মালদা, 21 জুন : ডার্ক ওয়েবে অবাধ গতিবিধি ছিল কিনা জানা যায়নি ৷ তবে কালিয়াচক খুন কাণ্ডে ধৃত আসিফ যে ডিপ ওয়েবে পারদর্শী ছিল তা আগেই জানত পুলিশ ৷ সোমবার সেকথা জানান পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ৷ তিনি আরও জানান, প্রয়োজনে পুলিশ এই ঘটনার তদন্তে সিআইডির সহযোগিতা নিতে পারে ৷ গতকাল চারটি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হলেও তার রিপোর্ট পেতে চার থেকে পাঁচদিন লাগবে ৷
পরিবারের চার সদস্যকে খুনের ঘটনায় ধৃত আসিফ মহম্মদকে আজও জেরা করে পুলিশ ৷ খুনের পাশাপাশি পুলিশের কাছে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, তার আগ্নেয়াস্ত্র কেনার বিষয়টি ৷ জেরায় আসিফ পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে ৷ একেক বার একেক রকম কথা বলছে ৷ তবে দফায় দফায় জেরা করে পুলিশ তার কাছ থেকে পুরো তথ্য জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ ইতিমধ্যেই তার ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে ৷ সেখান থেকে আসিফের সাইবার ক্রাইমে যুক্ত থাকার কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে ৷ তবে তার সঙ্গে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগাযোগের তথ্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ৷
তবে একসঙ্গে বাড়ির চারজনকে খুন এবং তারপর ফাঁকা বাড়িতে তার নির্লিপ্ত বসবাসের বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশকে ৷ তবে কি আসিফ স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ? কারণ পুলিশি জেরায় তাকে একবারের জন্যও ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে ৷ পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ছোট থেকেই সে তার বাবার দৌলতে অপরাধ জগতটা দেখেছে ৷ তাই তার মধ্যে হয়তো অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার দেখা দেয় ৷ সে ভাবতে শুরু করে, মা-বাবার অগাধ সম্পত্তি থাকলেও তাকে হয়তো বঞ্চিত করা হতে পারে ৷ এমন মানসিক বিকারগ্রস্তরা সাধারণত একাকী থাকতে ভালোবাসে ৷ মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটারই তাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয় ৷ আসিফের স্বভাবও তেমনটাই ছিল ৷
পুলিশি জেরায় আসিফ নাকি জানিয়েছে, প্রথমে সে ভেবেছিল, পরিবারের সবাইকে গুলি করে খুন করবে ৷ কিন্তু তাতে দুটো সমস্যা ছিল ৷ প্রথমত, গুলির শব্দ সবাই শুনে ফেলত ৷ আর দ্বিতীয়ত, গুলিতে সবাই নিকেশ নাও হতে পারত ৷ তাই বছরখানেক ধরে তৈরি করা সেই পরিকল্পনা সে বাতিল করে ৷ নয়া নকশায় সবাইকে জলে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করার ব্যবস্থা করে সে ৷ তার জন্য নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী গুদামঘরটি তৈরি করে ৷ তাতে কোনও জানালা বা দরজা নেই ৷ শুধুমাত্র গুদামে ঢোকার জন্য একটি লোহার গেট রয়েছে ৷ কালিয়াচকেরই আলিপুর এলাকার এক রাজমিস্ত্রি সেই গুদামঘর তৈরি করেছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ ৷ ওই রাজমিস্ত্রির খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে ৷
লাগাতার জেরা করে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, গত নভেম্বরে আসিফ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কিনেছিল ৷ ঝাড়খণ্ডের কোনও অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অস্ত্রগুলি কিনেছিল সে ৷ দিন দশেক আগে সে দু'টি প্যাকেটে ভরে অস্ত্রগুলি তার দুই বন্ধুর কাছে রাখতে দেয় ৷ ফাঁকা বাড়িতে যে কয়েকজন বন্ধুর প্রবেশাধিকার ছিল, তার মধ্যে রয়েছে সাবির আলি ও মহম্মদ মারুফও ৷ তারা দু’জন এখনও পড়াশোনা করে ৷ তবে কীভাবে সে এত অস্ত্র কিনল, কেন কিনল, তা নিয়ে পুলিশকে এখনও ধোঁয়াশায় রেখেছে আসিফ ৷ একেকবার একেক রকম কথা বলছে সে ৷ তবে একটি বিষয়ে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত, এই খুন কাণ্ডে তার দাদা আরিফের কোনও যোগ ছিল না ৷ এখনও পর্যন্ত পুলিশ তাকে যে জেরা করেছে, এবং সে যা উত্তর দিয়েছে, তার সম্পূর্ণ সত্যতা রয়েছে বলেই জানাচ্ছে পুলিশ ৷
আরও জানান : কালিয়াচক খুনের তদন্তে ফরেনসিক দল আসছে
পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এদিন বলেন, "আদালতের মাধ্যমে 12 দিনের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে কালিয়াচক খুন কাণ্ডে ধৃত আসিফকে জেরার কাজ শুরু হয়েছে ৷ খুব তাড়াতাড়ি ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে ৷ পাঁচটি 7 মিলিমিটার স্বয়ংক্রিয় পিস্তল, 10টি ম্যাগাজিন ও 80 রাউন্ড কার্তুজ সে কোথা থেকে, কবে, কীভাবে সংগ্রহ করেছিল তা জানার চেষ্টা চলছে ৷ তার ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া যাবতীয় ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হচ্ছে ৷ মূলত তার ডিপ ওয়েব কার্যপ্রণালী এবং যদি সে ডার্ক ওয়েবেও পারদর্শী হয়ে থাকে, সেসব জানার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ তবে সে ডার্ক ওয়েব অপারেট করত কিনা, তা নিয়ে এখনও আমরা নিশ্চিত নই ৷ তবে আগে আমরা ওর ল্যাপটপে ডিপ ওয়েব সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছিলাম ৷ তার মানসিক স্থিতিও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে ৷ তবে ও যে বিট কয়েন ব্যবহার করত কিংবা রাখত, তার কোনও প্রমাণ এখনও আমরা পাইনি ৷ আমরা সেটা নিয়েও তদন্ত করছি ৷ যদি সে বিট কয়েন রেখেও থাকে, তা কোনও বেআইনি কাজে ব্যবহার করত কিনা সেটাই আমরা খতিয়ে দেখতে চাইছি ৷ তবে খুনের সঙ্গে আসিফ ছাড়া আমরা আর কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাইনি ৷"
পুলিশ সুপার এদিন আরও জানিয়েছেন, আপাতত পুলিশই এই ঘটনার তদন্ত করছে ৷ তাঁদের আশা, মাসখানেকের মধ্যে মামলার চার্জশিট তাঁরা আদালতে জমা দিতে পারবেন ৷ প্রয়োজন পড়লে তদন্তে সিআইডির সহায়তাও নেওয়া হবে ৷ গতকাল মালদা মেডিক্যাল কলেজের চারজন চিকিৎসকের একটি বিশেষজ্ঞ দল মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্ত করেছেন ৷ চার মাস আগে পুঁতে দেওয়া দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেতে চার থেকে পাঁচদিন লাগবে ৷
আরও পড়ুন : Malda Murder : চার মাস আগে পরিবারের চারজনকে খুন, বাড়িতে পুঁতে রেখে বাস ছেলের