মালদা, ২২ জানুয়ারি: তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর। পঞ্চায়েত দপ্তরের মধ্যেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন প্রধান ও দলের কয়েকজন সদস্য৷ দু’পক্ষই একে অন্যের উপর লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ৷ এই ঘটনায় দু’পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে৷ আহত হয়েছেন দু’পক্ষেরই বেশ কয়েকজন৷ অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ৷
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা৷ পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের কাজে টেন্ডারে দুর্নীতি নিয়ে তাঁরা পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন৷ নেতৃত্বে ছিলেন রফিকুল ইসলাম ও মোবারক হোসেন৷ সেই সময় প্রধান ও তাঁর অনুগামীরা তাঁদের উপর হামলা চালান৷ যদিও প্রধানের পালটা অভিযোগ, দলেরই এক পঞ্চায়েত সদস্যের নেতৃত্বে কয়েকজন দপ্তরে ঢুকে তাঁর উপর হামলা চালান৷ পঞ্চায়েত দপ্তর ভাঙচুর করেন৷
পঞ্চায়েত প্রধান মহম্মদ তোফাজ্জল হক বলেন, “ঘটনার সময় পঞ্চায়েত সচিব-সহ আরও অনেকে আমার ঘরে ছিলেন৷ ওঁরা ঘরে ঢুকেই বলেন, আমাকে বেআইনি টেন্ডার করতে হবে৷ আমি রাজি না-হওয়ায় তাঁরা আমার উপর হামলা চালান৷ আমার ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দেন৷ আমার সারা শরীরে আঘাত করেন৷ দপ্তরেও ভাঙচুর চালিয়েছেন তাঁরা৷ ওঁরা আগে কংগ্রেস করলেও এখন তৃণমূল করেন৷ আমি গোটা ঘটনা জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি৷”
যদিও পঞ্চায়েত সদস্য মোবারক হোসেনের দাবি, “আমরা পঞ্চায়েত দপ্তরে কোনও ভাঙচুর করিনি৷ টেন্ডারে দুর্নীতির বিষয় নিয়ে আমরা প্রথমে বিডিওকে অভিযোগ জানাতে যাই৷ তিনি প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন৷ সেই মতো আমরা প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে যাই৷ তাঁর ঘরে আমরা বসারও সুযোগ পাইনি৷ টেন্ডারের কথা বলতে গেলেই প্রধান ও তাঁর পরিবারের লোকজন আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ আমাদের বেধড়ক মারধর করা হয়৷ আমরা তিনজনই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য৷ আড়াই বছর ধরে তৃণমূল করছি৷ আমরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি৷”
একুশের ভোটের আগে এই ঘটনা অস্বস্তি বাড়িয়েছে শাসকদলে৷ দলের জেলা মুখপাত্র শুভময় বসু বলেন, “দৌলতপুরের ঘটনা শুনেছি৷ সমস্যার সমাধান করতে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক সভাপতিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ দলীয় প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে যে সমস্যা রয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলার জন্য তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ ঘটনায় যথাযথ তদন্তের জন্য প্রশাসনের কাছেও আবেদন করা হয়েছে৷”
অন্যদিকে, বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, “দিদির অনুপ্রেরণাতেই এ সব হচ্ছে৷ গোটা রাজ্যেই এমন ঘটনা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে৷ সম্ভবত এখানে ভোটের আগে প্রধান একটু ভালো হতে গিয়েছিল৷ প্রধানও নাকি দুর্নীতিতে যুক্ত ছিল৷ এতদিন বিজেপি কিংবা বিরোধীরা যা বলে আসছিল, এখন শাসকদলের লোকজনই সেটা বলছে৷ তাই মারপিট হচ্ছে৷ শান্তির জন্য মানুষ একুশের ভোটের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমরা ক্ষমতায় এসে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করছি৷”