ETV Bharat / state

Litchi Cultivation in Malda: প্রচণ্ড গরমে ক্ষতির আশঙ্কা ! লিচুর ফলনে দুশ্চিন্তায় মালদার কৃষকরা

আমের পাশাপাশি মালদার লিচুও দুনিয়া-বিখ্যাত ৷ প্রতিবার গরমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মালদা থেকে লিচু সরবরাহ হয় ৷ কিন্তু এবার প্রচণ্ড গরম আর বৃষ্টির অভাবে লিচুর স্বাদ অধরাই থেকে যেতে পারে ৷ লিচু চাষে 50 কোটি টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷

Litchi Cultivation
মালদায় লিচু চাষ
author img

By

Published : Apr 13, 2023, 3:10 PM IST

মালদায় এবার ক্ষতির মুখে লিচুর ফলন

মালদা, 13 এপ্রিল: বঙ্গের গরম মানে আম, লিচু ৷ আর মালদা জেলা ৷ আমের গড় লিচুর জন্যও বিখ্যাত ৷ এখানে লিচুর স্বাদে মজেননি, এমন বাঙালি বিরল ৷ মালদা থেকে মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ-সহ গোটা দেশেই লিচু সরবরাহ হয় ৷ গত বছর প্রথমবার মালদার লিচুর স্বাদ পেয়েছে কাতার, বাহরিনের মতো ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিও ৷ সঙ্গে ইতালি, জার্মানির মতো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও ৷ রফতানিকারকদের আশা, এবারও ভিনদেশ থেকে মালদার লিচুর বরাত আসতে পারে ৷ কিন্তু বিধি বাম ৷ আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চলতি মরশুমে মালদায় লিচুর ফলন নেই বললেই চলে ৷ সেকথা মেনে নিয়েছে জেলা উদ্যানপালন দফতরও ৷

মালদা জেলার কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে লিচু চাষ হয় ৷ প্রায় 1 হাজার 570 হেক্টর জমিতে এই সুস্বাদু ফলের চাষ হয় ৷ সম্প্রতি চাঁচল 1 ও 2 এবং রতুয়া 1 ও 2 নম্বর ব্লকের ফুলহর নদীর অববাহিকাতেও লিচু চাষ হচ্ছে ৷ প্রধানত ফেব্রুয়ারিতে লিচুর মুকুল আসে ৷ 16-22 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা লিচুর মুকুলের জন্য উপযোগী ৷ মুকুল আসার সঙ্গে হালকা বৃষ্টি হলে আরও ভালো ৷ মুকুলে গুটি আসার পক্ষে 24-28 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড আবহাওয়া অত্যন্ত অনুকূল ৷ ফল পাকার সময় 27-28 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা থাকলে খুব ভালো ৷ গত মরশুমে এই জেলায় 14 হাজার 700 মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছিল ৷ জেলায় প্রতি বছর প্রায় 100 কোটি টাকার লিচুর ব্যবসা হয় ৷

এবার পরিস্থিতি প্রতিকূল ৷ কালিয়াচকের বাগানগুলিতে লিচু প্রায় নেই ৷ হাতে গোনা কয়েকটি বাগানে ফল দেখা গেলেও তা সামান্য ৷ তাও টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না, এ নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা ৷ কারণ, বৃষ্টির অভাব এবং রোগ-পোকার আক্রমণ ৷ পোকার হাত থেকে গাছের ফল বাঁচাতে নিজেই বাগানের গাছে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন কালিয়াচকের সিলামপুর গ্রামের লিচু কৃষক মহম্মদ লোকমান শেখ ৷ তিনি বলেন, "15-20 বছর ধরে লিচু চাষ করছি ৷ এবার অনুকূল তাপমাত্রা না-থাকায় মুকুল কম এসেছিল ৷ তার উপর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সেই মুকুলও ঝরে গিয়েছে ৷ এখন গাছে যেভাবে পোকামাকড়ের উপদ্রব শুরু হয়েছে, মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় ৷ কীটনাশক স্প্রে করে পোকামাকড়ের আক্রমণ রোখার চেষ্টা করছি ৷ এবার কিছু বাগানে তো একেবারেই মুকুল আসেনি ৷"

আরও পড়ুন: ফলন ও চাহিদা কম, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তরমুজ চাষিরা

লিচু চাষের পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদেরও ৷ কালিয়াচক মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ নাজিমুদ্দিনের কথায়, "আবহাওয়ার জন্য এবার কালিয়াচকের লিচু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ গত বছরের তুলনায় এবার 10 শতাংশ উৎপাদন হবে কি না সন্দেহ ৷ যেটুকু গুটি এসেছে, খরায় তাও ঝরে যাচ্ছে ৷ দিনে তাপমাত্রা অনেকটাই চড়ে যাচ্ছে, রাতে আবার ঠান্ডা ভাব ৷ আবহাওয়ার এই তারতম্য লিচু চাষের পক্ষে মোটেও উপযোগী নয় ৷ এখানে সেচ ব্যবস্থাও তেমন নেই ৷ তাই বাগানে জলসেচ দেওয়াটা খুব সমস্যার ৷ লিচু ভীষণ লাভজনক ব্যবসা ৷ এখন এখানকার লিচু বিদেশেও যাচ্ছে ৷ আমি এলাকার লিচু মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠাই ৷ এবার লিচুর দাম আকাশ ছোঁবে ৷"

জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েকও মালদায় লিচুচাষের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ৷ তিনি বলেন, "এখানে দু'ধরনের লিচুর চাষ হয় ৷ গুটি আর বোম্বাই ৷ বোম্বাই লিচুর চাহিদা সারা দেশেই রয়েছে ৷ এই প্রজাতির লিচুর চাষই এখানে বেশি হয় ৷ আবহাওয়ার তারতম্যে এবার অনেক জায়গায় মুকুলের পরিবর্তে পাতা বেরিয়ে গিয়েছে ৷ এতে উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে ৷ গতবার এই জেলায় 14 হাজার 700 মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছিল ৷ তার তুলনায় এবার প্রায় 50 শতাংশ কম উৎপাদন হবে ৷ ফলে লিচু কিনতে এবার পকেটে টান পড়বে ৷"

তিনি আরও জানান, এখন গাছের গোড়ায় প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত জল দিতে হবে ৷ গুটি ধরে রাখার জন্য দু’বার প্ল্যানোফিক্স এবং বোরন স্প্রে করা প্রয়োজন ৷ পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে নিম তেল, সালফার এবং অ্যাজবিসাইড বা ইমিডাক্লোরোপিড জাতীয় কীটনাশক 15 দিন অন্তর দু'বার স্প্রে করতে হবে ৷

আরও পড়ুন: আলুর দাম তলানিতে, মাথায় হাত চাষিদের

মালদায় এবার ক্ষতির মুখে লিচুর ফলন

মালদা, 13 এপ্রিল: বঙ্গের গরম মানে আম, লিচু ৷ আর মালদা জেলা ৷ আমের গড় লিচুর জন্যও বিখ্যাত ৷ এখানে লিচুর স্বাদে মজেননি, এমন বাঙালি বিরল ৷ মালদা থেকে মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ-সহ গোটা দেশেই লিচু সরবরাহ হয় ৷ গত বছর প্রথমবার মালদার লিচুর স্বাদ পেয়েছে কাতার, বাহরিনের মতো ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিও ৷ সঙ্গে ইতালি, জার্মানির মতো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও ৷ রফতানিকারকদের আশা, এবারও ভিনদেশ থেকে মালদার লিচুর বরাত আসতে পারে ৷ কিন্তু বিধি বাম ৷ আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চলতি মরশুমে মালদায় লিচুর ফলন নেই বললেই চলে ৷ সেকথা মেনে নিয়েছে জেলা উদ্যানপালন দফতরও ৷

মালদা জেলার কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে লিচু চাষ হয় ৷ প্রায় 1 হাজার 570 হেক্টর জমিতে এই সুস্বাদু ফলের চাষ হয় ৷ সম্প্রতি চাঁচল 1 ও 2 এবং রতুয়া 1 ও 2 নম্বর ব্লকের ফুলহর নদীর অববাহিকাতেও লিচু চাষ হচ্ছে ৷ প্রধানত ফেব্রুয়ারিতে লিচুর মুকুল আসে ৷ 16-22 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা লিচুর মুকুলের জন্য উপযোগী ৷ মুকুল আসার সঙ্গে হালকা বৃষ্টি হলে আরও ভালো ৷ মুকুলে গুটি আসার পক্ষে 24-28 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড আবহাওয়া অত্যন্ত অনুকূল ৷ ফল পাকার সময় 27-28 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা থাকলে খুব ভালো ৷ গত মরশুমে এই জেলায় 14 হাজার 700 মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছিল ৷ জেলায় প্রতি বছর প্রায় 100 কোটি টাকার লিচুর ব্যবসা হয় ৷

এবার পরিস্থিতি প্রতিকূল ৷ কালিয়াচকের বাগানগুলিতে লিচু প্রায় নেই ৷ হাতে গোনা কয়েকটি বাগানে ফল দেখা গেলেও তা সামান্য ৷ তাও টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না, এ নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা ৷ কারণ, বৃষ্টির অভাব এবং রোগ-পোকার আক্রমণ ৷ পোকার হাত থেকে গাছের ফল বাঁচাতে নিজেই বাগানের গাছে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন কালিয়াচকের সিলামপুর গ্রামের লিচু কৃষক মহম্মদ লোকমান শেখ ৷ তিনি বলেন, "15-20 বছর ধরে লিচু চাষ করছি ৷ এবার অনুকূল তাপমাত্রা না-থাকায় মুকুল কম এসেছিল ৷ তার উপর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সেই মুকুলও ঝরে গিয়েছে ৷ এখন গাছে যেভাবে পোকামাকড়ের উপদ্রব শুরু হয়েছে, মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় ৷ কীটনাশক স্প্রে করে পোকামাকড়ের আক্রমণ রোখার চেষ্টা করছি ৷ এবার কিছু বাগানে তো একেবারেই মুকুল আসেনি ৷"

আরও পড়ুন: ফলন ও চাহিদা কম, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তরমুজ চাষিরা

লিচু চাষের পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদেরও ৷ কালিয়াচক মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ নাজিমুদ্দিনের কথায়, "আবহাওয়ার জন্য এবার কালিয়াচকের লিচু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ গত বছরের তুলনায় এবার 10 শতাংশ উৎপাদন হবে কি না সন্দেহ ৷ যেটুকু গুটি এসেছে, খরায় তাও ঝরে যাচ্ছে ৷ দিনে তাপমাত্রা অনেকটাই চড়ে যাচ্ছে, রাতে আবার ঠান্ডা ভাব ৷ আবহাওয়ার এই তারতম্য লিচু চাষের পক্ষে মোটেও উপযোগী নয় ৷ এখানে সেচ ব্যবস্থাও তেমন নেই ৷ তাই বাগানে জলসেচ দেওয়াটা খুব সমস্যার ৷ লিচু ভীষণ লাভজনক ব্যবসা ৷ এখন এখানকার লিচু বিদেশেও যাচ্ছে ৷ আমি এলাকার লিচু মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠাই ৷ এবার লিচুর দাম আকাশ ছোঁবে ৷"

জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েকও মালদায় লিচুচাষের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ৷ তিনি বলেন, "এখানে দু'ধরনের লিচুর চাষ হয় ৷ গুটি আর বোম্বাই ৷ বোম্বাই লিচুর চাহিদা সারা দেশেই রয়েছে ৷ এই প্রজাতির লিচুর চাষই এখানে বেশি হয় ৷ আবহাওয়ার তারতম্যে এবার অনেক জায়গায় মুকুলের পরিবর্তে পাতা বেরিয়ে গিয়েছে ৷ এতে উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে ৷ গতবার এই জেলায় 14 হাজার 700 মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছিল ৷ তার তুলনায় এবার প্রায় 50 শতাংশ কম উৎপাদন হবে ৷ ফলে লিচু কিনতে এবার পকেটে টান পড়বে ৷"

তিনি আরও জানান, এখন গাছের গোড়ায় প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত জল দিতে হবে ৷ গুটি ধরে রাখার জন্য দু’বার প্ল্যানোফিক্স এবং বোরন স্প্রে করা প্রয়োজন ৷ পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে নিম তেল, সালফার এবং অ্যাজবিসাইড বা ইমিডাক্লোরোপিড জাতীয় কীটনাশক 15 দিন অন্তর দু'বার স্প্রে করতে হবে ৷

আরও পড়ুন: আলুর দাম তলানিতে, মাথায় হাত চাষিদের

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.