ETV Bharat / state

কোরোনার থাবা গাঁদা চাষেও, বিপন্ন মালদার চাষিরা - covid situation in malda

অপরিমিত জলসেচ ব্যবস্থায় বিকল্প চাষে ঝুঁকেছিল মালদার চারটি ব্লকের চাষিরা । কিন্তু কোরোনা এবং লকডাউনের জেরে এবার মুখ থুবড়ে পড়েছে গাঁদা চাষ । বিপন্ন কৃষকরা ।

মালদার বরিন্দ এলাকার গাঁদা চাষে বাঁধা কোরোনা
মালদার বরিন্দ এলাকার গাঁদা চাষে বাঁধা কোরোনা
author img

By

Published : Nov 24, 2020, 6:46 AM IST

মালদা, 24 নভেম্বর : মালদা জেলায় বরিন্দ এলাকা হিসাবে পরিচিত পুরাতন মালদা, গাজোল, বামনগোলা ও হবিবপুর ব্লক । এই চারটি ব্লকে কৃষিকাজে জলসেচের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে । নদী কিংবা খাঁড়ি থাকলেও এখনও পর্যন্ত সরকার সেখানে জলসেচের তেমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি । ভূগর্ভস্থ জলস্তরও অনেক নীচে । ফলে সাধারণ চাষিরা মাটির অত নীচ থেকে সেচের জন্য জল উত্তোলন করতে পারে না । এই চারটি ব্লকের বেশিরভাগ কৃষিজমি একফসলি । মূলত বৃষ্টির উপরেই চাষিদের নির্ভর করতে হয় । আমন ধানের মরশুম ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় কৃষিজমি ফাঁকাই পড়ে থাকে । তাই এই এলাকার কৃষকরা আমন মরশুম ছাড়া অন্য সময় বিকল্প চাষের সন্ধানে থাকে । একসময় বামনগোলা ব্লকে আনারস চাষও শুরু হয়েছিল । কিন্তু সরকারি সহায়তা না পেয়ে এখন সেই চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এরইমধ্যে বামনগোলা ব্লকের কিছু কৃষক শীতকালীন ফুল গাঁদা চাষের উদ্যোগ নিয়েছিল । কিন্তু এবার কোরোনার জন্য সেই চাষও মুখ থুবড়ে পড়েছে । এই অবস্থায় বছরের বাকি সময় কীভাবে কাটবে, ভেবেই পাচ্ছে না গাঁদা চাষিরা ।

মালদা জেলায় কৃষিজমির সিংহভাগ দখল করে রেখেছে আম, লিচু এবং রেশম চাষ । বাকি জমিতে ধান, পাট ও আলু চাষে জোর দেয় চাষিরা । কিন্তু সমস্যায় পড়ে বরিন্দ এলাকার কৃষকরা । এর মূল কারণ, জমিতে জলসেচের সমস্যা । এরইমধ্যে বামনগোলা ব্লকের পাকুয়াহাট এলাকার এক চাষি প্রায় 35 বছর আগে শুরু করেছিলেন গাঁদা চাষ । লাভ বেশি দেখে এই চাষে উৎসাহিত হয়েছিল স্থানীয় কৃষকদের অনেকে । ধীরে ধীরে এই চাষ ছড়িয়ে পড়ে পাশের হবিবপুর ও গাজোল ব্লকে । অল্প হলেও কিছু কৃষক এই চাষে হাত পাকাচ্ছিল । কিন্তু কোরোনা আর লকডাউনের জেরে এবার গাজোল ও হবিবপুর ব্লকে এই চাষ পুরোপুরি বন্ধ । এই দুই ব্লকের ফুলচাষিরা পাড়ি জমিয়েছে ভিনরাজ্যে । যদিও এবার সামান্য পরিমাণে গাঁদা চাষ হয়েছে । মালদা জেলায় এই চাষের আমদানি হয়েছিল মূলত বামনগোলার খিড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খোকন ভক্তের হাত ধরে ।

খোকন ভক্ত জানাচ্ছেন, "1985 সালে আমিই প্রথম এই জেলায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ফুলচাষ শুরু করি । কিন্তু কোরোনা আর লকডাউনের জন্য এবার গাঁদা চাষ প্রায় করতেই পারিনি । বাজারও ভালো নেই । বিয়ের অনুষ্ঠান অনেক কম । আমাদের মূলত লাভ হয় বিয়ের মরশুমেই । এবার চাষ ও ব্যবসায় খুব ক্ষতি হয়েছে । গত 35 বছরে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনও হইনি । আমি ফুলের চারা নদিয়ার রানাঘাট থেকে নিয়ে আসি । বছরে দু'বার চারা আনতে হয় । কারণ, এক চারায় গোটা বছর চলে না । লকডাউনের জন্য এবার চারা আনতে পারিনি । গাড়ি ঠিকমতো চলেনি । ফুলচাষে এক বিঘা জমিতে 20-25 হাজার টাকা খরচ হয় । ঠিকমতো ফসল উঠলে এবং বাজার ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় 70-80 হাজার টাকার ব্যবসা হয় । অন্যান্য বছর আমি প্রায় চার বিঘা জমিতে চাষ করি । কিন্তু, এবার এক বিঘা জমিতে চাষ করতে পেরেছি । এবছর পরিস্থিতি খুবই খারাপ ।"

গাঁদা চাষে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো কোরোনা । দেখুন ভিডিয়ো...

এলাকার আরও এক গাঁদা চাষি পঙ্কজ ভক্ত বলেন, "এবার আমাদের ফুলচাষে কোরোনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে । লকডাউনে ফুলের বাজার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে । এখনও সেই বাজার আমরা পাচ্ছি না । এদিকে সার ও সেচের খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে । সবচেয়ে বড় বিষয়, কোরোনার জন্য এবার আমরা ফুলের চারা সংগ্রহ করতে পারিনি । আমরা মূলত নদিয়া ও উত্তর 24 পরগনা থেকে চারা সংগ্রহ করি । লকডাউনে গাড়িঘোড়া বন্ধ থাকায় সময়মতো চারা সংগ্রহ করা যায়নি । এখান থেকে যেসব ছোটো গাড়ি কলকাতার দিকে গিয়েছিল, তাদের হাত-পায়ে ধরে মাত্র একবার কিছু চারা সংগ্রহ করা গিয়েছিল । সেখানেই সব শেষ । আর চার আনা যায়নি ।"

মালদা, 24 নভেম্বর : মালদা জেলায় বরিন্দ এলাকা হিসাবে পরিচিত পুরাতন মালদা, গাজোল, বামনগোলা ও হবিবপুর ব্লক । এই চারটি ব্লকে কৃষিকাজে জলসেচের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে । নদী কিংবা খাঁড়ি থাকলেও এখনও পর্যন্ত সরকার সেখানে জলসেচের তেমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি । ভূগর্ভস্থ জলস্তরও অনেক নীচে । ফলে সাধারণ চাষিরা মাটির অত নীচ থেকে সেচের জন্য জল উত্তোলন করতে পারে না । এই চারটি ব্লকের বেশিরভাগ কৃষিজমি একফসলি । মূলত বৃষ্টির উপরেই চাষিদের নির্ভর করতে হয় । আমন ধানের মরশুম ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় কৃষিজমি ফাঁকাই পড়ে থাকে । তাই এই এলাকার কৃষকরা আমন মরশুম ছাড়া অন্য সময় বিকল্প চাষের সন্ধানে থাকে । একসময় বামনগোলা ব্লকে আনারস চাষও শুরু হয়েছিল । কিন্তু সরকারি সহায়তা না পেয়ে এখন সেই চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এরইমধ্যে বামনগোলা ব্লকের কিছু কৃষক শীতকালীন ফুল গাঁদা চাষের উদ্যোগ নিয়েছিল । কিন্তু এবার কোরোনার জন্য সেই চাষও মুখ থুবড়ে পড়েছে । এই অবস্থায় বছরের বাকি সময় কীভাবে কাটবে, ভেবেই পাচ্ছে না গাঁদা চাষিরা ।

মালদা জেলায় কৃষিজমির সিংহভাগ দখল করে রেখেছে আম, লিচু এবং রেশম চাষ । বাকি জমিতে ধান, পাট ও আলু চাষে জোর দেয় চাষিরা । কিন্তু সমস্যায় পড়ে বরিন্দ এলাকার কৃষকরা । এর মূল কারণ, জমিতে জলসেচের সমস্যা । এরইমধ্যে বামনগোলা ব্লকের পাকুয়াহাট এলাকার এক চাষি প্রায় 35 বছর আগে শুরু করেছিলেন গাঁদা চাষ । লাভ বেশি দেখে এই চাষে উৎসাহিত হয়েছিল স্থানীয় কৃষকদের অনেকে । ধীরে ধীরে এই চাষ ছড়িয়ে পড়ে পাশের হবিবপুর ও গাজোল ব্লকে । অল্প হলেও কিছু কৃষক এই চাষে হাত পাকাচ্ছিল । কিন্তু কোরোনা আর লকডাউনের জেরে এবার গাজোল ও হবিবপুর ব্লকে এই চাষ পুরোপুরি বন্ধ । এই দুই ব্লকের ফুলচাষিরা পাড়ি জমিয়েছে ভিনরাজ্যে । যদিও এবার সামান্য পরিমাণে গাঁদা চাষ হয়েছে । মালদা জেলায় এই চাষের আমদানি হয়েছিল মূলত বামনগোলার খিড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খোকন ভক্তের হাত ধরে ।

খোকন ভক্ত জানাচ্ছেন, "1985 সালে আমিই প্রথম এই জেলায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ফুলচাষ শুরু করি । কিন্তু কোরোনা আর লকডাউনের জন্য এবার গাঁদা চাষ প্রায় করতেই পারিনি । বাজারও ভালো নেই । বিয়ের অনুষ্ঠান অনেক কম । আমাদের মূলত লাভ হয় বিয়ের মরশুমেই । এবার চাষ ও ব্যবসায় খুব ক্ষতি হয়েছে । গত 35 বছরে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনও হইনি । আমি ফুলের চারা নদিয়ার রানাঘাট থেকে নিয়ে আসি । বছরে দু'বার চারা আনতে হয় । কারণ, এক চারায় গোটা বছর চলে না । লকডাউনের জন্য এবার চারা আনতে পারিনি । গাড়ি ঠিকমতো চলেনি । ফুলচাষে এক বিঘা জমিতে 20-25 হাজার টাকা খরচ হয় । ঠিকমতো ফসল উঠলে এবং বাজার ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় 70-80 হাজার টাকার ব্যবসা হয় । অন্যান্য বছর আমি প্রায় চার বিঘা জমিতে চাষ করি । কিন্তু, এবার এক বিঘা জমিতে চাষ করতে পেরেছি । এবছর পরিস্থিতি খুবই খারাপ ।"

গাঁদা চাষে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো কোরোনা । দেখুন ভিডিয়ো...

এলাকার আরও এক গাঁদা চাষি পঙ্কজ ভক্ত বলেন, "এবার আমাদের ফুলচাষে কোরোনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে । লকডাউনে ফুলের বাজার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে । এখনও সেই বাজার আমরা পাচ্ছি না । এদিকে সার ও সেচের খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে । সবচেয়ে বড় বিষয়, কোরোনার জন্য এবার আমরা ফুলের চারা সংগ্রহ করতে পারিনি । আমরা মূলত নদিয়া ও উত্তর 24 পরগনা থেকে চারা সংগ্রহ করি । লকডাউনে গাড়িঘোড়া বন্ধ থাকায় সময়মতো চারা সংগ্রহ করা যায়নি । এখান থেকে যেসব ছোটো গাড়ি কলকাতার দিকে গিয়েছিল, তাদের হাত-পায়ে ধরে মাত্র একবার কিছু চারা সংগ্রহ করা গিয়েছিল । সেখানেই সব শেষ । আর চার আনা যায়নি ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.