মালদা, 6 জানুয়ারি: সার্কেলে ছিল প্রাথমিক শিক্ষা উৎসব ৷ সেই উৎসব সফল করতে নিজের দায়িত্বে থাকা মালদা সার্কেলের 59টি প্রাথমিক স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ করে শিক্ষকদের মাঠে উপস্থিত থাকার লিখিত নির্দেশ দিয়েছিলেন এসআই ৷ অবশ্য কাগজে কলমে নয়, সেই নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন হোয়াটসঅ্যাপে ৷ মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, উৎসবের দিন স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নারাও প্রয়োজন নেই ৷ তাঁর এই নির্দেশের জেরে সেদিন মিড-ডে মিল থেকে বঞ্চিত হয়েছিল হাজারো গরিব শিশু ৷ গোটা ঘটনায় এসআইয়ের বিরুদ্ধে পুরাতন মালদার বিডিওকে লিখিত অভিযোগ জানান বেশ কিছু অভিভাবক ৷ সেই খবর একমাত্র ইটিভি ভারতে প্রচারিত হয়েছিল ৷ অবশেষে ওই এসআইয়ের কাছে এই ঘটনার কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, উত্তর সন্তোষজনক না হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ৷
ঘটনাটি ঘটেছিল গত 20 ডিসেম্বর ৷ সেদিন মালদা সার্কেলের 59টি প্রাথমিক স্কুলের টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল পুরাতন মালদার সাহাপুর হাইস্কুল মাঠে ৷ উৎসবের কয়েকদিন আগেই এসআই ভরত ঘোষ স্কুলগুলির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নির্দেশিকা পাঠান, টিএলএম মেলা দেখার জন্য সার্কেলের সমস্ত শিক্ষককে অবশ্যই আসতে হবে ৷ তার জন্য ক্লাস সাসপেন্ড রাখতে হবে ৷ প্রতিটি স্কুল থেকে অন্তত 10 জন করে পড়ুয়াকে উৎসবে নিয়ে আসতে হবে ৷ সেদিন সাহাপুর হাইস্কুল মাঠে দাঁড়িয়ে এসআই ভরত ঘোষ ইটিভি ভারতকে বলেছিলেন, “যেহেতু মালদা সার্কেলের তরফে এই টিএলএম অর্গানাইজ করা হচ্ছে, তাই প্রতিটি স্কুলের প্রত্যেক শিক্ষককেও আমরা এখানে থাকতে বলেছি ৷ কারণ, এখানে বিভিন্ন স্কুলের টিএলএম দেখে তাঁরা নিজেদের স্কুলে প্রয়োগ করতে পারবেন ৷ তাই সমস্ত স্কুলের ক্লাস সাসপেন্ড করা হয়েছে ৷ পড়ুয়াদেরও এখানে আসতে বলা হয়েছে ৷ শিক্ষার স্বার্থে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷ শিক্ষার উদ্দেশ্যে কিছু কাজ করতে গেলে কিছু ত্যাগ করতেই হবে ৷ সেটা মিড ডে মিলও হতে পারে ৷”
এই ঘটনায় সেদিনই এসআইয়ের বিরুদ্ধে পুরাতন মালদার বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বেশ কিছু অভিভাবক ৷ অভিযোগপত্রে তাঁরা জানান, এসআইয়ের সিদ্ধান্তে তাঁদের মতো গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা একবেলা খেতে পারল না ৷ তাঁরা এসআইয়ের কঠোর শাস্তি দাবি করেন৷ ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানায় একাধিক শিক্ষক সংগঠনও ৷ এই খবর ইটিভি ভারতে প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর ও সমগ্র শিক্ষা মিশন ৷ ভরতবাবুর কার্যকলাপ নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়ে যায় ৷ তখনই দেখা যায়, শুধু এই ঘটনাই নয়, তিনি তাঁর সার্কেলের প্রতিটি স্কুলকে বিশেষ একটি দোকান থেকে টিএলএম মেলার সামগ্রী কেনারও নির্দেশ দিয়েছেন ৷ শো-কজের চিঠিতে তাঁকে এর কারণও দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷
এই শো-কজ নিয়ে প্রতিক্রিয়া পেতে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে ভরতবাবুকে ৷ ফোন তোলেননি তিনি ৷ জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক সত্যজিত মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি একেবারেই দফতরের অভ্যন্তরীণ ৷ এনিয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলব না ৷” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন বাসন্তী বর্মন বলেন, “20 ডিসেম্বর স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ রেখে মেলা করার সিদ্ধান্ত ওই এসআই তাঁর দায়িত্বে নিয়েছিলেন ৷ তাঁকে শো-কজ করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর ও সমগ্র শিক্ষা মিশন ৷ এক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নেই ৷ তবে আইনের পথেই আইন চলবে ৷” অন্যদিকে পুরাতন মালদার বিডিও সেঁজুতি পাল মাইতি বলেন, “এই ঘটনায় ইতিমধ্যে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে ৷”
আরও পড়ুন: