মালদা, 1 অগস্ট : ইতিহাস প্রসিদ্ধ একাধিক স্থান রয়েছে জেলায় ৷ ইতিহাস নির্ভর পর্যটন কেন্দ্র গড়ার সুযোগ ছিল। একসময় জেলার মন্ত্রীর হাতে ছিল পর্যটন দফতরের দায়িত্ব । সম্ভাবনা থাকলেও তেমনভাবে মালদায় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেনি । সম্প্রতি তিনটি দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন । দায়িত্ব পেয়েই তিনি মালদায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে ইতিহাসকে জড়িয়ে নয়, তাঁর নিশানায় জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভিত্তি করে ইকো টুরিজম।
ইতিমধ্যে পঞ্চানন্দপুরে নতুন গঙ্গা ভবন নির্মাণের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে 5 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন তিনি। এবার তাঁর নজর ইংরেজবাজার ব্লকের সাগরদিঘি। এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রকে কীভাবে ইকো টুরিজম তৈরি করা যায়, সম্প্রতি তিনি তা সরেজমিনে খতিয়েও দেখেছেন।
কিন্তু এখানেই উঠে এসেছে আরেক প্রশ্ন। প্রায় আড়াই বছর আগে তৎকালীন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যও সাগরদিঘিতে ইকো টুরিজম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। খরচ হয়েছিল প্রায় 6 কোটি টাকা। পর্যটক টানতে কিছু পরিকাঠামোও তৈরি হয়েছিল। দেখাশোনার অভাবে সেসব এখন নষ্ট হতে বসেছে। কারণ, সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। সেই সমন্বয়ে কি মন্ত্রী সাবিনা করে উঠতে পারবেন? প্রশ্নটা সেখানেই।
আরও পড়ুন :Gani Khan : ফিরছে গঙ্গাভবন, গনি খানের স্মৃতি ফেরাচ্ছেন মন্ত্রী সাবিনা
যতদূর জানা যায়, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন গৌড় নগরীতে পানীয় জল সরবরাহের জন্য সাগরদিঘিতে বড় জলাশয় তৈরির উদ্যোগ নেন। সেই কাজ শেষ করেন লক্ষ্মণ সেন। পরবর্তীতে সেই জলাশয়কে ঘিরেই গড়ে ওঠে এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। বর্তমানে এখানে রয়েছে 29টি ব্রিডিং পুকুর, চারটি মজুত পুকুর এবং একটি বিশাল জলাশয়। বড় জলাশয়টির আয়তন 450 বিঘার বেশি। সব মিলিয়ে এখানে জলাশয় রয়েছে 750 বিঘা এলাকায়। মোট জায়গা রয়েছে প্রায় 1450 বিঘা।
প্রায় আড়াই বছর আগে তৎকালীন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য এই জলাশয়কে ঘিরে ইকো টুরিজম পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেন। তার জন্য প্রকল্প খরচ ধরা হয় প্রায় 12 কোটি টাকা। এর মধ্যে 100 দিনের কাজ প্রকল্পে প্রায় 4 কোটি টাকা বরাদ্দ হয় । শুধু তাই নয়, মিশন নির্মল বাংলায় 1 কোটি 25 লক্ষ এবং স্টেট ফিনান্স কমিশনের 1 কোটি 25 লক্ষ টাকায় সাগরদিঘিতে স্যানিটারি কমপ্লেক্সের কাজ করা হয়। তৎকালীন জেলাশাসক সংখ্যালঘু দফতরের কর্মতীর্থ প্রকল্প থেকেও এখানে পর্যটনের কাজের জন্য 3 কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। সাগরদিঘির দায়িত্বে থাকা মৎস্য দফতরের কাছে 2 কোটি 32 লক্ষ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। অবশ্য সেসব এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা কেউ জানে না।
আরও পড়ুন :সপ্তাহ জুড়ে মালদায় 20 হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ
তবে সেই সময় দিঘিকে ঘিরে কিছু কাজ করা হয়েছিল। করা হয়েছিল ঢালাই রাস্তা। বসানো হয়েছিল মাথায় শেড থাকা 125 টি চেয়ার, তৈরি হয়েছিল 4টি ওয়াচ টাওয়ার, পর্যটকদের থাকার জন্য 5টি কটেজ (এর মধ্যে তিনটি বাতানুকূল), গোটা এলাকার সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরার সঙ্গে কিছু সোলার লাইটও বসানো হয়। কিন্তু এরপরই মৎস্য দফতরের বাধায় বন্ধ হয়ে যায় কাজ। তেমনটাই খবর পাওয়া গিয়েছে প্রশাসনিক সূত্রে। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় অনেক জিনিসই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
তবে এখন আশার আলো, থমকে থাকা ফের সেই কাজ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছেন মন্ত্রী। এর জন্য তিনি মৎস্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
সাগরদিঘির বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল জানাচ্ছেন, “অনেক আগে প্রায় 4 কোটি টাকায় রাস্তা, বসার জায়গা, চারটি ওয়াচ টাওয়ার, পার্ক ও কিছু গাছ লাগানো হয়েছিল। তারপর থেকে কাজ বন্ধ। অনুমতি নিয়ে সেই কাজ না হওয়ায় মৎস্য দফতর কাজ বন্ধ করে দেয়। কয়েকদিন আগে সাগরদিঘি পরিদর্শনে এসেছিলেন মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁর সঙ্গে জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিও, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতিও ছিলেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী থমকে থাকা কাজ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এখানে ইকো টুরিজম হলে পর্যটকদের সঙ্গে আমাদেরও খুব ভাল হবে। এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নতি হবে। গরিব মানুষ উপার্জন করতে পারবে।"
আরও পড়ুন : Cinema Hall Open : সরকারি নির্দেশে খুলল মালদার রূপকথা, কিন্তু দর্শক বিমুখ
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগরদিঘিতে ইকো টুরিজম পার্কের মধ্যে বোট রাইডিং, এমনকি হাউস বোট চালু করার কথাও ভাবা হয়েছে।
এই প্রকল্প নিয়ে ইংরেজবাজারের বিডিও সৌগত চৌধুরী বলেন, “সাগরদিঘি মৎস্য দফতরের অধীনে। আগে কিছুটা কাজ করার পর মৎস্য দফতর জানিয়েছিল, আর কাজ করা যাবে না। তাই এবার আমরা ঠিক করেছি, আগে মৎস্য দফতরের অনুমতি নিয়ে তবেই কাজে হাত দেওয়া হবে। যাতে এই প্রকল্পে সরকারি অর্থ বরাদ্দ হলে তা নষ্ট না হয়। এই মুহূর্তে বেশ কিছু পুকুরে খননের কাজ চলছে। আমরা সেখানে আগে কিছু কাজ করেছি। সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি পেলে আমরা সেখানে আবারও কিছু পরিকাঠামো গড়ে তুলব। আগে সেখানে বোটিং-এর কথা ভাবা হয়েছিল। তবে হাউস বোটের কথা আগে ভাবা হয়নি। বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়েই ইকো টুরিজমের কাজ করা হবে।"
সম্প্রতি ওই জায়গা পরিদর্শন করে মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, মৎস্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি এনিয়ে কথা বলবেন। তারপরই সেখানে ইকো টুরিজম নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।