ETV Bharat / state

Ganga Erosion in Malda: গঙ্গার গ্রাস থেকে মাত্র 300 মিটার দূরে দাঁড়িয়ে কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল! - গঙ্গা নদীর ভাঙন

Ganga River Erosion: গঙ্গা নদীর ভাঙন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, মাত্র 300 মিটার দূরে মালদার কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুলের শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা আতংকে রয়েছেন ৷ তাঁদের একটাই প্রশ্ন একবছর পর এই স্কুল থাকবে তো ?

Ganga Erosion in Malda ETV BHARAT
Ganga Erosion in Malda
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 8, 2023, 6:58 PM IST

গঙ্গার গ্রাস থেকে মাত্র 300 মিটার দূরে দাঁড়িয়ে কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল!

মালদা, 8 সেপ্টেম্বর: গঙ্গার ভাঙন কেড়েছে জমি ৷ গ্রাস করেছে ঘরবাড়িও ৷ মানুষের দানাপানি, মাথার ছাদের পর এবার গ্রামীণ ভবিষ্যতকে নিশানা করেছে গঙ্গা নদী ৷ গঙ্গার ভাঙন এবার এগোচ্ছে স্কুলের দিকে ৷ আর মাত্র তিনশো মিটারের মতো দূরত্ব ৷ রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কাটাহা দিয়ারা উচ্চবিদ্যালয়কে রক্ষা করতে সরকারের কাছে আর্তি পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষজনের ৷ অবশ্য সেচ দফতরের মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, স্কুল রক্ষা করতে তাঁরা যাবতীয় পদক্ষেপ নেবেন ৷

চলতি মরশুমের গঙ্গা ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ কান্তটোলা গ্রামে ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে নদীর জল। 30-35টি বাড়ি চলে গিয়েছে গঙ্গাগর্ভে ৷ দিশেহারা মানুষজন নিজেদের ঘর ছেড়ে সরে পড়ছে অন্যত্র ৷ যাঁদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার ধারে ৷ মাথা গোঁজার আস্তানা বানানোর জন্য বুধবারই তাঁরা জনপ্রতিনিধিদের কাছে পুনর্বাসনের জায়গা দাবি করেছিলেন ৷ এই মানুষজনকে পরিত্রাণ দিতে জেলা প্রশাসন সরকারি খাস জমির খোঁজ শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে ৷

শুধু বর্তমান নয়, গঙ্গার দাপটে অস্তিত্বের সংকটে মহানন্দটোলার ভবিষ্যতও ৷ এই এলাকার উচ্চশিক্ষার একমাত্র ঠিকানা কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল ৷ মহানন্দটোলা গ্রামে 1949 সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার মুখে ৷ এই মুহূর্তে স্কুল থেকে মাত্র 300 মিটার দূর দিয়ে বইছে গঙ্গা নদী ৷ প্রতিদিনই একটু একটু করে ভাঙছে নদীর বাঁধ ৷ ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবকদেরও ৷

স্কুলের বাংলা শিক্ষক সুকান্ত খাঁ বর্ধমানের বাসিন্দা ৷ কর্মসূত্রে তাঁর মালদায় আসা ৷ তিনি বলেন, “2013 সালে এই স্কুলে যোগ দিয়েছি ৷ তখন গঙ্গার ভাঙনের কথা শুনেছি ৷ 2018 থেকে ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷ একেকটা গ্রাম গঙ্গায় তলিয়ে যাচ্ছে ৷ গত পরশু শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালীন কান্তটোলার অনেক বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে ৷ পড়ুয়ারা বলছে, তারা কোথায় যাবে ? তাদের সমস্ত নথিপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷ আমরা স্কুলের তরফে প্রশাসনের সব মহলে গঙ্গা ভাঙন রোধের আবেদন জানিয়েছি ৷ কিন্তু, স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হয়নি ৷’’

তিনি জানান, কোনও দোষারোপ করবেন না ৷ তবে, দুই সরকার যদি একসঙ্গে এই সমস্যা সমাধানের কথা ভাবত, তবে ভালো হত ৷ অযথা দড়ি টানাটানি করে কোনও লাভ নেই বলে মনে করেন স্কুলের বাংলা শিক্ষক ৷ তাঁর কথায় মানুষকে বাঁচাতে পারলেই আসল লাভ ৷ তাহলে শিক্ষকদের আর স্কুলের আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রীর হাহাকার শুনতে হবে না ৷

আরও পড়ুন: এক লহমায় গঙ্গায় ধসে পড়ল 30-35টি বাড়ি, কান্তটোলায় এখন শুধুই কান্নার সুর; ঘেরাও জনপ্রতিনিধিরা

আতঙ্কিত স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া মধুমিতা সাহা বলছে, “গঙ্গা কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুলের কাছাকাছি চলে এসেছে ৷ আমি শুধু নই, আমার ভাই আর বোন এই স্কুলেই পড়ে ৷ আমার মা-বাবাও এই স্কুলে পড়তেন ৷ এতদিনের পুরনো স্কুল, এখন অস্তিত্বের সংকটে ৷ এলাকার সবাই এই স্কুলে পড়ে ৷ আমরা কয়েক বছর পর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক দেব ৷ কিন্তু, গঙ্গা যেভাবে স্কুলের দিকে এগিয়ে আসছে, তাতে ততদিন স্কুল টিকবে কিনা সন্দেহ !’’

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পলাশ মুখোপাধ্যায় বলছেন, “20-25 বছর আগেও গঙ্গা রাজমহল পাহাড় ঘেঁষে বইত ৷ 25-30 কিলোমিটার দূরে ছিল ৷ এখন স্কুল থেকে 30 মিটার দূরে গঙ্গা ৷ স্কুলে 14 জন শিক্ষক এবং প্রায় 2500 পড়ুয়া ৷ পড়ুয়ারা সবাই প্রত্যন্ত গ্রামের ৷ তাঁদের মা-বাবারাও এই স্কুলে পড়েছে ৷ আমি নিজে এই স্কুলে পড়েছি ৷ 33 বছর ধরে এই স্কুলেই শিক্ষকতা করছি ৷ স্থানীয় বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ও এই স্কুলে পড়েছেন ৷ যেভাবে গঙ্গার পাড় কাটছে তাতে 2024 সালের শেষ পর্যন্ত স্কুল টিকবে না ৷ জানি না, স্কুলের সমস্ত রেকর্ড আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব !’’

আরও পড়ুন: গঙ্গার ভাঙনে ঘর হারিয়ে সরকারি খাস জমির দাবি দুর্গতদের

যদিও সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, তাঁর দফতর গঙ্গা ভাঙনের গতিপ্রকৃতির উপর নজর রেখে চলেছে ৷ যেখানে যা প্রয়োজন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ৷ তবে, স্থায়ী ভাঙন রোধের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য প্রয়োজন ৷ তাঁরা সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যতটা পারা যায়, ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন ৷ কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল রক্ষা করতেও তাঁর দফতর যথাসাধ্য ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন ৷

গঙ্গার গ্রাস থেকে মাত্র 300 মিটার দূরে দাঁড়িয়ে কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল!

মালদা, 8 সেপ্টেম্বর: গঙ্গার ভাঙন কেড়েছে জমি ৷ গ্রাস করেছে ঘরবাড়িও ৷ মানুষের দানাপানি, মাথার ছাদের পর এবার গ্রামীণ ভবিষ্যতকে নিশানা করেছে গঙ্গা নদী ৷ গঙ্গার ভাঙন এবার এগোচ্ছে স্কুলের দিকে ৷ আর মাত্র তিনশো মিটারের মতো দূরত্ব ৷ রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কাটাহা দিয়ারা উচ্চবিদ্যালয়কে রক্ষা করতে সরকারের কাছে আর্তি পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষজনের ৷ অবশ্য সেচ দফতরের মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, স্কুল রক্ষা করতে তাঁরা যাবতীয় পদক্ষেপ নেবেন ৷

চলতি মরশুমের গঙ্গা ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ কান্তটোলা গ্রামে ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে নদীর জল। 30-35টি বাড়ি চলে গিয়েছে গঙ্গাগর্ভে ৷ দিশেহারা মানুষজন নিজেদের ঘর ছেড়ে সরে পড়ছে অন্যত্র ৷ যাঁদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার ধারে ৷ মাথা গোঁজার আস্তানা বানানোর জন্য বুধবারই তাঁরা জনপ্রতিনিধিদের কাছে পুনর্বাসনের জায়গা দাবি করেছিলেন ৷ এই মানুষজনকে পরিত্রাণ দিতে জেলা প্রশাসন সরকারি খাস জমির খোঁজ শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে ৷

শুধু বর্তমান নয়, গঙ্গার দাপটে অস্তিত্বের সংকটে মহানন্দটোলার ভবিষ্যতও ৷ এই এলাকার উচ্চশিক্ষার একমাত্র ঠিকানা কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল ৷ মহানন্দটোলা গ্রামে 1949 সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার মুখে ৷ এই মুহূর্তে স্কুল থেকে মাত্র 300 মিটার দূর দিয়ে বইছে গঙ্গা নদী ৷ প্রতিদিনই একটু একটু করে ভাঙছে নদীর বাঁধ ৷ ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবকদেরও ৷

স্কুলের বাংলা শিক্ষক সুকান্ত খাঁ বর্ধমানের বাসিন্দা ৷ কর্মসূত্রে তাঁর মালদায় আসা ৷ তিনি বলেন, “2013 সালে এই স্কুলে যোগ দিয়েছি ৷ তখন গঙ্গার ভাঙনের কথা শুনেছি ৷ 2018 থেকে ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷ একেকটা গ্রাম গঙ্গায় তলিয়ে যাচ্ছে ৷ গত পরশু শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালীন কান্তটোলার অনেক বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে ৷ পড়ুয়ারা বলছে, তারা কোথায় যাবে ? তাদের সমস্ত নথিপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷ আমরা স্কুলের তরফে প্রশাসনের সব মহলে গঙ্গা ভাঙন রোধের আবেদন জানিয়েছি ৷ কিন্তু, স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হয়নি ৷’’

তিনি জানান, কোনও দোষারোপ করবেন না ৷ তবে, দুই সরকার যদি একসঙ্গে এই সমস্যা সমাধানের কথা ভাবত, তবে ভালো হত ৷ অযথা দড়ি টানাটানি করে কোনও লাভ নেই বলে মনে করেন স্কুলের বাংলা শিক্ষক ৷ তাঁর কথায় মানুষকে বাঁচাতে পারলেই আসল লাভ ৷ তাহলে শিক্ষকদের আর স্কুলের আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রীর হাহাকার শুনতে হবে না ৷

আরও পড়ুন: এক লহমায় গঙ্গায় ধসে পড়ল 30-35টি বাড়ি, কান্তটোলায় এখন শুধুই কান্নার সুর; ঘেরাও জনপ্রতিনিধিরা

আতঙ্কিত স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া মধুমিতা সাহা বলছে, “গঙ্গা কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুলের কাছাকাছি চলে এসেছে ৷ আমি শুধু নই, আমার ভাই আর বোন এই স্কুলেই পড়ে ৷ আমার মা-বাবাও এই স্কুলে পড়তেন ৷ এতদিনের পুরনো স্কুল, এখন অস্তিত্বের সংকটে ৷ এলাকার সবাই এই স্কুলে পড়ে ৷ আমরা কয়েক বছর পর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক দেব ৷ কিন্তু, গঙ্গা যেভাবে স্কুলের দিকে এগিয়ে আসছে, তাতে ততদিন স্কুল টিকবে কিনা সন্দেহ !’’

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পলাশ মুখোপাধ্যায় বলছেন, “20-25 বছর আগেও গঙ্গা রাজমহল পাহাড় ঘেঁষে বইত ৷ 25-30 কিলোমিটার দূরে ছিল ৷ এখন স্কুল থেকে 30 মিটার দূরে গঙ্গা ৷ স্কুলে 14 জন শিক্ষক এবং প্রায় 2500 পড়ুয়া ৷ পড়ুয়ারা সবাই প্রত্যন্ত গ্রামের ৷ তাঁদের মা-বাবারাও এই স্কুলে পড়েছে ৷ আমি নিজে এই স্কুলে পড়েছি ৷ 33 বছর ধরে এই স্কুলেই শিক্ষকতা করছি ৷ স্থানীয় বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ও এই স্কুলে পড়েছেন ৷ যেভাবে গঙ্গার পাড় কাটছে তাতে 2024 সালের শেষ পর্যন্ত স্কুল টিকবে না ৷ জানি না, স্কুলের সমস্ত রেকর্ড আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব !’’

আরও পড়ুন: গঙ্গার ভাঙনে ঘর হারিয়ে সরকারি খাস জমির দাবি দুর্গতদের

যদিও সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, তাঁর দফতর গঙ্গা ভাঙনের গতিপ্রকৃতির উপর নজর রেখে চলেছে ৷ যেখানে যা প্রয়োজন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ৷ তবে, স্থায়ী ভাঙন রোধের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য প্রয়োজন ৷ তাঁরা সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যতটা পারা যায়, ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন ৷ কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল রক্ষা করতেও তাঁর দফতর যথাসাধ্য ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.