মালদা, ৩০ মে: যশের প্রভাব কেটে যাওয়ার 72 ঘণ্টা পরেও জলমগ্ন হয়ে রয়েছে মালদা শহরের বেশ কিছু এলাকা । গতকালই মালদার ইংরেজবাজারের কাছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনিভাবে নিকাশি বন্ধ করে চলতে থাকা মাছ ও মাখনা চাষ বন্ধ করতে একাধিক পুকুরের বাঁধ কেটে দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলাশাসক । আজ ওই এলাকার বাঁধ কেটে দিতে গেলে চাষিরা পুলিশের কাছে চব্বিশ ঘণ্টা সময় চান । সেই সময়ের মধ্যে মাছ-মাখনা চাষ তুলে বাঁধ কেটে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন চাষিরা । যশ পরবর্তী প্রভাবে বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে দফায় দফায় প্রবল বৃষ্টিপাতে কার্যত জলে ডুবে যায় পুরো শহর । পরদিন থেকেই জল নিকাশির জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাম্প বসানো হয় । কিন্তু তারপরও জলস্তর সেভাবে না কমায় গতকাল ইংরেজবাজারের বিডিও সৌগত চৌধুরী ও আইসি মদনমোহন রায়কে নিয়ে যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা পরিদর্শনে যান জেলাশাসক রাজর্ষী মিত্র ৷
তিনি দেখেন, বাংলাদেশে প্রবাহিত নালাগুলির কালভার্ট বন্ধ করে চলছে মাছ ও মাখনার চাষ । শহরের জল নিকাশির জন্য অবিলম্বে সেই বাধা মুক্ত করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক । আজ ওই এলাকায় থাকা নিকাশি ব্যবস্থার সমস্ত বাধা মুক্ত করতে যান ইংরেজবাজার থানার আইসি মদনমোহন রায় । সঙ্গে ছিলেন বিডিও সৌগত চৌধুরী ও বিএলআরও কিশোরকুমার বিশ্বাস । চাষিরা বিডিও ও আইসির কাছে আবেদন করেন, তাঁদের ২৪ ঘণ্টার সময় দেওয়ার জন্য । ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা মাছ ও মাখনা তুলে নিজেরাই পুকুরের বাঁধ কেটে দেবেন বলে আশ্বাস দেন । চাষিদের ক্ষতির কথা মাথায় রেখে সেই অনুরোধ মেনে নেন প্রশাসনিক কর্তারা । তবে আগামীকালের মধ্যে বাঁধ না কাটা হলে পুলিশ নিজে বাঁধ কেটে দেবে বলেও চাষিদের জানানো হয়েছে ।
ইংরেজবাজার থানার আইসি মদনমোহন রায় বলেন, “আমরা পুকুরের মালিকদের বলেছি, তাঁরা যেন নিজেরা বাঁধ কেটে জল নিকাশির জন্য সাহায্য করেন । আমরা তাঁদের আবেদন মেনে 24 ঘণ্টা সময় দিয়েছি । এরপরেও যদি অতিরিক্ত সময় লাগে তবে বিডিও, বিএলআরও-র সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে । যেভাবেই হোক, শহরের জল নিকাশির জন্য স্থায়ী সমাধান করব । বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের কড়া নির্দেশ রয়েছে । আমরা গতকাল থেকে বেশ কিছু জায়গায় নিকাশির জন্য কাজ করেছি । সেই কারণে শহরের জমা জল খানিকটা নেমেছে ।”
আরও পড়ুন...হড়পা বানে জলের তলায় নিশিন্দ্রা কাটানের রাস্তা
বিডিও সৌগত চৌধুরী বলেন, “এখনও দেখা যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে রয়েছে । বিভিন্ন পুকুরের বাঁধ দেওয়াতে এই সমস্যা হয়েছে । আমরা পুকুরের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি । তাঁদের একদিন সময় দেওয়া হয়েছে । এর মধ্যে যদি ওঁরা কাজ না করেন, তবে আমাদের সেই কাজ করতে হবে। যাঁদের এই এলাকায় চাষের অনুমতি নেই, তা সত্ত্বেও জল আটকে তাঁরা চাষ করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।”
বিএলআরও কিশোরকুমার বিশ্বাস বলেন, “আমরা এই এলাকায় এসে দেখি পুরো এলাকায় জল জমে রয়েছে । এখন সেই জলস্তর খানিকটা নেমেছে । শহরের জল নিকাশির স্থায়ী সমাধানের জন্য জেলাশাসকের নির্দেশ এসেছে । এখানে যাতে আর জল জমা না হয় সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে । আমি নিজে এই এলাকার জমি সংক্রান্ত আইনগত সমস্ত বিষয় দেখছি । স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি যাঁরা জমি লিজ নিয়েছেন, তাঁদের বলা হয়েছে অবিলম্বে পুকুরের বাঁধ কেটে জল নিকাশির ব্যবস্থা করতে হবে । অন্যথায় আইন অনুযায়ী তাঁদের লিজ বাতিল করা হবে । পাশাপাশি এই এলাকায় সকলের মাছ কিংবা মাখনা চাষের অনুমতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে। সমস্ত নথিপত্র দেখার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।”