মালদা, 10 অক্টোবর: শ্বশুরবাড়ির কাছ থেকে পণের টাকা দাবি! আর তা না পেয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল স্বামী ও তাঁর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৷ আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি যুবতী ৷ ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের নতুন সাদলিচক আড়োলপুর গ্রামে ৷ সোমবার রাতে জামাই-সহ তাঁর বাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জখম যুবতীর মা ৷ তবে এ নিয়ে হইচই শুরু হতেই এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে দুর্বৃত্তরা ৷ তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে পুলিশ ৷
জানা গিয়েছে, ছ’বছর আগে এই গ্রামেরই বাসিন্দা পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক আবুজার হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল স্থানীয় সুলতাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগীলাল গ্রামের বাসিন্দা 26 বছরের আশিয়া খাতুনের ৷ দেখাশোনা করেই বিয়ে হয়েছিল তাঁদের ৷ আশিয়া পিতৃহীন ৷ মা হালেমা বেওয়া বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকাপয়সা সংগ্রহ করে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন ৷ গরীব পরিবার জেনেও বিয়েতে পাত্রপক্ষ পণের দাবি করেছিল বলে আশিয়ার পরিবারের দাবি ৷ মেয়ের কথা ভেবে কষ্ট হলেও যথাসাধ্য পণ দিয়েছিলেন বিধবা মা ৷ তাতেও টাকার চাহিদা পূরণ হয়নি ছেলের ও তাঁর পরিবারের বলে অভিযোগ ৷
আশিয়ার পরিবার অভিযোগ করে, এরপরেও কখনও এক লক্ষ, কখনওবা দুই লক্ষ টাকা পণ চাওয়া হত বধূর পরিবারের থেকে ৷ আর না দিতে পারলেই চলত বধূ নির্যাতন। পরিবারের সদস্যরাও সামিল হত ৷ এভাবেই চলেছে দীর্ঘ সময় ৷ কিন্তু রবিবার রাতে নির্যাতনের মাত্রা চরমে ওঠে ৷ টাকা দিতে না পারায় স্ত্রীকে শুধু মারধর নয়, হাত-পা বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় বলে অভিযোগ ৷ এরপরেই একসময় নেতিয়ে পড়েন ওই যুবতী ৷ আরও অভিযোগ, সংজ্ঞাহীন হয়ে গেলে মৃত ভেবে তাঁকে ফেলে রাখে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা ৷ খবর পেয়ে পরদিন সকালে ছুটে আসেন তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন ৷ দেখা যায়, তখনও প্রাণ রয়েছে দেহে ৷ তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভরতি করা হয় ৷ বর্তমানে সেখানেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই যুবতী ৷
আরও পড়ুন: সন্তান না হওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, বাড়ি থেকে উদ্ধার গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ
আশিয়ার পরিবারের দাবি, বিয়ের পর প্রথম দু'বছর আশিয়ার সংসার ভালোই চলছিল ৷ ঝামেলা শুরু হয় তারপর ৷ মাঝেমধ্যেই আবুজার বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে আশিয়াকে চাপ দিত ৷ আশিয়া সেকথা মাকে জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু এত টাকা সংস্থান করার সামর্থ হালেমা বেওয়ার ছিল না ৷ টাকা না পেলে অত্যাচারের ঝড় বইত আশিয়ার উপর ৷ মেয়ের কথা ভেবে হালেমা কয়ে00কবার চেয়েচিন্তে টাকা জোগাড় করে জামাইয়ের হাতে তুলেও দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু এতে লোভ আরও বাড়তে থাকে আবুজারের ৷ সঙ্গে আশিয়ার উপর অত্যাচারের মাত্রাও বাড়তে থাকে বলে অভিযোগ ৷ বিষয়টি নিয়ে গ্রামে বেশ কয়েকবার সালিশি সভা বসে ৷ কিন্তু সমস্যা মেটেনি ৷ রবিবার রাতে অত্যাচারের মাত্রা সীমা ছাড়ায় ৷
আশিয়ার দাদা ওয়াসিমের কথায়, "শুধু আবুজার না, মারধরের ঘটনায় জড়িত রয়েছে ওঁর মা নুরেফা বিবি আর দুই ভাই উমর ফারুক ও বাদিরুদ্দিনও ৷ টাকা দিতে না পারলেই বোনের উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে তারা ৷ টাকা চেয়ে না পাওয়ায় এর আগে ওঁরা বোনের পেটে লাথি মেরে গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করে দিয়েছিল ৷ আরেকবার মারধর করে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে বোনকে খুনের চেষ্টা করে ৷ সেটা নিয়ে থানা পুলিশও হয় ৷ আশিয়া আমাদের বাড়িতে চলে আসে ৷ যদিও আবুজারের বোন আশিয়াকে ওদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ৷ রবিবার রাতে ওরা তিন ভাই মিলে বোনকে বেঁধে গোটা শরীর কাটে ৷ পরে মরে গিয়েছে ভেবে বোনকে ফেলে রাখে ৷ খবর পেয়ে গতকাল সকালে ওদের গ্রামে গেলে তিন ভাই আমাদের তলোয়ার দেখাচ্ছিল ৷ তবে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বোনকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে আসি ৷"
আরও পড়ুন: ঋণের টাকা শোধ দিতে না পেরে নির্যাতনের শিকার দলিত মহিলা
হালেমা বেওয়া বলেন, "কোনওরকমে মেয়েকে উদ্ধার করে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি ৷ গতকাল রাতে আমি আবুজার, ওর মা আর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছি ৷" হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের খোঁজে গতকাল রাতেই নতুন সাদলিচক আড়োলপুর গ্রামে হানা দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু অভিযুক্তরা সবাই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে ৷ তাদের খোঁজে তল্লাশি জারি পুলিশের ।