মালদা, 31 জানুয়ারি: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Elections 2023) ৷ তার আগে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) জানালেন যে তাঁর সরকার মতুয়াদের জন্য কী কী করেছে ৷ এদিন মালদার গাজোলে প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ওই এলাকা-সহ সংলগ্ন এলাকার ভোটারদের একটা বড় অংশ মতুয়া (Matua) সম্প্রদায়ের ৷ তাই আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের একটা বড় অংশ ছিল মতুয়াদের নিয়ে ৷
কিন্তু মতুয়াদের দুই ধর্মীয় গুরুর যে নাম তিনি উচ্চারণ করেছেন, তার প্রভাব আগামীতে কী হবে বলা যায় না ৷ হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রসঙ্গ তুলতে গিয়ে আজ মমতা ওই দু’জনকে ‘রঘুচাঁদ, গরুচাঁদ’ বলে উল্লেখ করেন ৷ এনিয়ে খানিকটা যেন ক্ষুব্ধ মতুয়া সমাজ ৷ অভিযোগ, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ডাক দিলেও সভায় একজন মতুয়াও উঠে দাঁড়াননি কিংবা হাত তোলেননি ৷ পঞ্চায়েত ভোটে এর প্রভাব পড়বে কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে ৷ কিন্তু এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সমালোচনায় সরব হয়েছে বিজেপি ৷
মমতা আজ বলেন, “আমরা মতুয়াদের জন্য সবটাই করেছি ৷ আর নির্বাচন এলে বিজেপির (BJP) লোকজন একটু ভাত খেয়ে বলে, আমরা মতুয়ার বন্ধু ৷ যতদিন মতুয়া মা, বড় মা বেঁচে ছিলেন, আমিই তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছি ৷ কেউ তাকিয়ে দেখেনি ৷ আমরা রঘুচাঁদ-গরুচাঁদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে ৷”
অবশ্য এই দুটি নাম উচ্চারণ করেই তাঁর যেন খানিকটা সন্দেহ হয়েছিল ৷ একবার পিছনে বসে থাকা প্রশাসনিক কর্তাদের কাছ থেকে নাম দু’টি জেনেও নেন তিনি ৷ অভিযোগ, সেই কর্তারাও তাঁকে ভুলটা ধরিয়ে দেননি ৷ তাঁর এই নাম বিভ্রাট সভায় উপস্থিত মতুয়া সম্প্রদায় যে ভালোভাবে নেয়নি তা বিলক্ষণ বোঝা গিয়েছে ৷ যখন তিনি সভায় উপস্থিত মতুয়াদের হাত তুলতে বলেন, একটি হাতও উপরপানে দেখা যায়নি ৷
গ্রামাঞ্চলের ভোটের মুখে মালদার আমচাষ থেকে শুরু করে নদী ভাঙন সমস্যাকেও ইস্যু করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ৷ তিনি বলেন, “মালদার আম বিদেশে রফতানি করা হবে ৷ এখানকার আম গোটা বিশ্বে যাতে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে ৷ সব কাজে সয়ম্ভর গোষ্ঠীকে নিয়োগ করতে হবে ৷ এটা করে আমাদের প্রায় দেড় কোটি কর্মসংস্থান হয়েছে ৷ মেয়েদের তৈরি সামগ্রী মার্কেটিং করার জন্য আমি অনেক জিনিস কিনি ৷ মালদা, মুর্শিদাবাদ আর নদিয়া জেলায় নদী ভাঙন বড় সমস্যা ৷ তিন জেলার সব নদীর জলে চলে যাচ্ছে ৷’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘নদীর ভাঙন রোখা এখন আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ৷ আগে এটা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ছিল ৷ আজ নেই ৷ ওরা ছেড়ে দিয়েছে ৷ ফরাক্কা ব্যারেজের 700 কোটি টাকা আমরা পাই ৷ ইন্দো-বাংলা চুক্তির পর আমাদের ওটা পাওনা ছিল ৷ সেই টাকা আমাদের দেওয়া হয়নি ৷ কিন্তু টাকা না থাকলে আমি কোথায় থেকে কাজ করব ? তবু আমরা নদী ভাঙন রুখতে 400 কোটি টাকা খরচ করেছি ৷ নদীপাড়ে ম্যানগ্রোভ আর ভিটিভার ঘাস লাগিয়ে ভাঙন রুখতে হবে ৷ যাদের বাড়িঘর আগামী দিন নদীগর্ভে চলে যেতে পারে, তাদের একটু দূরে কীভাবে পুনর্বাসন দেওয়া যায়, সেটা রাজ্যের মুখ্যসচিবের অধীনে থাকা একটি কমিটি দেখবে ৷”
মমতার গলায় আজ উঠে এসেছে দেউচা পাচামি প্রসঙ্গও ৷ তিনি বলেন, “ওখানে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ এর জন্য আমি গর্বিত ৷ এটা হয়ে গেলে মালদা থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি-সহ সব জেলার কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে ৷ সেকথা চিন্তা করেই আমি এই কাজটা করেছি ৷ আমাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে কেন কাজে যাবে ? তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এখানেই কাজে নিয়োগ করতে হবে ৷ এটা নিয়ে আমরা ভাবছি ৷”
বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘মতুয়ারা ধর্মপ্রাণ মানুষ৷ তাঁরা নাগরিকত্বের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে ৷ তাদের পাশে ভারতীয় জনতা পার্টি ও কেন্দ্রীয় সরকার রয়েছে ৷ তারই বিরোধিতা উনি (মমতা) করছেন ৷ শুধু নাগরিকত্ব নিয়ে বিরোধিতা নয়, তাঁদের ধর্মগুরুদের যেভাবে বিকৃতি করেছেন উনি, এতে তাঁদেরকে অপমান করা হয়েছে ৷’’ একই সঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে এই নিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি করেছেন ৷
আরও পড়ুন: গৌড়বঙ্গের তিন জেলার জন্য 1200 কোটি টাকার প্রকল্পের সূচনা মুখ্যমন্ত্রীর