মালদা, 6 জুলাই: ও ঘর, এ ঘরের যাতায়াতে ভোটের নাটক জমজমাট ৷ দু'দিন আগে যে বাম ও কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা শাসকদলের জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থীর হাত ধরে ঘাসফুল শিবিরে গিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার তাঁরা আবারও নিজেদের পুরোনো ঘরে ফিরে এলেন ৷ গোটা ঘটনায় তৃণমূলের পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে ত্রাস তৈরির অভিযোগ তুলেছে বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷ এ নিয়ে পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া না-পাওয়া গেলেও শাসকদল দাবি করেছে, ভোটের আগে এসব বিরোধীদের গল্প ৷
- নঘরিয়ায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষ
প্রসঙ্গত, ইদের আগের রাতে ইংরেজবাজার ব্লকের ফুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুন নঘরিয়া গ্রামে কংগ্রেস-তৃণমূলের সংঘর্ষ বাধে ৷ বোমাবাজির পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় দুটি বাড়িতে ৷ ভাঙচুর করা হয় অন্তত পাঁচটি বাড়ি ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরদিন গ্রামে রুট মার্চ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী ৷ এই ঘটনায় দু'পক্ষই ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ৷ পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে ৷ তবে বিরোধীরা প্রথম থেকেই অভিযোগ জানায়, শাসকদলের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের তিনজনকে গ্রেফতার করলেও কংগ্রেসের দায়ের করা অভিযোগে কোনও গুরুত্ব দেয়নি ৷
- তৃণমূলে যোগ বাম ও কংগ্রেসের শতাধিক কর্মীর
এই ঘটনায় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ফুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের 2/2 বুথের সিপিএম প্রার্থী হুসনারা বিবির দেওর ওয়াসিম আক্রাম এবং কংগ্রেসের দুই কর্মী ওয়ারেশ সবজি ও বাগ্গু শেখকে গ্রেফতার করে ৷ ধৃত তিনজনকে আদালতে পেশ করা হলে তিনজনেরই জেল হেফাজত হয় ৷ অভিযোগ, এই ঘটনার পর ইংরেজবাজার থানার আইসি'র নেতৃত্বে মাঝরাতে বিরোধীদের বাড়িতে তল্লাশির নামে হামলা চালায় পুলিশ ৷ এরপরেই গত 2 জুলাই এই এলাকার জেলা পরিষদ আসনের তৃণমূল প্রার্থী প্রতিভা সিংয়ের নেতৃত্বে শাসকদলে যোগ দেন বাম-কংগ্রেসের শতাধিক কর্মী ৷ আজ তাঁরা ফের নিজেদের পুরোনো দলে ফিরে এসেছেন ৷
- শাসকদলে যোগ দেওয়ার দু'দিন পর ঘর ওয়াপসি কেন?
ধৃত ওয়াসিমের দাদা সামিউল শেখ কথায়, ভাইকে মুক্ত করতে আমরা তৃণমূলের ঝান্ডা ধরেছিলেন ৷ তৃণমূল বলেছিল, 4 তারিখ আমাদের হাতে ঘাসফুলের ঝান্ডা তুলে দেবে ৷ সেদিনই ভাই-সহ কংগ্রেসের দু'জন জেল থেকে ছাড়া পাবে ৷ কিন্তু ওঁরা 2 তারিখই আমাদের হাতে ঝান্ডা তুলে দেয় ৷ 4 তারিখ ভাই কিংবা বাকি দু'জনকে ঘরে ফিরিয়ে দিতে পারেনি ৷ তাই আজ পুরোনো দলে ফিরে এসেছি ৷ সেদিন আমরা কোনও মারামারি করিনি ৷ অথচ পুলিশ মাঝরাতে গ্রিল ভেঙে আমাদের বাড়িতে ঢোকে ৷ আইসি নিজে হুমকি দেন, গেট না খুললে আমাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেবেন ৷ তাই বাড়ির মহিলারা গেট খুলতে বাধ্য হয়৷ পুরোনো দলে ফিরে আমাদের ভালো লাগছে ৷ এখন এখানে সিপিএম-কংগ্রেস এক৷ আমরা কাউকে ভয় পাচ্ছি না ৷
- 400 কর্মী ফিরলেন পুরোনো দলে
আজ ঘর ওয়াপসির আসরে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৌশিক মিশ্র ও এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক মোত্তাকিন আলম ৷ কৌশিক বলেন, "আগের দিন প্রতিভা সিং বলেছিলেন, সিপিএম-কংগ্রেসের 400 কর্মী নাকি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ৷ আজ সেই 400 কর্মীই ফের নিজেদের পুরোনো দলে ফিরে এসেছেন ৷ নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই তৃণমূল এখানে ব্যাপক সন্ত্রাস চালাচ্ছে ৷ ইংরেজবাজার থানা ও মিলকি ফাঁড়ির পুলিশের নেতৃত্বে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে ৷ এ নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে জেলাশাসককে অভিযোগ জানিয়েছি ৷ বেছে বেছে সিপিআইএম-কংগ্রেস কর্মীদের বাড়িকে টার্গেট করা হয়েছে ৷ প্রার্থী হুসনারা বিবির বাড়িতে রাত দেড়টার সময় তৃণমূলের দু'জন নেতাকে নিয়ে পুলিশ তল্লাশির নামে সন্ত্রাস চালিয়েছে ৷ আমাদের তিনজন কোনও অপরাধ না করে জেলে আছে ৷ ভয়ে আমাদের কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিল ৷ আজ তারা ফের পুরোনো দলে ফিরে এসেছে ৷"
- তৃণমূলকে আক্রমণ প্রাক্তন বাম বিধায়কের
মোত্তাকিন সাহেবের দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর তৃণমূল দলটাই আর থাকবে না ৷ সবাই কংগ্রেস ও সিপিএমে চলে আসবে ৷ এখন কেউ তৃণমূল করতে চাইছে না ৷ নঘরিয়ায় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে ৷ কারণ, ওরা জানে মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করেছে ৷ কর্মীদের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে বলা হয়েছে ৷ তারা কেউ যেন তৃণমূলের প্ররোচনায় পা না দেয় ৷ মানুষ তাদের সঙ্গে রয়েছে ৷ কারণ, মানুষ জানে, এবার আর লুঠের পঞ্চায়েত হবে না ৷ মানুষের পঞ্চায়েত হবে ৷
আরও পড়ুন: কংগ্রেস-তৃণমূলের নির্বাচনি সংঘর্ষে গ্রেফতার 3, নঘরিয়া গ্রামে ঈদের আনন্দ বদলে গিয়েছে আতঙ্কে
যদিও গোটা ঘটনাকে বিরোধীদের গল্প বলে আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ তিনি বলেন, "এটা পুরোটাই গল্প ৷ বিরোধীদের ষড়যন্ত্র ৷ মালদা জেলার পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে বলে আজ সব দল নির্বিঘ্নে মনোনয়ন দাখিল করেছে, ভোট প্রচার করছে ৷ এখানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রত্যেকে ভোট দেবে ৷ বিরোধীদের মদতে কিছু দুষ্কৃতী পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে ৷ যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই গুরুতর অভিযোগ রয়েছে ৷ সিপিএম-কংগ্রেসের লোক নিয়ে ভোট করানোর মতো দুর্দিন তৃণমূলের আসেনি ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে ৷"