মালদা, 3 ফেব্রুয়ারি: বাংলা-বিহার সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রামে পুলিশ আউট-পোস্ট । শীতের রাতে সেখানে বাজছে ডিজে । পুলিশকর্মীদেরও নাচতে দেখা যাচ্ছে । অন্য সময় হলে পুলিশের এই কাজে নিয়ে শোরগোল উঠত । কিন্তু বুধবার রাতের চিত্র ছিল একটু আলাদা । ডিজে বাজিয়ে পুলিশের উদ্যোগে বিয়ে হল অনাথ তরুণী সোনাদেবী সিং-এর (marriage ceremony) ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের কাটিহার জেলার বাসিন্দা সোনাদেবী সিং কুমেদপুর এলাকার একটি মাখনা খই তৈরির কারখানায় কাজ করেন । সেই কারখানাতেই থাকতেন তিনি । ২৩ বছরের সোনাদেবীর বাবা-মা অনেকদিন আগে মারা গিয়েছেন । তিন কূলে তাঁর কেউ নেই । ওই একই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন বিহারেরই দারভাঙ্গা জেলার শংকর সাহানি নামে ২৫ বছরের এক যুবক । মাস ছয়েক ধরে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় । ঘনিষ্ঠতাও বাড়ে । অনাথ সোনাদেবী প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন। তাঁকে বিয়ে করার জন্য শংকরকে বারবার বলতে থাকেন । বিয়েতে শংকর রাজি হচ্ছিলেন না । অবশেষে কুমেদপুর পুলিশ আউট পোস্টে ছুটে আসেন সোনাদেবী । ঘটনাটি পুলিশকর্মীদের জানান । এরপর পুলিশ ধরে আনে শংকরকে। জেরায় সোনাদেবীর সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকারও করেন শংকর । এরপরেই দু’জনের বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় পুলিশ ।
সিঁদুর দান থেকে মালাবদল সব রীতি মেনে এলাকার এক কালী মন্দিরে সোনাদেবী আর শংকরের চার হাত এক হয় (police arranged marriage ceremony) । এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয়কুমার দাস-সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা । ডিজে বাজিয়ে মিষ্টি মুখ করে সোনাদেবীর বিয়ে দেন তাঁরা । হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয়কুমার দাস জানিয়েছেন, ওই তরুণীর বাবা-মা নেই । একেবারে অনাথ । তিনি কাঁদতে কাঁদতে কুমেদপুর আউটপোস্টে এসে গোটা ঘটনা জানান । ওই যুবকও এই সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন । এরপরেই পুলিশের উদ্যোগে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল ।
আরও পড়ুন: বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ির সামনে ধরনা তরুণীর
পুলিশের এই অভিভাকের ভূমিকায় খুব খুশি এলাকার বাসিন্দারা । স্থানীয় আবদুল মতিন বলেন, “এই যুবক-যুবতির মধ্যে গত ছ’মাস ধরে সম্পর্ক ছিল । কিন্তু ছেলেটি মেয়েটিকে বিয়ে করছিল না । মেয়েটি পুলিশকে সব জানায় । ওর বাবা-মা কেউ নেই । একেবারে অনাথ । শেষ পর্যন্ত পুলিশই দু’জনের বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় । সব রীতি মেনে দু’জনের বিয়ে দিয়েছে পুলিশ । এমন বিয়ে এর আগে হরিশ্চন্দ্রপুরে হয়নি । পুলিশের এই উদ্যোগকে আমরা সবাই সাধুবাদ জানাচ্ছি।” এলাকার আরও এক বাসিন্দা সামিউল আখতার জানান, “ছেলেটি দু’তিন মাস ধরে নাকি মেয়েটির সঙ্গেই থাকত। কিন্তু মেয়েটিকে সে বিয়ে করছিল না । মেয়েটি পুলিশকে সব কিছু জানায় । এরপর পুলিশই দু’জনের বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় । পুলিশ দেখে সবাই ভয় করে, কিন্তু পুলিশও যে কখনও কখনও অভিভাবকের মতো কাজ করে তা এই ঘটনা প্রমাণ করল ।”