মালদা, 15 সেপ্টেম্বর: ঘটনাটা যে সত্যিই ঘটেছে, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না মালদার নাজিরপুর দ্বারাকানি গ্রামের বাসিন্দারা ৷ ছা-পোষা এই গ্রামের ছেলে হসনত শেখ নাকি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার (Al Qaeda) সঙ্গে যুক্ত ! ইতিমধ্য়েই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে (Alleged Al Qaeda Terrorist Arrest) ৷ পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁদের বাড়ির ছেলে কখনোই জঙ্গি হতে পারে না ৷ যদিও গ্রামেরই কয়েকজন জানিয়েছেন, কিছুদিন ধরেই হসনতের কথাবার্তায় অন্যরকম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল ! এমনকী, এলাকায় ফিরে তিনি নাকি অন্যদের মগজধোলাইয়েরও চেষ্টা করতেন ! তবে, এর পাশাপাশি এই ঘটনায় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ৷
মালদার (Malda) কালিয়াচকের (Kaliachak) সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাজিরপুর দ্বারাকানি গ্রাম ৷ জঙ্গি সন্দেহে ধৃত হসনত শেখের বাড়ি এই গ্রামেই ৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে যার দূরত্ব মাত্র আড়াই কিলোমিটার ৷ 23 বছরের হসনতের পড়াশুনা শুরু হয় গ্রামেরই একটি মাদ্রাসায় ৷ এরপর তাঁকে বর্ধমানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৷ সেখানে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মাদ্রাসায় তাঁকে ভর্তি করা হয় ৷ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বছর সাতেক আগে পড়াশোনার জন্যই উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর চলে যান হসনত ৷ দু'দিন আগে সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (Special Task Force) বা এসটিএফ (STF) ৷ তারপর ট্রানজিট রিম্যান্ডে আনা হয় কলকাতায় ৷
আরও পড়ুন: জঙ্গি সন্দেহে ধৃতদের 14 দিনের হেফাজতে পেল এসটিএফ
হসনতের বাবা পেশায় সবজি বিক্রেতা ৷ মা গৃহবধূ ৷ হসনত এই দম্পতির মেজো ছেলে ৷ হসনতের মা ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানান, "পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসেছিল ৷ ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে গিয়েছে ৷ ছেলের পড়াশোনার জন্য আমরাই টাকা পাঠাতাম ৷ কিন্তু সেই ছেলের সঙ্গে যে কী হল, তাকে কেন গ্রেফতার করা হল, কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ আমি শুধু এটাই জানতে চাই ৷ এখানকার কারও সঙ্গে আমার ছেলের কোনও ঝামেলা নেই ৷ পুলিশের ফোন পেয়ে আমার স্বামী কলকাতা গিয়েছেন ৷ আমার ভালো ছেলে কীভাবে এমন হয়ে গেল, বুঝে উঠতে পারছি না ৷ ছেলের গ্রেফতারির ব্যাপারে সাহারানপুর থেকে কেউ কিছু জানায়নি আমাদের ৷ আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই ৷"
আর হসনতের কাকিমা বলেন, "আমাদের ছেলে খুব ভালো ছিল ৷ ও ছোট থেকে পড়াশোনায় ভালো ৷ সাহারানপুরে পড়তে যায় ৷ কোনও দিন ওর কোনও দুর্নাম ছিল না ৷ এই দুর্নাম যে কীভাবে ওর গায়ে লেগে গেল, জানি না ! আমাদের ছেলেকে কেন ধরা হল, তার জবাব চাই ৷ ছেলেকে আমরা ফেরত চাই ৷" গ্রামের একাধিক বাসিন্দাও একই দাবি করেছেন ৷
অন্যদিকে, পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হসনতের সঙ্গে আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (Al-Qaeda in the Indian Subcontinent) বা আকিস ( AQIS)-এর যোগাযোগ থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে ৷ এমনকী, তাঁকে বিস্ফোরক তৈরিরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল ৷ আকিসের বাংলাদেশি সদস্যদের সঙ্গেও তাঁর যোগসূত্র রয়েছে ৷ বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্লগার অভিজিৎ রায় খুনের ঘটনাতেও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে হসনতের বিরুদ্ধে ! তাঁর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে একাধিকবার সুজাপুরে আসেন গোয়েন্দারা ৷ কিন্তু হসনতকে এখানে পাননি তাঁরা ৷ বদলে জানা যায়, ওই যুবক উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে রয়েছেন ৷ এরপরই তাঁকে ওই রাজ্য থেকে গ্রেফতার করা হয় ৷
উল্লেখ্য, গত 17 অগস্ট উত্তর 24 পরগনার খড়িবাড়ি গ্রাম থেকে আল-কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা আব্দুর রফিক সরকারকে ৷ জেরায় রফিক নাকি স্বীকার করেছেন, তিনি আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট-এর সদস্য ৷ তাঁর উপর সংগঠনের অনেক দায়িত্ব রয়েছে ৷ রফিকের সঙ্গেই ধরা পড়েছিলেন কাজি আহসানউল্লাহ ৷
প্রসঙ্গত, মাস ছয়েক আগে শেষবার গ্রামে এসেছিলেন হসনত ৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন হল, এলাকার ওই যুবক যদি সত্যিই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হন, তাহলে বিএসএফ, এনআইএ বা এসএসবি-র নজরে কেন বিষয়টি এল না ? অথচ, কলকাতা পুলিশের এসটিএফ সব তথ্য জোগাড় করে ফেলল ! এখানেই অনেকে দাবি করছেন, হসনতকে আসলে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ! সকলে অবশ্য এই যুক্তি মানতে চাইছেন না ৷