মালদা, 1 সেপ্টেম্বর : ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে ফর্ম হাতে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছিলেন মহিলারা ৷ সেই সময়েই শিবিরে এসে পৌঁছন থানার আধিকারিকরা ৷ মহিলাদের জিজ্ঞাসা করে তাঁরা জানতে পারেন, যেহেতু তাঁরা নিজেরা ফর্ম ফিল আপ করতে পারেন না, তাই দৌড়োদৌড়ি করছেন, যাতে কেউ অন্তত তাঁদের ফর্ম ফিল আপ করে দেন ৷ এরপরই বন্দুক, লাঠি সরিয়ে হাতে কলম তুলে নেন ইংরেজবাজার থানার আইসি ৷ ঘণ্টা দু’য়েক ধরে নিজেই আবেদনকারীদের ফর্ম পূরণ করে দেন তিনি ৷ তাঁর আচরণ মন কেড়েছে শিবিরে আসা মানুষজনের ৷ মালদার ইংরেজবাজারের কোতওয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোতওয়ালি জুনিয়র বেসিক বিদ্যালয়ের ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে এমনই ছবি ক্য়ামেরাবন্দি করলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ ফর্ম পূরণ করতে দেখা গেল সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও ৷ পুলিশ দিবসে এর থেকে ভাল ছবি আর কীই বা হতে পারে !
আরও পড়ুন : রামপুরহাটে ভিখারি-ভবঘুরেদের অন্নদাতা পুলিশ
দ্বিতীয় দফায় দুয়ারে সরকার শিবির শুরু করেছে রাজ্য সরকার ৷ এই শিবির থেকে সাধারণ মানুষ সমস্ত সরকারি প্রকল্প ও পরিষেবা নেওয়ার জন্য সরাসরি আবেদন করতে পারবেন ৷ কিন্তু, গ্রামীণ এলাকায় বেশিরভাগ মানুষই নিরক্ষর ৷ ফলে তাঁদের পক্ষে ফর্ম পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না ৷ অভিযোগ, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ব্যবসা ফেঁদে বসেছে কিছু অসাধু ব্যক্তি ৷ কখনও 50, কখনও 100 টাকার বিনিময়ে ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছে তারা ৷ মঙ্গলবার মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরেও এমন ঘটনা ঘটেছে ৷ আর বুধবারই দেখা গেল একেবারে অন্য ছবি ৷ যা সকলের মন ভাল করে দেয় ৷
এদিন ইংরেজবাজারের কোতওয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ন’টি জায়গায় দুয়ারে সরকার শিবিরের আয়োজন করা হয় ৷ বেলা 11 টা নাগাদ শিবির পরিদর্শনে বের হন ইংরেজবাজার থানার আইসি আশিস দাস ৷ কোতওয়ালি জুনিয়র বেসিক বিদ্যালয়ে ঢোকার পরই ফর্ম পূরণ নিয়ে এলাকার মহিলাদের সমস্যার কথা জানতে পারেন তিনি ৷ এরপরই শিবিরে বসে ফর্ম পূরণ করতে শুরু করে দেন আইসি ৷ এগিয়ে আসেন সিভিক ভলান্টিয়াররাও ৷ তাঁরাও বেশ কিছু মহিলার ফর্ম পূরণ করে দেন।
কোতওয়ালির মিঞা পাড়ার বাসিন্দা তাসনারা বিবি বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য আবেদন করতে এসেছি ৷ কিন্তু নিজে ফর্ম পূরণ করতে পারিনি ৷ পুলিশ আমার ফর্ম ফিল আপ করে দিয়েছে ৷ সকাল থেকে প্রায় 200 জনের ফর্ম ফিল আপ করে দিয়েছে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়াররা ৷ আমরা এতে খুব খুশি ৷” একই বক্তব্য আর এক মহিলা ময়না সূত্রধরেরও ৷ তিনি বলেন, “কোতওয়ালি প্রাইমারি স্কুলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম ফিল-আপ করতে এসেছি ৷ আমরা ফর্ম ফিল-আপ করতে পারি না ৷ তাই পুলিশ স্যার আমাদের ফর্ম ফিল-আপ করে দিচ্ছে ৷ এতে আমাদের মতো মানুষদের খুবই উপকার হচ্ছে ৷ এভাবে আমাদের পাশে থাকার জন্য আমরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ৷’’
আরও পড়ুন : Purulia : পুরুলিয়ার থানায় শিশুদের জন্য ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি কর্নার’
ইংরেজবাজার থানার আইসি আশিস দাস অবশ্য বলেন, তাঁদের কাজই মানুষের পাশে থাকা ৷ সারাবছর সেটাই করেন তাঁরা ৷ এদিন শিবিরে এসে আশিস দেখেন, ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে কিছু মানুষ সমস্য়ায় পড়েছেন ৷ তাই সাধ্য মতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা ৷ যেটা তাঁদের কর্তব্য বলেই জানিয়েছেন ইংরেজবাজার থানার আইসি ৷