মালদা, 30 সেপ্টেম্বর : গ্রাম থেকে জল নিকাশির দাবিতে পথ অবরোধ গ্রামবাসীদের ৷ পুলিশের ধস্তাধস্তি ৷ রতুয়া 2 ব্লকের আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের শিমলা গ্রামের ঘটনা৷ ইচিমধ্যেই পুলিশ চারজনকে আটক করেছে৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থানে যান BDO৷ এই ঘটনায় তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে গ্রামবাসীরা৷ পালটা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী৷ তিনি বলেন, এটা দলেরই একাংশের চক্রান্ত ৷
শিমলা গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু ঘোষ বলেন, "তিনমাস আগে থেকেই গোটা গ্রাম জলে ডুবে রয়েছে৷ নিকাশির কোনও ব্যবস্থা নেই৷ পরিস্থিতি বুঝে শেষ পর্যন্ত আমার জমিতে নালা কেটে সেই জল কালিন্দী নদীতে ফেলেছিলাম ৷ কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফের গ্রাম জলমগ্ন ৷ জল নিষ্কাশনের জন্য BDO-কে বার বার আবেদন জানিয়েছি ৷ কিন্তু তিনি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না৷ তাই গ্রাম থেকে জমা জল নিষ্কাশনের দাবিতে গতকাল আমরা পথ অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি৷" আরেক গ্রামবাসী নয়নতারা ঝা বলেন, "গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে৷ ঘরের শতছিদ্র চালা দিয়ে ভিতরে জল পড়ছে৷ বিছানাপত্র সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ অথচ এখনও পর্যন্ত একটা ত্রিপল পাওয়া যাচ্ছে না৷ আমরা নিজেদের ন্যায্য ভাতা পাচ্ছি না৷ প্রধানমন্ত্রী রোজগার যোজনার টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে৷ এখানে যারা বড়লোক, তারাই সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে৷ তারাই কি শুধু ভোট দেয়? প্রশাসন চাইলে আমার ঘরে তদন্ত করতে পারে ৷ আমি 4-5 দিন BDO-র কাছে গিয়েছি৷ কিন্তু তিনি শুধু বৈঠকে ব্যস্ত থাকেন৷ এবার আমরাও ভোট দেব না বলে ঠিক করেছি৷"
গ্রাম থেকে জমা জল নিষ্কাশন ও গরিব মানুষের আচ্ছাদনের দাবিতে গতকাল সকাল 8টা থেকে শোভানগর-পুখুরিয়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করে শিমলা গ্রামের বাসিন্দারা৷ তাদের দাবি, ঘটনাস্থানে আসতে হবে BDO-কে ৷ দ্রুত গ্রাম থেকে জমা জল বের করার ব্যবস্থা করতে হবে৷ যাদের ভাঙা ঘরের ছাদ দিয়ে জল পড়ছে, তাদের প্রত্যেককে ত্রিপলের ব্যবস্থা করতে হবে৷ অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে যায় পুখুরিয়া থানার পুলিশ৷ অবরোধ তুলে নিতে গ্রামবাসীদের আবেদন জানান পুলিশকর্মীরা৷ কিন্তু কেউ সেই আবেদনে কান দেয়নি৷ বেলা 1টা নাগাদ বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন পুখুরিয়া ফাঁড়ির CO ঝোটন প্রসাদ৷ তিনিও গ্রামবাসীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার নিষ্ফলা আবেদন জানান৷ আসেন রতুয়া 2-এর জয়েন্ট BDO৷ কিন্তু গ্রামবাসীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকে৷ দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলতে থাকায় ওই রাস্তায় প্রবল যানজট দেখা দেয়৷ অবশেষে OC জোর করে রাস্তায় দেওয়া বাঁশের ব্যারিকেড তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশ সেখান থেকে চার গ্রামবাসীকে আটক করে৷ এরপরেই অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ৷ সব মিটে যাওয়ার পর সেখানে যান BDO সোমনাথ মান্না৷
তিনি বলেন, "আজই পাম্প ব্যবহার করে গ্রাম থেকে জমা জল কালিন্দী নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ গ্রামে স্থায়ী নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতকে পরবর্তী অর্থ কমিশনে প্রকল্প তৈরি করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ সেই প্রকল্প জমা পড়লেই শিমলা গ্রামে স্থায়ী নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে৷"
এদিকে রতুয়া 2 পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী সুমিত্রা সরকার বলেন, "বৃষ্টির জন্যই শিমলা গ্রামে জল জমে রয়েছে৷ ওই গ্রামে নিকাশি ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ ও BDo-র সঙ্গে আমার কথা হয়েছে৷ তাঁদের ওই গ্রামে গিয়ে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা ছিল৷ এটা স্কিমেও ধরা হয়েছে৷ তবে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা সঠিক নয়৷ খোঁজ নিয়ে দেখুন, আমাকে চাপে ফেলতে ওই গ্রামের তৃণমূলের লোকজনই ইচ্ছাকৃতভাবে এসব অভিযোগ তুলছে৷"