ETV Bharat / state

Sericulture in Malda: তীব্র তাপপ্রবাহে নষ্টের মুখে রেশম চাষ, সরকারি অনুদানের দাবি চাষিদের

author img

By

Published : Apr 22, 2023, 8:11 PM IST

একদিকে অতিরিক্ত গরমে নাজেহাল অবস্থা মালদাবাসীর ৷ অন্যদিকে পারদ যত চড়ছে তার প্রভাব শুধু শরীরে নয়, পড়ছে চাষেও ৷ আমের পাশাপাশি মালদা সুনাম অর্জন করেছে রেশম চাষে ৷ তবে এবারের তীব্র তাপপ্রবাহে সেই রেশম চাষে পড়ছে ভাঁটা ৷ বেশি তাপমাত্রা থাকায় শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পলুপোকা ৷ যার জেরে গরমে পুরোপুরি ক্ষতির মুখে বৈশাখি মরশুমের রেশম চাষ ৷

silk cultivation
রেশম চাষ
তীব্র তাপপ্রবাহে নষ্টের মুখে রেশম চাষ

মালদা, 22 এপ্রিল: মালদা জেলাকে দেশের মানুষ আম-রেশমের দেশ হিসাবেই চেনেন ৷ এই জেলার আম শুধু দেশেই নয়, ভিনদেশেও সুখ্যাতি কুড়িয়েছে ৷ একই কথা রেশমের ক্ষেত্রেও খাটে ৷ কয়েকশো বছর ধরে মালদায় রেশমচাষ হয়ে আসছে ৷ একসময় এখানকার রেশমের সুতোয় তৈরি কাপড়ে শরীর ঢাকতেন মোগল বাদশারাও ৷ সময় গড়ানোর সঙ্গে জেলার রেশম চাষেও অনেক পরিবর্তন আসে ৷ এরই মধ্যে বাজারে চলে আসে সস্তার চিনা রেশম ৷ তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছিল না মালদার সোনালি তন্তু ৷ তাই প্রায় 30 বছর আগে এই জেলায় জাপানি বাইভোল্টাইন রেশম সুতোর উৎপাদনে জোর দিয়েছিল রাজ্য সরকার ৷ তার সুফলও মিলতে শুরু করেছিল ৷ কিন্তু এ বছর বৈশাখি মরশুমে রেশম চাষে বড় ধাক্কা দিয়েছে আবহাওয়া ৷ 43 ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রায় শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পলুপোকা ৷ এই পরিস্থিতিতে ঘুম উড়েছে জেলার রেশম চাষিদের ৷

এই রাজ্যে মালদা, মুর্শিদাবাদ, কালিম্পং-সহ কয়েকটি জেলায় রেশমচাষ হয় ৷ গোটা রাজ্যে প্রায় এক লক্ষ পরিবার এইচাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ৷ তার মধ্যে শুধুমাত্র মালদা জেলাতেই সেই সংখ্যাটি প্রায় 66 হাজার ৷ সম্প্রতি উন্নত মানের রেশম চাষ ও উৎপাদনের জন্য বিশেষ প্রকল্প নেয় রাজ্য সরকার ৷ ওই প্রকল্পে উন্নত প্রজাতির জাপানি পলুপোকা চাষ-সহ বেশ আরও কিছু স্কিম ধরা হয়েছিল ৷ তবে ওই প্রজাতির পলুপোকার ডিম উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল ৷ যাই হোক, সব বাধা পেরিয়ে চলতি বৈশাখি মরশুমে জেলার রেশম চাষিদের চার লক্ষ 55 হাজার 500 জাপানি পলুপোকার ডিম সরবরাহ করা হয়েছিল ৷ কিন্তু প্রখর তাপে সেই চাষ প্রায় পুরোটাই নষ্ট হতে বসেছে ৷

Sericulture
রেশম চাষে ক্ষতি

জাপানি বাইভোল্টাইন প্রজাতির রেশম কীট পালনের জন্য 23 থেকে 32 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপযোগী ৷ কিন্তু দিন দশেক আগেই জেলার তাপমাত্রা 40 ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর পেরিয়েছে ৷ গত কয়েকদিনে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল 43.6 ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৷ এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পলুপোকা ৷ চাষিরা জানাচ্ছেন, আগে গরম পড়লেও এমন তাপমাত্রা দেখা যায়নি ৷ এর আগে অত্যধিক গরমের সময় পলুপোকা পালনের ঘরের চালার উপর কচুরিপানা দেওয়া হত ৷ ঘরের চারদিকে জলে ভেজানো খসখসের পর্দা টাঙানো হত ৷ তাতে পোকার ঘর ঠাণ্ডা থাকত ৷ এখন পুকুরে কচুরিপানা পাওয়া যায় না বললেই চলে ৷ খসখসের পর্দা তো এখন প্রায় বিরল ৷ এই সময় বৈদ্যুতিক পাখার হাওয়াতেই পলুপোকার ঘর ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করা হয় ৷ তবে 40 ডিগ্রি পেরোনো তাপ সেই হাওয়াতেও হলকা ছড়িয়ে দেয় ৷

মালদা জেলায় প্রায় 22 হাজার হেক্টর জমিতে রেশমচাষ হয় ৷ জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকে এই চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি রেশম উৎপাদন হয় কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে ৷ কালিয়াচকের খিখিরবোনা গ্রামের রেশমচাষি মহম্মদ সানাউল্লাহ বলছেন, "বৈশাখি মরশুমে জালালপুর ডিম উৎপাদন কেন্দ্র থেকে এক হাজার বাইভোল্টাইন পলুপোকার ডিম কিনেছিলাম ৷ কিন্তু প্রচণ্ড তাপে পোকা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ শুধু আমার নয়, কোনও চাষিরই পলুর পরিস্থিতি ভালো নেই ৷ একটু বৃষ্টি হলে পলুপোকা বাঁচানো যেত ৷ কিন্তু বৃষ্টিরও দেখা নেই ৷ এর আগে এমন আবহাওয়া আমরা কখনও পাইনি ৷ এই পরিস্থিতিতে আমরা সরকারি অনুদানের দাবি জানাচ্ছি ৷"

Sericulture
বেশি তাপমাত্রায় শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পলুপোকা

একই বক্তব্য মোজমপুর গ্রামের রেশমচাষি আশু শেখেরও ৷ তিনি বলেন, "এবার বাইভোল্টাইন প্রজাতির 500 ডিম পেয়েছিলাম ৷ ডিম থেকে পোকাও ভালো বেরিয়েছিল ৷ কিন্তু তাপের জন্য পোকা নষ্ট হয়ে গেল ৷ এত তাপ পলুপোকা সহ্য করতে পারে না ৷ এই পরিস্থিতিতে কী করব, ভেবে উঠতে পারছি না ৷ তাপের জন্য এবার আমরা মরে গেলাম ৷ আগে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি ৷ অল্পবিস্তর পোকা নষ্ট হলেও রেশমের উৎপাদন ভালোই হত৷ কিন্তু এবার সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ এই অবস্থায় আমরা সরকারি অনুদানের দিকে তাকিয়ে রয়েছি ৷ তার জন্য সেরিকালচার দফতরে আবেদন জানাব ৷"এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া পেতে জেলা রেশম দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সন্তোষ কুমারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি ৷

আরও পড়ুন: প্রচণ্ড গরমে ক্ষতির আশঙ্কা ! লিচুর ফলনে দুশ্চিন্তায় মালদার কৃষকরা

তীব্র তাপপ্রবাহে নষ্টের মুখে রেশম চাষ

মালদা, 22 এপ্রিল: মালদা জেলাকে দেশের মানুষ আম-রেশমের দেশ হিসাবেই চেনেন ৷ এই জেলার আম শুধু দেশেই নয়, ভিনদেশেও সুখ্যাতি কুড়িয়েছে ৷ একই কথা রেশমের ক্ষেত্রেও খাটে ৷ কয়েকশো বছর ধরে মালদায় রেশমচাষ হয়ে আসছে ৷ একসময় এখানকার রেশমের সুতোয় তৈরি কাপড়ে শরীর ঢাকতেন মোগল বাদশারাও ৷ সময় গড়ানোর সঙ্গে জেলার রেশম চাষেও অনেক পরিবর্তন আসে ৷ এরই মধ্যে বাজারে চলে আসে সস্তার চিনা রেশম ৷ তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছিল না মালদার সোনালি তন্তু ৷ তাই প্রায় 30 বছর আগে এই জেলায় জাপানি বাইভোল্টাইন রেশম সুতোর উৎপাদনে জোর দিয়েছিল রাজ্য সরকার ৷ তার সুফলও মিলতে শুরু করেছিল ৷ কিন্তু এ বছর বৈশাখি মরশুমে রেশম চাষে বড় ধাক্কা দিয়েছে আবহাওয়া ৷ 43 ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রায় শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পলুপোকা ৷ এই পরিস্থিতিতে ঘুম উড়েছে জেলার রেশম চাষিদের ৷

এই রাজ্যে মালদা, মুর্শিদাবাদ, কালিম্পং-সহ কয়েকটি জেলায় রেশমচাষ হয় ৷ গোটা রাজ্যে প্রায় এক লক্ষ পরিবার এইচাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ৷ তার মধ্যে শুধুমাত্র মালদা জেলাতেই সেই সংখ্যাটি প্রায় 66 হাজার ৷ সম্প্রতি উন্নত মানের রেশম চাষ ও উৎপাদনের জন্য বিশেষ প্রকল্প নেয় রাজ্য সরকার ৷ ওই প্রকল্পে উন্নত প্রজাতির জাপানি পলুপোকা চাষ-সহ বেশ আরও কিছু স্কিম ধরা হয়েছিল ৷ তবে ওই প্রজাতির পলুপোকার ডিম উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল ৷ যাই হোক, সব বাধা পেরিয়ে চলতি বৈশাখি মরশুমে জেলার রেশম চাষিদের চার লক্ষ 55 হাজার 500 জাপানি পলুপোকার ডিম সরবরাহ করা হয়েছিল ৷ কিন্তু প্রখর তাপে সেই চাষ প্রায় পুরোটাই নষ্ট হতে বসেছে ৷

Sericulture
রেশম চাষে ক্ষতি

জাপানি বাইভোল্টাইন প্রজাতির রেশম কীট পালনের জন্য 23 থেকে 32 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপযোগী ৷ কিন্তু দিন দশেক আগেই জেলার তাপমাত্রা 40 ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর পেরিয়েছে ৷ গত কয়েকদিনে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল 43.6 ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৷ এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পলুপোকা ৷ চাষিরা জানাচ্ছেন, আগে গরম পড়লেও এমন তাপমাত্রা দেখা যায়নি ৷ এর আগে অত্যধিক গরমের সময় পলুপোকা পালনের ঘরের চালার উপর কচুরিপানা দেওয়া হত ৷ ঘরের চারদিকে জলে ভেজানো খসখসের পর্দা টাঙানো হত ৷ তাতে পোকার ঘর ঠাণ্ডা থাকত ৷ এখন পুকুরে কচুরিপানা পাওয়া যায় না বললেই চলে ৷ খসখসের পর্দা তো এখন প্রায় বিরল ৷ এই সময় বৈদ্যুতিক পাখার হাওয়াতেই পলুপোকার ঘর ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করা হয় ৷ তবে 40 ডিগ্রি পেরোনো তাপ সেই হাওয়াতেও হলকা ছড়িয়ে দেয় ৷

মালদা জেলায় প্রায় 22 হাজার হেক্টর জমিতে রেশমচাষ হয় ৷ জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকে এই চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি রেশম উৎপাদন হয় কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে ৷ কালিয়াচকের খিখিরবোনা গ্রামের রেশমচাষি মহম্মদ সানাউল্লাহ বলছেন, "বৈশাখি মরশুমে জালালপুর ডিম উৎপাদন কেন্দ্র থেকে এক হাজার বাইভোল্টাইন পলুপোকার ডিম কিনেছিলাম ৷ কিন্তু প্রচণ্ড তাপে পোকা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ শুধু আমার নয়, কোনও চাষিরই পলুর পরিস্থিতি ভালো নেই ৷ একটু বৃষ্টি হলে পলুপোকা বাঁচানো যেত ৷ কিন্তু বৃষ্টিরও দেখা নেই ৷ এর আগে এমন আবহাওয়া আমরা কখনও পাইনি ৷ এই পরিস্থিতিতে আমরা সরকারি অনুদানের দাবি জানাচ্ছি ৷"

Sericulture
বেশি তাপমাত্রায় শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পলুপোকা

একই বক্তব্য মোজমপুর গ্রামের রেশমচাষি আশু শেখেরও ৷ তিনি বলেন, "এবার বাইভোল্টাইন প্রজাতির 500 ডিম পেয়েছিলাম ৷ ডিম থেকে পোকাও ভালো বেরিয়েছিল ৷ কিন্তু তাপের জন্য পোকা নষ্ট হয়ে গেল ৷ এত তাপ পলুপোকা সহ্য করতে পারে না ৷ এই পরিস্থিতিতে কী করব, ভেবে উঠতে পারছি না ৷ তাপের জন্য এবার আমরা মরে গেলাম ৷ আগে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি ৷ অল্পবিস্তর পোকা নষ্ট হলেও রেশমের উৎপাদন ভালোই হত৷ কিন্তু এবার সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ এই অবস্থায় আমরা সরকারি অনুদানের দিকে তাকিয়ে রয়েছি ৷ তার জন্য সেরিকালচার দফতরে আবেদন জানাব ৷"এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া পেতে জেলা রেশম দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সন্তোষ কুমারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি ৷

আরও পড়ুন: প্রচণ্ড গরমে ক্ষতির আশঙ্কা ! লিচুর ফলনে দুশ্চিন্তায় মালদার কৃষকরা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.