ETV Bharat / state

Flood in Malda: ত্রাণশিবিরে থাকায় চুরি গিয়েছিল সব, তাই জেলাশাসকের আবেদনেও এবার ঘর ছাড়তে নারাজ বানভাসিরা

Flood in Malda: 2017 সালে বন্যার সময় ত্রাণশিবির থেকে বাড়ি ফিরে মানুষজন দেখেন তাঁদের সর্বস্ব চুরি গিয়েছে ৷ তাই এ বার জেলাশাসকের আবেদনে ঘর ছাড়তে নারাজ বানভাসিরা ৷

Flood in Malda
মালদায় বন্যা
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 3, 2023, 6:27 PM IST

মালদা, 3 অক্টোবর: প্রশাসন ছুঁলে আঠারো ৷ কিন্তু চোরে ছুঁলে যে বিশ ঘা ! আতান্তরে বানভাসিরা ৷ বানের জল ঘরে ঢুকেছে ৷ কোথাও বা গ্রামের চারদিকে জল ৷ কিন্তু বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না কেউ ৷ এ দিকে, প্রশাসনের তরফে বারবার জানানো হয়েছে, টাঙন-পুনর্ভবার জল আরও বাড়তে পারে ৷ পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হতে পারে ৷ তাই সবাইকে কাছাকাছি ত্রাণশিবিরে যেতে হবে ৷ প্রসূতিদের অবশ্যই যেতে হবে শিবিরে ৷ ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যেতে হবে মায়েদেরও ৷ জেলাশাসক নিজে এলাকায় এসে সেই বার্তা দিয়ে গিয়েছেন ৷ তাঁর বার্তা ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে ৷ কারণ আগেও বন্যায় ত্রাণশিবিরে যাওয়ায় সর্বস্ব হারানোর স্মৃতি তাঁদের এখনও তাজা ৷

আসলে 2017 সালের ঘটনা এখনও ভুলতে পারেননি কেউ ৷ সে বারও বান এসেছিল টাঙন-পুনর্ভবায় ৷ নিরাপত্তার স্বার্থে ঘর ছেড়েছিলেন বানভাসিরা ৷ উঠেছিলেন কাছাকাছি ত্রাণশিবিরে ৷ দিন পনেরো পর নদীর জল নেমেছিল ৷ প্রথমে পুরুষরা বাড়ি ফিরেছিলেন ৷ বাড়িতে পা দিতেই চোখ কপালে উঠেছিল সবার ৷ তাঁদের অনুপস্থিতি সেই দুর্যোগেও পৌষ মাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল চোরের দলের ৷ নৌকায় এসে একের পর এক ঘর ফাঁকা করে দেয় তারা ৷ অনেক বাড়ি তো পুরোই সাফ হয়ে গিয়েছিল ৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর আরেক দুর্যোগ ঘনিয়ে এসেছিল পরিবারগুলিতে ৷ তাই এ বার তাঁরা আর বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না ৷ এমনকি জেলাশাসকের আবেদনের পরেও ৷

কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি এবং উত্তরবঙ্গ ও বাংলাদেশ থেকে নেমে আসা জলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ফুলে উঠেছে টাঙন আর পুনর্ভবা ৷ এই দুটি নদী মালদার হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লক দিয়ে বয়ে গিয়ে আবারও ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে ৷ দুই নদীর জলস্ফীতিতে বামনগোলার একাধিক জায়গায় বাঁধ কেটেছে ৷ নদীর জল ঢুকে পড়েছে অন্তত 19টি গ্রামে ৷ কম করে 1500 পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ৷

Flood in Malda
ঘর ছাড়তে নারাজ বানভাসিরা

বটতলি, নন্দিনাদহ, খুটাদহ, ডোবা হাঁসপুকুর, ছোটপাতাড়ি, তালতলি, কুপাদহ, শোনঘাটের মতো গ্রামগুলিতে এখন কোথাও কোমর, কোথাও বা বুক জল ৷ মাঠের ফসল জলে ডুবে রয়েছে ৷ প্রতিটি গ্রামই জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৷ পরিস্থিতি ঘোরালো বুঝে কিছু মানুষ আত্মীয় স্বজনের বাড়ি চলে গিয়েছেন বটে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখনও বাড়িতেই রয়েছেন ৷ অনেক বাড়িতে রয়েছেন গর্ভবতীরা ৷ রাতবিরেতে কোনও সংকট হলে তাঁদের হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া শুধু দুরুহই নয়, প্রায় দুষ্কর ৷ সে কারণেই গতকাল জেলাশাসক এলাকায় গিয়ে প্রসূতিদের দ্রুত গ্রাম ছাড়ার আবেদন জানান ৷

আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাচ্ছে প্রতিনিধি দল, জানালেন মমতা

“জেলাশাসক তো ভালোর জন্যই বলেছেন ৷ কিন্তু বন্যায় সবাই মিলে বাড়ি ছাড়ার অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো নয় ৷ 2017 সালের বন্যায় বাড়ি ছেড়েছিলাম ৷ জল নামার পর গ্রামে ফিরে ফাঁকা ঘর পেয়েছিলাম ৷ সুতোটা পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা ৷ পরে শুনেছিলাম, ওরা নৌকা করে এসেছিল ৷ গোটা গ্রাম সাফ করে চলে গিয়েছিল ৷ ওরা বাংলাদেশি ছিল কি না জানি না ৷ তবে জল নামার পর ঘরে ফিরে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম ৷ আবার নতুন করে সংসার পাততে হয়েছিল ৷ তাই এ বার আর বাড়ি ছাড়ব না বলেই ঠিক করেছি...” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন দুর্গত গজেন বিশ্বাস ৷

আরেক বানভাসি গৃহবধূ কাঞ্চন মণ্ডল জানালেন, “এই পরিস্থিতিতে গ্রামে থাকাটা সত্যিই বিপজ্জনক ৷ বিদ্যুৎ নেই ৷ পানীয় জলের সমস্যা ৷ বাড়িতে যা খাবার মজুত রয়েছে, সেটাই সবাই খাচ্ছি ৷ রাতে বিষধর সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ চোখেও পড়ছে ৷ বুঝতে পারছি, এখানে থাকাটা নিরাপদ নয় ৷ কিন্তু কী করব ! আগেরবার শিবিরে গিয়ে ঘরের সবকিছু খুইয়েছিলাম ৷ সবাই মিলে বাড়ি ছাড়লে এ বারও যে তেমনটা হবে না, তার নিশ্চয়তা দেবে কে ? যা হবে হোক, এখানেই থাকব ৷ আশা করছি, দু’একদিনের মধ্যে জল নামতে শুরু করবে ৷”

জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, “জল না-নামলে দুই নদীর জলে বামনগোলা ব্লকে ফসলের ক্ষতি নির্ধারণ করা যাবে না ৷ তবে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে কৃষকদের শষ্যবিমা যোজনায় সহায়তা করা হবে ৷ আপাতত মানুষের প্রাণ রক্ষা করাই জরুরি ৷ তাই বানভাসি মানুষজনকে কাছাকাছি ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে ৷ বিশেষ করে প্রসূতি, সদ্যোজাত ও ছোট বাচ্চাদের নিয়ে মায়েদের গ্রাম ছাড়তে বলা হয়েছে ৷ পরিস্থিতির উপর প্রশাসন সবসময় নজর রেখে চলেছে ৷”

মালদা, 3 অক্টোবর: প্রশাসন ছুঁলে আঠারো ৷ কিন্তু চোরে ছুঁলে যে বিশ ঘা ! আতান্তরে বানভাসিরা ৷ বানের জল ঘরে ঢুকেছে ৷ কোথাও বা গ্রামের চারদিকে জল ৷ কিন্তু বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না কেউ ৷ এ দিকে, প্রশাসনের তরফে বারবার জানানো হয়েছে, টাঙন-পুনর্ভবার জল আরও বাড়তে পারে ৷ পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হতে পারে ৷ তাই সবাইকে কাছাকাছি ত্রাণশিবিরে যেতে হবে ৷ প্রসূতিদের অবশ্যই যেতে হবে শিবিরে ৷ ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যেতে হবে মায়েদেরও ৷ জেলাশাসক নিজে এলাকায় এসে সেই বার্তা দিয়ে গিয়েছেন ৷ তাঁর বার্তা ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে ৷ কারণ আগেও বন্যায় ত্রাণশিবিরে যাওয়ায় সর্বস্ব হারানোর স্মৃতি তাঁদের এখনও তাজা ৷

আসলে 2017 সালের ঘটনা এখনও ভুলতে পারেননি কেউ ৷ সে বারও বান এসেছিল টাঙন-পুনর্ভবায় ৷ নিরাপত্তার স্বার্থে ঘর ছেড়েছিলেন বানভাসিরা ৷ উঠেছিলেন কাছাকাছি ত্রাণশিবিরে ৷ দিন পনেরো পর নদীর জল নেমেছিল ৷ প্রথমে পুরুষরা বাড়ি ফিরেছিলেন ৷ বাড়িতে পা দিতেই চোখ কপালে উঠেছিল সবার ৷ তাঁদের অনুপস্থিতি সেই দুর্যোগেও পৌষ মাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল চোরের দলের ৷ নৌকায় এসে একের পর এক ঘর ফাঁকা করে দেয় তারা ৷ অনেক বাড়ি তো পুরোই সাফ হয়ে গিয়েছিল ৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর আরেক দুর্যোগ ঘনিয়ে এসেছিল পরিবারগুলিতে ৷ তাই এ বার তাঁরা আর বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না ৷ এমনকি জেলাশাসকের আবেদনের পরেও ৷

কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি এবং উত্তরবঙ্গ ও বাংলাদেশ থেকে নেমে আসা জলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ফুলে উঠেছে টাঙন আর পুনর্ভবা ৷ এই দুটি নদী মালদার হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লক দিয়ে বয়ে গিয়ে আবারও ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে ৷ দুই নদীর জলস্ফীতিতে বামনগোলার একাধিক জায়গায় বাঁধ কেটেছে ৷ নদীর জল ঢুকে পড়েছে অন্তত 19টি গ্রামে ৷ কম করে 1500 পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ৷

Flood in Malda
ঘর ছাড়তে নারাজ বানভাসিরা

বটতলি, নন্দিনাদহ, খুটাদহ, ডোবা হাঁসপুকুর, ছোটপাতাড়ি, তালতলি, কুপাদহ, শোনঘাটের মতো গ্রামগুলিতে এখন কোথাও কোমর, কোথাও বা বুক জল ৷ মাঠের ফসল জলে ডুবে রয়েছে ৷ প্রতিটি গ্রামই জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৷ পরিস্থিতি ঘোরালো বুঝে কিছু মানুষ আত্মীয় স্বজনের বাড়ি চলে গিয়েছেন বটে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখনও বাড়িতেই রয়েছেন ৷ অনেক বাড়িতে রয়েছেন গর্ভবতীরা ৷ রাতবিরেতে কোনও সংকট হলে তাঁদের হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া শুধু দুরুহই নয়, প্রায় দুষ্কর ৷ সে কারণেই গতকাল জেলাশাসক এলাকায় গিয়ে প্রসূতিদের দ্রুত গ্রাম ছাড়ার আবেদন জানান ৷

আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাচ্ছে প্রতিনিধি দল, জানালেন মমতা

“জেলাশাসক তো ভালোর জন্যই বলেছেন ৷ কিন্তু বন্যায় সবাই মিলে বাড়ি ছাড়ার অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো নয় ৷ 2017 সালের বন্যায় বাড়ি ছেড়েছিলাম ৷ জল নামার পর গ্রামে ফিরে ফাঁকা ঘর পেয়েছিলাম ৷ সুতোটা পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা ৷ পরে শুনেছিলাম, ওরা নৌকা করে এসেছিল ৷ গোটা গ্রাম সাফ করে চলে গিয়েছিল ৷ ওরা বাংলাদেশি ছিল কি না জানি না ৷ তবে জল নামার পর ঘরে ফিরে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম ৷ আবার নতুন করে সংসার পাততে হয়েছিল ৷ তাই এ বার আর বাড়ি ছাড়ব না বলেই ঠিক করেছি...” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন দুর্গত গজেন বিশ্বাস ৷

আরেক বানভাসি গৃহবধূ কাঞ্চন মণ্ডল জানালেন, “এই পরিস্থিতিতে গ্রামে থাকাটা সত্যিই বিপজ্জনক ৷ বিদ্যুৎ নেই ৷ পানীয় জলের সমস্যা ৷ বাড়িতে যা খাবার মজুত রয়েছে, সেটাই সবাই খাচ্ছি ৷ রাতে বিষধর সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ চোখেও পড়ছে ৷ বুঝতে পারছি, এখানে থাকাটা নিরাপদ নয় ৷ কিন্তু কী করব ! আগেরবার শিবিরে গিয়ে ঘরের সবকিছু খুইয়েছিলাম ৷ সবাই মিলে বাড়ি ছাড়লে এ বারও যে তেমনটা হবে না, তার নিশ্চয়তা দেবে কে ? যা হবে হোক, এখানেই থাকব ৷ আশা করছি, দু’একদিনের মধ্যে জল নামতে শুরু করবে ৷”

জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, “জল না-নামলে দুই নদীর জলে বামনগোলা ব্লকে ফসলের ক্ষতি নির্ধারণ করা যাবে না ৷ তবে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে কৃষকদের শষ্যবিমা যোজনায় সহায়তা করা হবে ৷ আপাতত মানুষের প্রাণ রক্ষা করাই জরুরি ৷ তাই বানভাসি মানুষজনকে কাছাকাছি ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে ৷ বিশেষ করে প্রসূতি, সদ্যোজাত ও ছোট বাচ্চাদের নিয়ে মায়েদের গ্রাম ছাড়তে বলা হয়েছে ৷ পরিস্থিতির উপর প্রশাসন সবসময় নজর রেখে চলেছে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.