মালদা, 5 মে: পঞ্চায়েত ভোটের মুখে আরও এক বিধায়ক কি হাতছাড়া হচ্ছে তৃণমূলের ? অন্তত বৃহস্পতিবার মালদায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের পর সেই জল্পনা বেড়েছে ৷ ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরী প্রকাশ্যেই দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন ৷ এবার প্রশাসনিক বৈঠকে ডাকা-ডাকি করেও সুজাপুরের তৃণমূল বিধায়কের সাড়া পেলেন না খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ যার জেরে আবদুল গনির বিধানসভার দায়িত্ব গেল তাঁর পাশের বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনের হাতে ৷ আর এই ঘটনাকেই নজিরবিহীন বলছেন রাজনৈতিক মহল ৷
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বৃহস্পতিবার মালদায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ গ্রামীণ এলাকা নিজেদের কবজায় রাখতে প্রশাসনিক বৈঠকে মালদা ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা একাধিক দাবি তুলে ধরতে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের দরবারে ৷ কিন্তু বারবার ডেকেও সুজাপুরের বিধায়কের সাড়া পেলেন না মুখ্যমন্ত্রী ৷ ওয়াকফ বোর্ডের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর আপত্তি জানাতেই আবদুল গনির খোঁজ করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ কারণ, গনি রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ৷ শেষ পর্যন্ত গনির সাড়া না পেয়ে সুজাপুরের দায়িত্ব পাশের মোথাবাড়ি কেন্দ্রের বিধায়কের কাঁধে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ প্রশাসনিক বৈঠকে এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলেই জানাচ্ছে রাজনৈতিক মহল ৷
21-র বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছিলেন সুজাপুরের তৃণমূল প্রার্থী আবদুল গনি ৷ 1 লাখ 30 হাজার ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন গনি খান চৌধুরির ভ্রাতুষ্পুত্র ইশা খান চৌধুরীকে ৷ কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির উপর ভরসা করেছিলেন ওই এলাকার মানুষ ৷ কিন্তু অভিযোগ, ভোটে জেতার পর থেকে তাঁকে আর এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়নি ৷ এনিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে ৷ তার প্রমাণ মিলেছে শেরশাহী গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলামের মন্তব্যে ৷ তিনি বলেন, "ভোটে জেতার পর আর আমরা আমাদের বিধায়ককে দেখতে পাইনি ৷ এলাকায় আমাদের একাধিক সমস্যা রয়েছে ৷ বিশেষত পানীয় জলের সমস্যা ৷ কিন্তু বিধায়ক সেই সমস্যা মেটাতে কোনও উদ্যোগ নেননি ৷ ভেবেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী এলাকায় এলে আমরা সরাসরি তাঁর কাছে নিজেদের সমস্যার কথা জানাব ৷ কিন্তু সেটা আর হল না ৷ এখন আমাদের এভাবেই থাকতে হবে ৷"
একই ক্ষোভ সুজাপুরের নাসিমুল হকেরও ৷ তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার প্রত্যেক বিধায়ক সেখানে নিজেদের এলাকার সমস্যা, মানুষের দাবির কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানালেন ৷ অথচ সুজাপুরের বিধায়ক সেখানে হাজির ছিলেন না ৷ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নাম ধরে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সাবিনা ইয়াসমিনের উপর এই এলাকা দেখার ভার দিয়েছেন ৷ তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে খুশি এলাকার মানুষ ৷
প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকেই ওয়াকফ বোর্ডের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "ওয়াকফ বোর্ডের অনেক জমি পড়ে রয়েছে ৷ সেগুলি কাজে লাগাতে হবে ৷ ওয়াকফ বোর্ডের কাজকর্ম খুব ভালো হচ্ছে না ৷ ওয়াকফ বোর্ডের কী সম্পত্তি আছে, তার তালিকাও আমার কাছে কখনও আসে না ৷" তখনই তিনি আবদুল গনির খোঁজ করেন ৷ পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানান, আবদুল গনি অসুস্থ ৷ তিনি কলকাতায় রয়েছেন ৷ সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্র দেখার দায়িত্ব সাবিনা ইয়াসমিনের হাতে তুলে দিয়েছেন ৷ এদিকে এই ঘটনার পিছনে 'কান ভারী' তত্ত্ব খাঁড়া করেছেন গনি ৷ তাঁর বক্তব্য, "অসুস্থ থাকায় আমি প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারিনি ৷ সেই সুযোগে হয়তো কেউ মুখ্যমন্ত্রীর কান ভারি করেছেন ৷ সে কারণে মুখ্যমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে সুজাপুর কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়েছেন ৷ তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ আমি মেনে নিচ্ছি ৷"
সেই সঙ্গে, ওয়াকফ বোর্ডের পরিকাঠামোগত কিছু উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান গনি ৷ সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি ৷ রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিধায়ক আবদুল গনির কাজকর্মে সুজাপুর কেন্দ্রের মানুষ যে ক্ষুব্ধ, সে কথা বিলক্ষণ জানেন তৃণমূল নেত্রী ৷ সম্প্রতি ওই এলাকায় তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে যোগদানের ঘটনাও তিনি নিশ্চিতভাবে লক্ষ্য করেছেন ৷ সেকারণেই মানুষের ক্ষোভে প্রলেপ দিতে তিনি সাবিনাকে ওই এলাকার দায়িত্ব দিয়েছেন ৷ তবে তাঁর এই কৌশল পঞ্চায়েত নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা ভোটের পরই জানা যাবে ৷
আরও পড়ুন: এবারের দুয়ার সরকার থেকে সুবিধা পেলেন 47 লক্ষ মানুষ