মালদা, 31 মার্চ : 2017 সালে হরিশ্চন্দ্রপুরে বন্যা দুর্গতদের বিলি করা রাজ্যের ত্রাণে যে দুর্নীতি হয়েছিল, কলকাতা হাইকোর্টে কার্যত তা প্রমাণিত । প্রকৃত দুর্গতদের বদলে সেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে শাসকদলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে । আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন তিন রাঘববোয়াল । সেই বন্যার তথ্য জানতে চেয়ে ইতিমধ্যেই আরটিআই করেছে বাম-কংগ্রেস দুই দলই (RTI over Malda Flood) ৷ তবে তথ্য হাতে আসেনি ৷ সেই তথ্যের দাবিতে ধর্নায় বসেছেন দুই দলের নেতৃত্ব ৷
সেবারের বন্যায় হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকে প্রকৃত কাদের ক্ষতি হয়েছিল, বারবার তা জানতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব । অথচ সেই বন্যায় এই ব্লকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল বলে জানা যায় । এনিয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে একাধিকবার জানতে চাওয়া হলেও ব্লক প্রশাসন কোনও উত্তর দেয়নি বলে অভিযোগ । এই তথ্য জানতে শেষ পর্যন্ত আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্লক অফিসের সামনে গণ অবস্থান ও ধরনায় বসল বাম-কংগ্রেস ।
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক মোস্তাক আলম বলেন, "হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের বিডিও আইন কিংবা সংবিধান, কোনওটাই মানেন না । 2017 সালের বন্যায় এই ব্লকে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম জানতে আমরা অন্তত 40 বার তথ্য জানার অধিকার আইনে জানতে চেয়েছি । সেবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার এখানে প্রায় 20 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল । সেবার আরও কিছু ব্লকে বন্যা হয়েছিল । জেলায় মোট 58 কোটি টাকার ত্রাণ বরাদ্দ করা হয়েছিল । অন্যান্য ব্লক তার রিপোর্ট দিলেও এখানকার বিডিও তা দিচ্ছেন না । শাসকদলের নির্দেশে তিনি এই তথ্য জানাচ্ছেন না ।
মোস্তাক আলম বলেন আরও বলেন, "আমরা শুনেছি, ওই ত্রাণের 57 লক্ষ টাকা এই অফিসের একজন কর্মীর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে । শুধু তাই নয়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার টাকা ঢুকছে । এই ব্লকে কর্মরত একজনের নামে 204 বার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ঢুকেছে । এই দফতরের কর্মীরাও সরকারি টাকা দুর্নীতিতে জড়িত । আমি এনিয়ে ইতিমধ্যে আদালতে মামলা রুজু করেছি । আমি আদালতের কাছে সিবিআই কিংবা ক্যাগের মতো এজেন্সির মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছি ।"
অবস্থানে থাকা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শেখ খলিল বলেন, "শুধু বন্যাত্রাণ নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুটপাট হচ্ছে । বিশেষত হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকে । 100 দিনের কাজে কত টাকা যে লুট হয়েছে তার কোনও ঠিক নেই । মানুষ জেরবার হয়ে গিয়েছে । আমরা তথ্য জানার অধিকার আইনে কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিলাম । কিন্তু এই বিডিও কোনও আইন মানছেন না । বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে নানা প্রকল্পে আমরা বিডিও সহ জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি । কিন্তু কোনও তদন্ত করা হচ্ছে না । রূপশ্রী প্রকল্পেও লুট হয়েছে । একই দিনে মেয়ে আর মায়ের বিয়ে হচ্ছে । 10 ছেলেমেয়ের মা রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা পাচ্ছে । আসলে তৃণমূল দলটা দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে । আজকের এই অবস্থান নিয়ে তৃণমূলের লোকজন আমাদের শাসাচ্ছে । নিজেরা ব্লক অফিস ভেঙে আমাদের আসামী বানাবে বলছে । খুনের হুমকিও রয়েছে । তবু আমরা পিছু হঠব না।"
আরও পড়ুন : Covid Restrictions Withdrawn : রাজ্য থেকে উঠল করোনা বিধি, বহাল মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার
বাম-কংগ্রেসের এই অবস্থান বিক্ষোভ ও ধরনাকে কেন্দ্র করে আজ হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকে পুলিশি ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো । যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি । বিডিও বিজয় গিরি জানিয়েছেন, এনিয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে । 29 মার্চ তার নোটিশ করা হয়েছে । আগামী 18 এপ্রিল আরটিআইয়ের জবাব দিয়ে দেওয়া হবে ।