মালদা, 9 মে : ছাগলের শিং ভাঙা নিয়ে বচসা । আর তার জেরে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল পুরাতন মালদায় (Malda Woman Allegedly Beaten to death by Relatives) । এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক প্রৌঢ়ার । অভিযুক্ত তাঁর দেওর এবং দেওরের স্ত্রী । মৃতার স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে দুই অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছে মালদা থানার পুলিশ (Malda Police Arrests Couple for Murder Allegation) । নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের ইটাপাঁজা কলোনিতে ।
ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার । মৃতা পারুল মণ্ডলের (50) স্বামী ফণি মণ্ডল পুলিশকে জানিয়েছেন, সেদিন বিকেলে তাঁদের পোষ্য একটি ছাগল তাঁর ভাই চৈতন্য মণ্ডলের বাড়িতে ঢুকে পড়ে । চৈতন্য ও তার স্ত্রী জুলি মণ্ডল ছাগলটির শিং ভেঙে দেয় । ছাগলের মাথায় রক্ত দেখে তাঁর স্ত্রী প্রতিবাদ করলে চৈতন্য আর জুলি তাঁর স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করে । মারের চোটে তাঁর স্ত্রীর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে । তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ।
ফণি মণ্ডল আরও জানিয়েছেন, সেই ঘটনা দেখে প্রতিবেশীরা ভাই ও ভাতৃবধূর হাত থেকে উদ্ধার করে তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন । সেদিন রাতে বাড়িতেই তাঁরা স্ত্রীর দেখাশোনা করছিলেন । কিন্তু পরদিন সকালে তাঁর স্ত্রীর শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় । তাঁকে মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁর স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন ।
ফণি মণ্ডলের দাবি, তাঁরা লেখাপড়া জানেন না । তাই মেডিক্যাল থেকে রাতে স্ত্রীর মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে চলে আসেন । পরদিন সকালে স্ত্রীর দেহ সৎকারের আগে তিনি মালদা থানায় ভাই ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান । অভিযোগ পেয়েই পুলিশ মৃতদেহ সৎকারের পরিবর্তে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেয় ।
পারুলদেবীর মেয়ে মাম্পি মণ্ডল বলেন, “সেদিন বাজার থেকে এসে মা ছাগলের মাথায় রক্ত দেখতে পায় । তা দেখে মা নিজের মনে গজগজ করতে শুরু করে । কাকা আর কাকিমা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল । কাকা মাকে এনিয়ে বিচার দিতে বলে । এনিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসা বেঁধে যায় । হঠাৎ ওরা মাকে মারতে শুরু করে । বাধা দিতে গেলে আমাকে এবং ভাইকেও ওরা মারধর করে । মাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সকাল থেকে মা যন্ত্রণায় থাকতে পারছিল না । খবর পেয়ে মাকে নিয়ে বাবা প্রথমে পিঁপড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় । সেখানে মাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি । এরপর বাবা মাকে মালদা শহরের নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে তারাও মাকে ভর্তি নেয়নি । শেষ পর্যন্ত মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মাকে মৃত ঘোষণা করেন । সামান্য ছাগলের জন্য ওরা আমার মাকে খুন করেছে । আমি ওদের ফাঁসি দাবি করছি ।”
এদিকে ধৃত চৈতন্য মণ্ডলের বক্তব্য, “বৌদিকে আমি মারিনি । বউদির হার্টের অসুখ ছিল । গ্রামের সবাই তা জানে । বৌদির ছাগলকে কে মেরেছে জানি না । সেদিন সন্ধেয় আমি বাড়ির চাতালে বসে ছিলাম । এই ঘটনায় বৌদি আমাকে দোষারোপ করে গালিগালাজ শুরু করে । পাশে থাকা আমার বউ তা নিয়ে প্রতিবাদ করলে বউদি আমার বউয়ের চুলের মুঠি ধরে মারপিট শুরু করে । ধস্তাধস্তিতে বউদি মাটিতে পড়ে যায় । বউদির মৃত্যুর সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই ।”
মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে আজ ধৃতদের মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে । গতকালই মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । তার রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে ।
আরও পড়ুন : Malda Gambling Controversy : মালদায় যুবকের দেহ উদ্ধারে জুয়ার আসরের যোগ ! সরব পরিবার