৌরহণ্ড গ্রামের ঘটনায় প্রশ্ন জেলা জুড়ে ৷ এই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গণপিটুনি দিয়েছেন গ্রামবাসীরা ৷ আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে (Chanchal Hospital) চিকিৎসাধীন ৷ নিহত নাবালিকার অভিভাবকরাও থানায় দায়ের করা অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, তাঁদের মেয়ে তন্ত্র সাধনার বলি ৷
নিহত নাবালিকার নাম চুমকি বসাক ৷ বয়স 8 বছর ৷ স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত ৷ গতকাল গভীর রাতে গৌরহণ্ড গ্রামে কালীদিঘি নামে একটি জলাশয়ের পাশে তার শ্বাসনালী কাটা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা ৷ বাবা সুনীল বসাক পরিযায়ী শ্রমিক ৷ বিহারে কর্মরত ছিলেন ৷ মেয়ের খুন হওয়ার খবর পেয়ে গতকাল মাঝরাতে বাড়ি ফিরে এসেছেন ৷
তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে চুমকিই তাঁদের বড় সন্তান ৷ চুমকির দেহ উদ্ধারের পরই শোরগোল পড়ে যায় গ্রামে ৷ গ্রামবাসীদের সন্দেহ গিয়ে পড়ে গ্রামেরই যুবক বিক্রম ভগতের উপর ৷ বছর পঁচিশের বিক্রম তন্ত্রসাধক হিসাবে এলাকায় পরিচিত ৷ তাঁর বাবাও নাকি তন্ত্রসাধনা করতেন ৷
বছর চারেক আগেও বিক্রম নাকি গ্রামের একটি বাচ্চাকে সাধনার জন্য খুনের চেষ্টা করেছিল ৷ তবে গ্রামবাসীদের নজরে পড়ে যাওয়ায় রক্ষা পেয়েছিল বাচ্চাটি ৷ এনিয়ে গ্রামবাসীরা বিক্রমকে সতর্কও করে দিয়েছিলেন ৷ গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, গতকাল জেরার মুখে বিক্রম স্বীকার করে নেয়, সাধনায় সিদ্ধিলাভের জন্যই সে চুমকিকে বলি দিয়েছে ৷ এরপরেই এলাকাবাসীর রোষ আছড়ে পড়ে তাঁর উপর ৷ ভাঙচুর চালানো হয় তাঁর বাড়িতেও ৷
খবর পেয়ে রাতেই গ্রামে পুলিশ যায় ৷ বিক্রমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে চুমকিকে ধর্ষণের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এনিয়ে সঠিকভাবে কিছু জানা যাবে ৷ তবে যে জলাশয়ের ধার থেকে চুমকির নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তার পাশেই বিক্রমের বাড়ি ৷ ফলে গ্রামবাসীদের সন্দেহ তার উপরেই গিয়ে পড়ে ৷
চুমকির মা অমলি বসাক আজ কথা বলার অবস্থায় নেই ৷ কোনওরকমে তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে বিক্রম খুন করেছে ৷ আমি ওর ফাঁসি চাই ৷ আমার মেয়েকে ও বাঁচতে দেয়নি ৷ ওকেও বাঁচতে দেওয়া যাবে না ৷”
গ্রামের বাসিন্দা অচিন মহলদার বলেন, “গতকাল সন্ধে সাড়ে পাঁচটা থেকে মেয়েটাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ ওর মা কান্নাকাটি করছিল ৷ আমরা বউদিকে কারণ জিজ্ঞেস করি ৷ তখনই বিষয়টি জানতে পারি ৷ তখন গ্রামের সবাই মিলে মেয়েটাকে খুঁজতে বেরোই ৷ শেষ পর্যন্ত রাত ১০টা নাগাদ কালীদিঘির পাশে মেয়েটার গলা কাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয় ৷ বিক্রমই ওকে গলা কেটে দিঘির পাশে ফেলে রেখেছিল ৷ বিক্রম তন্ত্রসাধনা করে ৷ এই সাধনায় নাকি বলি দিতে হয় ৷ তবে ওর ঘরবাড়ি কে ভেঙেছে আমি জানি না ৷ আমরা চাই, ওর ফাঁসি হোক ৷”
আরেক গ্রামবাসী পিঙ্কি সাহার বক্তব্য, “বিক্রমের বাবা বড় তান্ত্রিক ছিল ৷ ছেলেও তন্ত্রসাধনা করে ৷ সাধনা করার জন্যই সে মেয়েটাকে গলা কেটে খুন করেছে ৷ গতকাল লোকজন ওর বাড়িতে মেয়েটার খোঁজ নিতে গেলে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ৷ কিছু না করলে ও পালাবে কেন ? ও’ই এই কাজ করেছে ৷ এর আগেও ও এমন কাজ করার চেষ্টা করেছিল ৷”
চাঁচল থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আজ অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ বর্তমানে অভিযুক্ত যুবক আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হচ্ছে ৷ তার রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে ৷
আরও পড়ুন : সুদিনের আশায় শিশু কন্যাকে 'বলিদান' পরিবারের