মালদা, 21 অক্টোবর : লকডাউন শুরুর পর থেকে জেলায় ফিরে এসেছে প্রায় দু’লাখ পরিযায়ী শ্রমিক ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় তাঁদের নিয়ে আসা হয়নি ৷ এলাকায় কাজ না পেয়ে কোরোনা পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের অনেকে ফের ভিনরাজ্যে নিজেদের পুরোনো কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাচ্ছে ৷ কারণ, সংসার চালাতে হবে ৷ অনেকে এখনও কাজের সন্ধান পায়নি ৷ তাই বাধ্য হয়ে এখনও বাড়িতেই থেকে গিয়েছে ৷ লকডাউন এবং পরবর্তী সময়ে ঘরে ফিরে আসা প্রত্যেক শ্রমিককে কেন্দ্রীয় প্রকল্প, গরিব রোজগার অভিযান যোজনায় অন্তর্ভূক্ত করার দাবিতে এর আগে জেলার 15টি ব্লক ও জেলাশাসককে একাধিকবার ডেপুটেশন দিয়েছে কংগ্রেস ৷ কিন্তু প্রশাসনের তরফে এনিয়ে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ৷ সেকারণে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তৎকালীন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলম ও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম ৷
গতকাল এই মামলার দ্বিতীয় দফার শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয়, মালদার পরিযায়ী শ্রমিকদের এই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, আগামী 3 নভেম্বর তা ডিভিশন বেঞ্চকে জানাতে হবে ৷ যেহেতু আগামী 20 নভেম্বর শ্রমিকদের ওই প্রকল্পে নাম নথিভূক্ত করার শেষ সীমা, তাই তার আগেই দুই সরকারকে এনিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে ৷
এনিয়ে আজ জেলা কংগ্রেসের সদর দপ্তর, হায়াত ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে মাসুদ আলম বলেন, "লকডাউনে কর্মহীন গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া মানুষ, পরিযায়ী শ্রমিক, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য গরিব রোজগার অভিযান যোজনায় এক লাখ 70 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কোনও জেলায় যদি 25 হাজার পরিযায়ী শ্রমিক কোরোনা আবহে ভিনরাজ্য থেকে ফিরে আসে, তাহলে সেই জেলাকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করা হবে ৷ আমরা জেলা জুড়ে এনিয়ে সার্ভে করে দুই লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিকের সন্ধান পাই ৷ এই জেলার মোট জনসংখ্যার 30 শতাংশই পরিযায়ী শ্রমিক ৷ তাই এই শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা 15টি ব্লক ও জেলাশাসকের কাছে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছি ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ৷ কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারই এই জেলার সঙ্গে বঞ্চনা করার চেষ্টা চালাচ্ছে ৷ জেলাশাসক জানাচ্ছেন, কোরোনা আবহে এক লাখ 41 হাজার 285 জন পরিযায়ী শ্রমিককে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য কুপন দেওয়া হয়েছে৷ প্রায় 59 হাজার শ্রমিককে স্নেহের পরশ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে ৷ কিন্তু তবুও প্রশাসন এই শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় আনতে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না ৷ বাধ্য হয়েই এনিয়ে আমরা গত 12 অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম ৷"
মাসুদ সাহেব বলেন, "হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ 16 অক্টোবর এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করে ৷ সেদিন রাজ্যের তরফে সলিসিটার জেনারেল কোর্টে উপস্থিত থাকলেও কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেলের পরিবর্তে এক জুনিয়র আইনজীবীকে পাঠানো হয় ৷ তিনি বিচারপতিদের জানিয়ে দেন, এব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই ৷ এরপর 20 অক্টোবরের শুনানিতেও কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেল কোর্টে উপস্থিত হননি ৷ তাই ডিভিশন বেঞ্চ আগামী 3 নভেম্বর দুই সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, এই জেলার শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতাভূক্ত করতে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে ৷ আমরা আশা করছি, আদালতের হস্তক্ষেপে অবশেষে সুবিচার পাবেন এই জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা ৷"