ETV Bharat / state

পলুপোকার ডিমে বরাদ্দ বন্ধ রাজ্যের, সংকটে মালদার রেশম শিল্প

ক্ষতির মুখে মালদার রেশম শিল্প ৷ টাকার অভাবে রাজ্যের তরফে জেলার রেশম চাষিদের কয়েক মাস ধরে পলুপোকার ডিম সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ এদিকে এগিয়ে আসছে এই চাষের মূল দু'টি মরশুম ৷ সরকারি সহযোগিতা না পেয়ে ঘুম উড়েছে জেলার অসংখ্য রেশম চাষিদের ৷

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Oct 16, 2020, 10:54 AM IST

মালদা, 16 অক্টোবর : কোরোনা আবহে দুর্গাপুজোর জন্য পুজো কমিটিগুলিকে 50 হাজার টাকা করে বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার ৷ ইতিমধ্যে থানার মাধ্যমে তার চেক বিলিও করা হয়েছে ৷ কিন্তু টাকার অভাবে রাজ্যের তরফে জেলার রেশম চাষিদের কয়েক মাস ধরে পলুপোকার ডিম সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ এদিকে এগিয়ে আসছে এই চাষের মূল দু'টি মরশুম ৷ সরকারি সহযোগিতা না পেয়ে ঘুম উড়েছে জেলার অসংখ্য রেশম চাষির ৷ এই পরিস্থিতিতে জেলা রেশম বিভাগ জানিয়ে দিয়েছে, সরকার এই খাতে এখনও কোনও বরাদ্দ করেনি ৷ তাই আগামী অন্তত দু'টি মরশুমে চাষিদের হাইব্রিড পলুপোকার ডিম সরবরাহ করা সম্ভব নয় ৷ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, এনিয়ে তিনি ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন ৷ আজ তিনি ফের জেলাশাসকের মাধ্যমে ওই দপ্তরে চিঠি পাঠাতে চলেছেন ৷

কোরোনা আবহে গত মার্চ থেকেই প্রবল সমস্যায় পড়েছেন মালদা জেলার কালিয়াচক ও চাঁচলের অসংখ্য রেশম চাষি ৷ জেলার 15টি ব্লকের মধ্যে 11টি ব্লকেই রেশম চাষ করা হয় ৷ প্রায় 65 হাজার পরিবার প্রত্যক্ষভাবে রেশম চাষ করে ৷ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই চাষের সঙ্গে জড়িত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ৷ আগে আরও বেশি মানুষ এই চাষের সঙ্গে জড়িত ছিল ৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সরকারের অসহযোগিতায় ধীরে ধীরে এই চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন রেশম চাষিরা ৷ গত মার্চ মাস থেকে চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে ৷ সরকারের তরফে উন্নত মানের পলুপোকার ডিম সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ ৷ স্থানীয় ডিমের উপরেই সবাইকে নির্ভর করতে হচ্ছে ৷ কিন্তু সেটাও পর্যাপ্ত নয় ৷ এদিকে বছরে যে ছ’টি রেশম চাষের মরশুম, তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো উৎপাদন হয় অগ্রহায়ণ ও ফাল্গুন মরশুমে ৷ অগ্রহায়ণ মরশুমের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই জেলার 21 হাজার একর জমিতে তুঁতপাতার চাষ করেছেন কৃষকরা ৷ সেই পাতা এখন প্রায় নষ্টের মুখে ৷

photo
পলুপোকার ডিম সরবরাহ বন্ধ করেছে রাজ্য, সংকটে মালদার রেশম শিল্প

কালিয়াচকের গয়েশবাড়ি এলাকার রেশম চাষি জামসেদ আলি জানাচ্ছেন, "লকডাউন শুরুর পর থেকে রেশম দপ্তর আমাদের পলুপোকার ডিম দিচ্ছে না ৷ ফলে আমরা তখন থেকেই সমস্যায় রয়েছি ৷ এরই মধ্যে দপ্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী অগ্রহায়ণ মরশুমেও তারা ডিম দেবে না ৷ এই অবস্থায় আমরা খাব কী করে? আমরা পুরোপুরি এই চাষের উপরেই নির্ভরশীল ৷ দিদির কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেন আমাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা নেন ৷” একই বক্তব্য বৈষ্ণবনগরের সঞ্জয় মণ্ডল, চাঁচলের রামপুরের তাজুল ইসলাম, জালালপুরের ফজলুল হকদেরও ৷ প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, বেসরকারি সংস্থা থেকে পলুপোকার ডিম কেনার সামর্থ্য তাঁদের নেই ৷ এই পরিস্থিতিতে এই চাষ থেকে সরে যাওয়া ছাড়া তাঁদের কিছু করার নেই ৷

photo
সংকটে মালদার রেশম শিল্পীরাও

জেলা রেশম বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সন্তোষ কুমার রেশম চাষিদের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, “এই মরশুমে আমরা চাষিদের অল্প পরিমাণে বাই ভোল্টাইন (সাধারণ মান) ডিম দিতে পারব ৷ তবে হাইব্রিড (উন্নত প্রজাতি) ডিম দিতে পারব না ৷ কারণ, আমাদের কাছে টাকা নেই ৷ সরকার এই খাতে এখনও কোনও অর্থ বরাদ্দ করেনি ৷ কবে সেই অর্থ বরাদ্দ হবে জানা নেই ৷ অর্থের অভাবে এবার আমরা বাইরে থেকে ডিমের গুটি আনতে পারিনি ৷”

সংকটে মালদার রেশম শিল্প

রাজ্য সরকার যখন উৎসবের জন্য অর্থ বিলি করছে, তখন রেশম চাষের জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধ কেন? এনিয়ে প্রশ্ন করলে মালদা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এটিএম রফিকুল হোসেন বলেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরেই দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর আমায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত দপ্তরে অর্থ বরাদ্দ হয়নি ৷ তাঁরা এনিয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি করেছেন ৷ আমিও দিন সাতেক আগে দপ্তরের জয়েন্ট সেক্রেটারিকে চিঠি করেছি ৷ চাষিদের জন্য বকেয়া টাকা বরাদ্দের আবেদন জানিয়েছি ৷ রেশম চাষিদের ঘরের টাকাও আটকে ছিল ৷ সেই টাকা সম্প্রতি এসেছে ৷ সামনেই রেশম চাষের সবচেয়ে বড় দুটি মরশুম ৷ মূলত বেঙ্গালুরু, ওডিশা, দার্জিলিং থেকে পলুর ডিম আসে ৷ কিন্তু টাকা না থাকায় সেই ডিম আনা যাচ্ছে না ৷ এনিয়ে আমি জেলাশাসকের সঙ্গেও কথা বলেছি ৷ শুক্রবার (আজ) ফের তাঁর সঙ্গে দেখা করব ৷ শুক্রবারই জেলাশাসকের মাধ্যমে জয়েন্ট সেক্রেটারিকে ফের চিঠি পাঠানো হবে ৷ সরকারি সহায়তা না পেলে জেলার রেশম চাষিরা কার্যত মারা যাবেন ৷”

মালদা, 16 অক্টোবর : কোরোনা আবহে দুর্গাপুজোর জন্য পুজো কমিটিগুলিকে 50 হাজার টাকা করে বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার ৷ ইতিমধ্যে থানার মাধ্যমে তার চেক বিলিও করা হয়েছে ৷ কিন্তু টাকার অভাবে রাজ্যের তরফে জেলার রেশম চাষিদের কয়েক মাস ধরে পলুপোকার ডিম সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ এদিকে এগিয়ে আসছে এই চাষের মূল দু'টি মরশুম ৷ সরকারি সহযোগিতা না পেয়ে ঘুম উড়েছে জেলার অসংখ্য রেশম চাষির ৷ এই পরিস্থিতিতে জেলা রেশম বিভাগ জানিয়ে দিয়েছে, সরকার এই খাতে এখনও কোনও বরাদ্দ করেনি ৷ তাই আগামী অন্তত দু'টি মরশুমে চাষিদের হাইব্রিড পলুপোকার ডিম সরবরাহ করা সম্ভব নয় ৷ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, এনিয়ে তিনি ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন ৷ আজ তিনি ফের জেলাশাসকের মাধ্যমে ওই দপ্তরে চিঠি পাঠাতে চলেছেন ৷

কোরোনা আবহে গত মার্চ থেকেই প্রবল সমস্যায় পড়েছেন মালদা জেলার কালিয়াচক ও চাঁচলের অসংখ্য রেশম চাষি ৷ জেলার 15টি ব্লকের মধ্যে 11টি ব্লকেই রেশম চাষ করা হয় ৷ প্রায় 65 হাজার পরিবার প্রত্যক্ষভাবে রেশম চাষ করে ৷ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই চাষের সঙ্গে জড়িত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ৷ আগে আরও বেশি মানুষ এই চাষের সঙ্গে জড়িত ছিল ৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সরকারের অসহযোগিতায় ধীরে ধীরে এই চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন রেশম চাষিরা ৷ গত মার্চ মাস থেকে চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে ৷ সরকারের তরফে উন্নত মানের পলুপোকার ডিম সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ ৷ স্থানীয় ডিমের উপরেই সবাইকে নির্ভর করতে হচ্ছে ৷ কিন্তু সেটাও পর্যাপ্ত নয় ৷ এদিকে বছরে যে ছ’টি রেশম চাষের মরশুম, তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো উৎপাদন হয় অগ্রহায়ণ ও ফাল্গুন মরশুমে ৷ অগ্রহায়ণ মরশুমের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই জেলার 21 হাজার একর জমিতে তুঁতপাতার চাষ করেছেন কৃষকরা ৷ সেই পাতা এখন প্রায় নষ্টের মুখে ৷

photo
পলুপোকার ডিম সরবরাহ বন্ধ করেছে রাজ্য, সংকটে মালদার রেশম শিল্প

কালিয়াচকের গয়েশবাড়ি এলাকার রেশম চাষি জামসেদ আলি জানাচ্ছেন, "লকডাউন শুরুর পর থেকে রেশম দপ্তর আমাদের পলুপোকার ডিম দিচ্ছে না ৷ ফলে আমরা তখন থেকেই সমস্যায় রয়েছি ৷ এরই মধ্যে দপ্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী অগ্রহায়ণ মরশুমেও তারা ডিম দেবে না ৷ এই অবস্থায় আমরা খাব কী করে? আমরা পুরোপুরি এই চাষের উপরেই নির্ভরশীল ৷ দিদির কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেন আমাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা নেন ৷” একই বক্তব্য বৈষ্ণবনগরের সঞ্জয় মণ্ডল, চাঁচলের রামপুরের তাজুল ইসলাম, জালালপুরের ফজলুল হকদেরও ৷ প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, বেসরকারি সংস্থা থেকে পলুপোকার ডিম কেনার সামর্থ্য তাঁদের নেই ৷ এই পরিস্থিতিতে এই চাষ থেকে সরে যাওয়া ছাড়া তাঁদের কিছু করার নেই ৷

photo
সংকটে মালদার রেশম শিল্পীরাও

জেলা রেশম বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সন্তোষ কুমার রেশম চাষিদের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, “এই মরশুমে আমরা চাষিদের অল্প পরিমাণে বাই ভোল্টাইন (সাধারণ মান) ডিম দিতে পারব ৷ তবে হাইব্রিড (উন্নত প্রজাতি) ডিম দিতে পারব না ৷ কারণ, আমাদের কাছে টাকা নেই ৷ সরকার এই খাতে এখনও কোনও অর্থ বরাদ্দ করেনি ৷ কবে সেই অর্থ বরাদ্দ হবে জানা নেই ৷ অর্থের অভাবে এবার আমরা বাইরে থেকে ডিমের গুটি আনতে পারিনি ৷”

সংকটে মালদার রেশম শিল্প

রাজ্য সরকার যখন উৎসবের জন্য অর্থ বিলি করছে, তখন রেশম চাষের জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধ কেন? এনিয়ে প্রশ্ন করলে মালদা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এটিএম রফিকুল হোসেন বলেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরেই দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর আমায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত দপ্তরে অর্থ বরাদ্দ হয়নি ৷ তাঁরা এনিয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি করেছেন ৷ আমিও দিন সাতেক আগে দপ্তরের জয়েন্ট সেক্রেটারিকে চিঠি করেছি ৷ চাষিদের জন্য বকেয়া টাকা বরাদ্দের আবেদন জানিয়েছি ৷ রেশম চাষিদের ঘরের টাকাও আটকে ছিল ৷ সেই টাকা সম্প্রতি এসেছে ৷ সামনেই রেশম চাষের সবচেয়ে বড় দুটি মরশুম ৷ মূলত বেঙ্গালুরু, ওডিশা, দার্জিলিং থেকে পলুর ডিম আসে ৷ কিন্তু টাকা না থাকায় সেই ডিম আনা যাচ্ছে না ৷ এনিয়ে আমি জেলাশাসকের সঙ্গেও কথা বলেছি ৷ শুক্রবার (আজ) ফের তাঁর সঙ্গে দেখা করব ৷ শুক্রবারই জেলাশাসকের মাধ্যমে জয়েন্ট সেক্রেটারিকে ফের চিঠি পাঠানো হবে ৷ সরকারি সহায়তা না পেলে জেলার রেশম চাষিরা কার্যত মারা যাবেন ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.