মালদা, 21 নভেম্বর: বেকার সমস্যা মেটাতে প্রয়োজন আরও বেশি শিল্পের ৷ সেকথা অস্বীকার করেন না কেউ ৷ সেই শিল্প নিয়ে বলতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) বলেছিলেন কাশফুল আর কচুরিপানার কথা ৷ এ নিয়ে চর্চা কম হয়নি ৷ সোশাল মিডিয়ায় ট্রলও হয়েছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ৷ কিন্তু তাঁর সেই কথাকেই এবার বাস্তবে রূপ দিয়েছে মালদার একটি স্কুলের ক্লাস নাইনের দুই ছাত্র ৷
কচুরিপানা দিয়ে বানানো তাদের ব্যাগ রাজ্য বিজ্ঞান মেলায় প্রশংসিত হয়েছে ৷ এবার তারা নিজেদের তৈরি ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে ৷ গুজরাতের আমেদাবাদে আয়োজিত জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসের আসরের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কথা তারা দেশের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় ৷
মালদা শহরের নজরুল সরণির বাসিন্দা প্রতীক সাহা ৷ মালদা টাউন হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে ৷ সে'ই কচুরিপানা দিয়ে ব্যাগ (Water Hyacinth Bag) তৈরি করে আমেদাবাদ যাওয়ার ব্যাগ গোছাচ্ছে ৷ এই কাজে তাকে আগাগোড়া সহযোগিতা করেছে সহপাঠী তুষার সাহা ৷ শেষ পর্যন্ত এসেছে সফলতা ৷ স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, সায়েন্স কমিউনিটি ফোরাম ও শিশু বিজ্ঞানী তৈরির উদ্দেশ্যে প্রতি বছরই বিভিন্ন স্কুল কিছু প্রকল্প তৈরি করে ৷ এর মধ্যে বাছাই করা প্রকল্পগুলিকে রাজ্যস্তরে পাঠানো হয় ৷ এবার কলকাতার বিজ্ঞান মেলায় 735টি স্কুলের প্রকল্প জমা পড়েছিল ৷ এর মধ্যে 30টি প্রকল্প জাতীয় স্তরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে ৷ তাতে জায়গা পেয়েছে প্রতীক-তুষারের তৈরি কচুরিপানার ব্যাগও (Malda students make bags with water hyacinth) ৷
জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে রীতিমতো উত্তেজিত প্রতীক ৷ সেই এই প্রকল্পের লিডার ৷ প্রতিদিন নিজের ঘরে শুকিয়ে যাওয়া কচুরিপানার শক্তি পরীক্ষায় ব্যস্ত সে ৷ সঙ্গী তুষার ৷ ইটিভি ভারত-কে প্রতীক বলল, "কচুরিপানা পচনশীল জিনিস ৷ জলাশয়ে জন্মায়, সেখানেই মারা যায় ৷ সূর্যের আলো সরাসরি সে জলের ভিতর পৌঁছোতে দেয় না ৷ এতে জলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় ৷ ফলে জলজ প্রাণীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে ৷ গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা কচুরিপানাকে সার হিসাবে ব্যবহার করেন ৷ এখানেই আমাদের মাথায় আসে, শুধুই কি সার হিসাবে কচুরিপানা ব্যবহার হবে ! নাকি একে অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যায় ৷ আমাদের মাথায় আসে, প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে যদি কচুরিপানাকে ব্যবহার করা যায়, তবে খুব ভালো হয় ৷ এতে যেমন জলাশয়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ হবে, তেমনই প্লাস্টিক দূষণও কমবে ৷ কচুরিপানা হস্তশিল্পে ব্যবহার করে অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থাও করা যাবে ৷"
আরও পড়ুন: চপের পর কচুরিপানা শিল্প ! শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের পরামর্শ মমতার
প্রতীক আরও বলে, "প্রথমে আমরা জলাশয় থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করেছি ৷ তার আগা আর গোড়া কেটে ফেলে শুধু মধ্যের অংশ ব্যবহার করেছি ৷ এরপর জল না শুকোনো পর্যন্ত তাকে রোজে শুকিয়েছি ৷ তারপর স্কুলের ল্যাবে নিয়ে গিয়ে সেগুলিকে আলাদা আলাদা করে ব্লিচিং পাউডার, সোডিয়াম মেটাবাই সালফাইড, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সঙ্গে 24 ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখি ৷ সেগুলিকে রোদে 24 ঘণ্টা শুকোনোর পর 14 দিন ছায়ায় শুকিয়ে নিয়েছি ৷ এরপর সেই কচুরিপানার শক্তি পরীক্ষা করেছি ৷ দেখা গেল, ব্লিচিং পাউডারে ভেজানো কচুরিপানা কোনও কাজে আসবে না ৷ তার কোনও শক্তিই নেই ৷ কোনও রাসায়নিক ব্যবহার না-করা কচুরিপানা প্রায় ন'কিলো ওজন বহনে সক্ষম ৷ আর ক্যালসিয়াম কার্বোনেটে ভিজিয়ে রাখা কচুরিপানা 13 কিলো 700 গ্রাম ওজন নিতে সক্ষম ৷ এই কাজে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং গাইড টিচার জিকো দাস আমাদের খুব সাহায্য করেছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী কচুরিপানা নিয়ে শিল্পের কথা বলেছিলেন ৷ আমরা সেটা চেষ্টা করেছি ৷ আগামী 27-31 ডিসেম্বর গুজরাতের আমেদাবাদে জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের আসরে আমরা এই প্রকল্প দেশের সামনে তুলে ধরব ৷"
আরও পড়ুন: স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্মীদের সাহায্যে কাশফুলের পণ্য তৈরির উদ্যোগ সাঁকরাইলে ব্লক প্রশাসনের
এই প্রকল্পের গাইড টিচার তথা মালদা টাউন হাইস্কুলের রয়াসন বিষয়ের শিক্ষক জিকো দাস বলেন, "2018 সাল থেকেই আমরা এই প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছি ৷ সেবারও এই প্রোজেক্ট রাজ্য স্তরে পাঠিয়েছিলাম ৷ কিন্তু সফলতা পায়নি ৷ এবার রাজ্য স্তরে প্রোজেক্টটি সফল হয়েছে ৷ ছাত্ররা ডিসেম্বরে গুজরাটে আয়োজিত জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে এই প্রোজেক্ট প্রেজেন্ট করবে ৷ এটা অনেক বড় বিষয় ৷ এবারের প্রতিযোগিতার বিষয়ই ছিল পরিবেশ নিয়ে ৷ তাই এবার এই প্রোজেক্টকে আমরা পেশ করেছি ৷ এই প্রকল্প বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উপকারী হবে ৷ পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নও ঘটাতে পারবে ৷ তবে এ নিয়ে আমাদের আরও পরীক্ষার প্রয়োজন ৷ মুখ্যমন্ত্রী কচুরিপানা নিয়ে শিল্পের কথা বলেছেন ৷ তাঁর সেই বক্তব্যকে আমরা জাতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠা দিতে চাই ৷ যদিও আমরা 2018 সাল থেকেই এই প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছি ৷"