মালদা, 8 নভেম্বর: স্ট্রোক শব্দটির সঙ্গে পরিচিত সকলেই ৷ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কিংবা হঠাৎ হৃদযন্ত্র থেমে আজকাল মৃত্যু হচ্ছে অহরহ ৷ শুধু বয়স্ক নয়, স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন কমবয়সিরাও ৷ চিকিৎসকরা বলছেন, কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত কিনা, তা উপসর্গ দেখে বোঝা যায় ৷ সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে আসা গেলে রোগীকে বাঁচানোও যায় ৷ কিন্তু মূল সমস্যা হল, অনেকেই সেসব উপসর্গ বুঝতে পারেন না ৷ ফলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেকটা দেরি হয়ে যায় ৷ রোগীকে বাঁচানোও দূরুহ হয়ে পড়ে ৷
স্ট্রোকের ছোবল থেকে মানুষকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছে মালদা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ৷ এ নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেছে তারা ৷ এগিয়ে এসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরও ৷ গ্রামগঞ্জের স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষকে স্ট্রোকের উপসর্গগুলি বোঝাচ্ছেন ৷ মেডিক্যালের তরফে গ্রামীণ হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে ৷ চালু করা হয়েছে টেলি নিউরো মেডিসিন ৷ এই পদ্ধতিতে বেশ কিছু মানুষের জীবন বাঁচানো গিয়েছে বলেও দাবি করেছেন মেডিক্যালের পদাধিকারীরা ৷
এ প্রসঙ্গে মালদা মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, "মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগে আগে থেকেই স্ট্রোকের চিকিৎসা হয় ৷ মানুষকে স্ট্রোকের ছোবল থেকে বাঁচাতে আমরা এখন বিশেষ টেলি নিউরো মেডিসিন পরিষেবা দিচ্ছি ৷ স্ট্রোকের বিভিন্ন ধরণ আছে ৷ উপসর্গ দেখে যদি স্ট্রোকের সেসব ধরণ বোঝা যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে সেই রোগীর সিটি স্ক্যান করে রিপোর্ট কলকাতার বিশেষজ্ঞদের পাঠিয়ে, তাঁর মতামত নিয়ে ওই মুহূর্তেই চিকিৎসা শুরু করছি ৷ এর জন্য মেডিক্যালে নোডাল অফিসারও নিয়োগ করা হয়েছে ৷ এনিয়ে মানুষকে সচেতন করছি আমরা ৷ শরীরের একদিক দুর্বল হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া, কথা বলতে অসুবিধে হওয়া অথবা অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনা বুঝতে পারলেই রোগীকে এখানে যেন নিয়ে আসা হয় ৷ চার ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে এখানে নিয়ে আসা হলে তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ৷ এমন রোগী এখানে আসলেই তাঁর রক্তক্ষরণ হয়েছে নাকি ইসকিমিয়া, তা আমরা নির্ধারণ করে মুহূর্তে চিকিৎসা শুরু করি ৷ গ্রামাঞ্চলের রোগীরা কাছাকাছি হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও যেতে পারেন ৷ গ্রিন করিডর দিয়ে এসব রোগীকে সিটি স্ক্যানের জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে ৷ ইতিমধ্যে আমরা বেশ কিছু রোগীর জীবন এভাবে বাঁচিয়েছি ৷ মানুষকে স্ট্রোক নিয়ে সচেতন করার জন্য আমরা বিএমওএইচদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি ৷"
মালদার মতো মফস্বল জেলায় উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা বলতে একমাত্র ভরসা মালদা মেডিক্যাল ৷ কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগে সামিল হতে এগিয়ে এসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরও ৷ মানুষকে স্ট্রোক নিয়ে সচেতন করতে গ্রামাঞ্চলে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের দফতরের তরফে নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে ৷ জেলার প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে মালদা মেডিক্যালের টেলি যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে ৷ যাতে কোনও স্ট্রোকে আক্রান্ত কোনও রোগী সেখানে গেলে চিকিৎসকরা সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ৷
আরও পড়ুন: চিকিৎসায় দারুণ সাড়া, শতাধিক ক্যানসার আক্রান্ত মানুষের ভরসা রাজ্যের এই হাসপাতাল