মালদা, 2 মে: কোচবিহার থেকে শুরু হওয়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচি বুধবার মালদায় প্রবেশ করবে ৷ নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আগামিকাল রাতে রতুয়ার সামসীতে জনসভা করার পর তিনি চাঁচল স্টেডিয়ামের অস্থায়ী ক্যাম্পে রাত্রি যাপন করবেন ৷ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে রতুয়া এবং চাঁচলে আরও একবার তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে ৷ কেউ দলের জেলা চেয়ারম্যানকে, আবার কেউ এলাকার দলীয় বিধায়ককে লক্ষ্য করে তোপ দাগছেন ৷ আগামিকাল অভিষেকের উপস্থিতিতে এই জল কতটা গড়ায়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহল ৷
নব্যদের চাপে কোণঠাসা শাসকদলের পুরোনো নেতা তথা টানা 11 বছর রতুয়া 1 নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ফজলুল হক মঙ্গলবারও দলের জেলা চেয়ারম্যান তথা এলাকার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন ৷ তিনি বলেন,“এর আগে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি, সমর মুখোপাধ্যায় এবং আবদুল রহিম বকসি দলে যোগ দেওয়ার পর 2018 সাল থেকে অত্যন্ত পরিকল্পনা করে তাঁরা পুরনো তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একঘরে করার চেষ্টা করছেন ৷ যাঁরা রতুয়ায় তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে, তাঁদের এখন ঘরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ সম্প্রতি বিশাল বড় ব্লক ও জেলা কমিটি তৈরি করা হলেও তাতে আমাদের নাম নেই ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসংযোগ যাত্রা চলছে ৷ সেই পরিকল্পনা থেকেও আমাদের বাইরে রাখা হয়েছে ৷ আমরা তাঁর মুখোমুখি হয়ে সব ঘটনা জানাতে চাইছি ৷" এই তৃণমূল নেতার দাবি, এরকম চলতে থাকলে আগামিদিনে রতুয়ায় দল বিপন্ন হয়ে যাবে ৷
সমর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দলে অন্তর্ঘাত করার অভিযোগ তুলেছেন ফজলুল সাহেব ৷ তাঁর অভিযোগ, সমর মুখোপাধ্যায় এখন কৌশলে কংগ্রেসকে সাহায্য করছেন ৷ তিনি হেসামুউদ্দিনের স্ত্রী আলতাফুন নেশাকে রতুয়া 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করেছেন ৷ অথচ সেই হেসামুউদ্দিনই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন ৷ এভাবেই তিনি তৃণমূল ভেঙে কংগ্রেসকে নতুন করে গড়ছেন ৷ ফজলুল হকের দাবি, এভাবে কৌশল করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কংগ্রেসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ৷ অনেক নেতা-কর্মী দল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন ৷ তবে তিনি তৃণমূল ছাড়ছেন না-বলেও জানিয়েছেন এই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা ৷
এ তো গেল রতুয়ার কথা ৷ চাঁচলেও ঘাসফুলের অন্দরে দ্বন্দ্বের সুর ৷ ওই এলাকার নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য সামিউল ইসলাম চাঁচলের দলীয় বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষকে পরিযায়ী বিধায়ক বলে সম্বোধন করছেন ৷ তাঁর বক্তব্য, “বিধায়কের নাম আমি মুখে আনতে চাই না ৷ তিনি বাড়িতে বসে নিজের পছন্দের লোকজন এবং কিছু ঠিকাদার নিয়ে দল চালাচ্ছেন ৷ তাদের পরামর্শে অঞ্চল ও বুথ সভাপতিদের নিয়োগ করেছেন ৷ পঞ্চায়েতের প্রার্থীও তিনি ঠিক করে ফেলেছিলেন ৷ কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধায়ের নির্দেশে মিনি ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বিধায়ক থমকে গিয়েছেন ৷" এই নেতাও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানাবেন বলে জানিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: 'খুনি মমতার শেষ দেখে ছাড়ব', উত্তাল ময়নায় গিয়ে বিজেপি নেতার মৃত্যুতে সিবিআই চাইলেন শুভেন্দু
যদিও তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সমর মুখোপাধ্যায় কিংবা নীহাররঞ্জন ঘোষ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি ৷ সম্ভবত অভিষেকের জেলা সফরের আগে তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটে রাখাকেই শ্রেয় মনে করেছেন ৷