মালদা, 28 জুলাই: দুই মহিলাকে মারধরের ঘটনায় চার পুলিশ আধিকারিককে 'ক্লোজ' করার নির্দেশ দিয়েছেন মালদার পুলিশ সুপার ৷ সম্প্রতি মালদার বামনগোলার পাকুয়াহাটে দুই মহিলার উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ৷ তাঁদের বিবস্ত্র করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ৷ তাতেই পুলিশের চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে ৷ বৃহস্পতিবার রাতে বামনগোলা থানার আইসি জয়দীপ চক্রবর্তী, পাকুয়াহাট ফাঁড়ির ওসি রাকেশ বিশ্বাস, বামনগোলা থানার সাব ইনস্পেক্টর সঞ্জয় সরকার এবং পাকুয়াহাট ফাঁড়ির এএসআই মিলনকুমার সরকারকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার ৷ এখনও পর্যন্ত পাকুয়াহাটে নারী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে মালদা পুলিশ ৷ ধৃতদের মধ্যে তিনজন মহিলা ৷ আপাতত সবাই পুলিশি হেফাজতে ৷
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লি থেকে উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানান, শুধু এই চারজন নয়, একাধিক পুলিশকর্মী এই ঘটনায় জড়িত রয়েছেন ৷ পুলিশ সুপার নিজেও তাঁর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না ৷ মালদা পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে সাংসদ বলেন, " দুই মহিলাকে পুলিশ উদ্ধার করতে এলেও, তাঁদের তিনশো মিটার বিবস্ত্র অবস্থায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, পুলিশ ফাঁড়িতে ওই অবস্থায় তাঁদের 2 ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়, চিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি ।" সবার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন বিজেপি নেতা খগেন মুর্মু ৷
গত 18 জুলাই মালদার পাকুয়াহাটে চোর সন্দেহে দুই মহিলাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ৷ এর একটি ভিডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে ৷ তাতে দেখা যায়, ওই মহিলাকে যারা মারধর করছে, তাদের বেশিরভাগই মহিলা ৷ শুধু চড়-থাপ্পর নয়, জুতো ও লাঠি দিয়েও দুই মহিলাকে মারা হয়েছে ৷ এই সময় উপস্থিত সাধারণ মানুষের সামনেই একসময় সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে পড়েন এক মহিলা ৷ তাতেও মারধর বন্ধ হয়নি ৷ ওই মহিলার সম্ভ্রম রক্ষা করতে মার খেতে খেতেও অন্য মহিলা তাঁকে জড়িয়ে ধরেন ৷ এই পরিস্থিতিতেও তাঁদের উপর মারধর চলতে থাকে ৷ ওই ভিডিয়োয় ধরা পড়ে, দুই সিভিক ভলান্টিয়ার উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন ৷ তবে তাঁদের কথা কেউ শুনছে না ৷ এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশকর্মীরা থাকলেও তাঁরা নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: আটদিনের মাথায় মুক্তি, পাকুয়াহাটের দুই নির্যাতিতা বাড়ি ফিরলেন
এরপর 22 জুলাই সেই ভিডিয়ো ক্লিপটি নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য ৷ এই ইস্যুতে তিনি রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷ পরে ওই ক্লিপটি টুইট করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতা ৷ নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশও ৷
সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই নির্যাতিতা মানিকচকের বাসিন্দা ৷ তাঁরা বিভিন্ন হাটে লেবু আর শুঁটকি মাছ বিক্রি করেন ৷ 18 তারিখও তাঁরা পাকুয়াহাটে লেবু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন ৷ সেখানে চোর সন্দেহে তাঁদের মারধর করে আমজনতা ৷ ঘটনাস্থলের 100 মিটার দূরেই রয়েছে পাকুয়াহাট পুলিশ ফাঁড়ি ৷ এদিকে ঘণ্টাখানেক ধরে তাঁদের উপর নির্যাতন চললেও পুলিশ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ ৷
আরও পড়ুন: পাকুয়াহাট নিয়ে দিল্লিতে নাটক করছেন খগেন মুর্মু, কটাক্ষ মালদা তৃণমূলের
এই ঘটনায় আদালতের দ্বারস্থ হয় বিজেপি ৷ 25 জুলাই রাতে জেলা আদালতের মুখ্য দায়রা বিচারক মৃণালকান্তি মণ্ডল দুই মহিলাকে নিঃশর্ত জামিন দেন ৷ পরদিন তাঁরা ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে যান ৷ পুলিশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাননি তাঁরা ৷ তবে ঘটনার প্রতিবাদে দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবিতে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে ধরনায় বসেন উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলার দাবিতে 26 ঘণ্টা ধরে ধরনা চালালেও পুলিশের উচ্চ আধিকারিক তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি বলে অভিযোগ ৷
লোকসভার বাদল অধিবেশন শুরুর আগে বিষয়টি নিয়ে সংসদে গান্ধি মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখান বাংলার বিজেপি সাংসদরা ৷ পাকুয়াহাটে মহিলা নির্যাতনের ঘটনাটি লোকসভা অধিবেশনের জিরো আওয়ারে আলোচনা হোক ৷ এই অনুরোধ জানিয়ে লোকসভার ডিরেক্টর জেনারেলকে চিঠি দেন খগেন মুর্মু ৷ পাশাপাশি তিনি পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে চিঠি লেখেন ৷
আরও পড়ুন: পাকুয়াহাট-কাণ্ডে পুলিশ সুপারের রিপোর্ট তলব করল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
পুলিশের এই পদক্ষেপের পর দিল্লি থেকে সাংসদ খগেন মুর্মু ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বলেন, "পাকুয়াহাটের ঘটনা নিয়ে আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় মহিলা কমিশনে অভিযোগ করেছি ৷ 24 ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও পুলিশ সুপার আমাদের সঙ্গে দেখা না-করায় তাঁর বিরুদ্ধে লোকসভায় প্রিভিলেজ মোশন নিয়ে এসেছি ৷ লোকসভায় উপস্থিত হয়ে তিনি জবাব দেবেন ৷" তাঁর দাবি, এখন চাপে পড়ে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে পুলিশ সুপার চার পুলিশকর্মীকে ক্লোজ করতে বাধ্য হয়েছেন ৷