মালদা, 7 জুন: স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত ৷ দুই ছেলে, দু'জনেই জন্মান্ধ ৷ এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে হেনা খাতুনের সম্বল ছিল শ্বশুরমশাইয়ের পেনশনের ক’টা টাকা ৷ কিন্তু মাস ছয়েক আগে শ্বশুরমশাই মারা গিয়েছেন ৷ ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর পেনশনও ৷ এই পরিস্থিতিতে সংসার চালানো বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল হেনার কাছে ৷ সেকথা কানে যায় জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়ার ৷ সুযোগ পেয়েই তিনি আজ চলে যান রতুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মোমিনপাড়া গ্রামে মহম্মদ মুকেসুদ্দিন আহমেদের বাড়িতে ৷ জেলাশাসকের সঙ্গে ছিলেন রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়, বিডিও রাকেশ টোপ্পো, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মাসুদ রহমান-সহ আরও অনেকে ৷
ক্যানসারে আক্রান্ত মুকেসুদ্দিনের পরিবারে স্ত্রী হেনা খাতুন ছাড়াও রয়েছে দুই বিশেষভাবে সক্ষম ছেলে ৷ বড় ছেলে হাবিবুল আনসারি দশম শ্রেণির ছাত্র ৷ এবার মাধ্যমিক দেবে ৷ ছোট হাফিজুল আনসারি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে ৷ তারা দক্ষিণ 24 পরগনার রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে পড়াশোনা করে ৷ মুকেসুদ্দিন কাজকর্ম করতে পারেন না ৷ তাঁর বাবা মহম্মদ সাজিমুদ্দিন কলকাতা পুলিশে চাকরি করতেন ৷ প্রায় 15 বছর আগে তিনি অবসর নেন ৷ তখন থেকে গোটা সংসার তাঁর পেনশনের টাকাতেই চলত ৷ কিন্তু মাস ছয়েক ধরে সেই আয় বন্ধ ৷
আরও পড়ুন: মানবিক বিধায়ক ! পথ দুর্ঘটনায় আহত শিশু-সহ অন্যান্যদের গাড়িতে পৌঁছে দিলেন হাসপাতাল
হেনা জানান, তাঁর দুই ছেলেই জন্ম থেকে অন্ধ ৷ ওদের বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত ৷ জিভ কেটে বাদ দিতে হয়েছে ৷ ছেলে দুটো দক্ষিণ 24 পরগনায় পড়াশোনা করে ৷ তাঁর পরিবারে শুধু তিনিই কর্মক্ষম ৷ লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনওমতে সংসার চালাচ্ছেন হেনা ৷ এতদিন শ্বশুরমশাইয়ের পেনশনে সংসার চলত ৷ তিনি মারা যাওয়ার পর আর সেই টাকা তিনি পান না ৷ এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের জন্য জেলাশাসক ও বিধায়কের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন হেনা ৷ তিনি বলেন, "স্বামীর চিকিৎসা আর ছেলে দু'টোকে যাতে মানুষ করতে পারি, তার জন্যই আবেদন জানিয়েছিলাম ৷ জেলাশাসক এসেছিলেন ৷ তিনি আমাদের পেনশনের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানিয়েছেন ৷"
আরও পড়ুন: সাংসদের মানবিক রূপ, পথদুর্ঘটনায় আহতকে নিজেই নিয়ে গেলেন হাসপাতালে
জেলাশাসক বলেন, "এখানে দু’জন অন্ধ ভাই পড়াশোনা করছে ৷ তাদের কিছু পারিবারিক অসুবিধেও রয়েছে ৷ আমরা সেকথা শুনেছি ৷ এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি ৷ এই পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে ৷ সেটা দেখা হচ্ছে ৷ এই পরিবারে একজন ক্যান্সার রোগী রয়েছেন ৷ কলকাতার কোনও হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে তাঁর চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করা হবে ৷ নমিনি ছিল না বলে এই পরিবারের পেনশন নিয়েও কিছু সমস্যা রয়েছে ৷ নিয়মে থাকলে আমরা এই পরিবারের পেনশনের ব্যবস্থা করে দেব ৷"