হরিশচন্দ্রপুর, 25 মে : অপহরণের 10 দিন পর বাড়ির অদূরে একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার হল তৃণমূলকর্মীর মুণ্ডহীন দেহ (headless body of tmc worker recovered at harishchandrapur )। বুধবারের এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের কাতলামারি এলাকায় । এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আপাতত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । পুলিশি তদন্তে ঘটনার সঙ্গে এক মহিলার যোগও উঠে আসছে । খুনের ঘটনায় জড়িতদের সন্ধানে পুলিশি তল্লাশি জারি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷
প্রায় তিন দশক ধরে কাতলামারি গ্রামে তৃণমূল সমর্থক আবদুল বাসির ও উনসা হক গোষ্ঠীর বিবাদ চলে আসছে । দুই পরিবারই ওই গ্রামে বসবাস করে । এই বিবাদের জেরে এর আগে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে । মাঝেমধ্যেই গ্রামে গোলাগুলিও চলে । রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর দুই গোষ্ঠীই শাসকদলে ভিড়ে যায় । কিন্তু তাতেও বিবাদ মেটেনি । মাস ছয়েক আগেও এই বিবাদকে কেন্দ্র করে গুলিবিদ্ধ হন একজন ৷ 14 মে বাসির ও তার দলবল বাড়ি থেকে উনসা হকের ভাইপো আবদুর বারিককে অপহরণ করে বলে অভিযোগ । বাধা দেওয়ায় সেই রাতে বারিকের স্ত্রী সায়েমা বিবিকেও মারধর করা হয় । তারপর থেকেই বারিকের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ।
আরও পড়ুন : Beheaded body found : রেল লাইনের পাশে মহিলার মুন্ডহীন দেহ উদ্ধার মগরাহাটে
উনসা হক আশঙ্কা করেন, তাঁর ভাইপোকে বাসিরের লোকজন খুন করে ফেলেছে । এই ঘটনায় তাঁরা হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় 15 জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন । কিন্তু অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে বিহারে গা ঢাকা দিয়েছিল । শেষ পর্যন্ত এই ঘটনায় চার অভিযুক্তকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে । বিহার থেকে মঙ্গলবার ধরা হয় মূল অভিযুক্ত আবদুল বাসিরকে । পুলিশি জেরায় বারিককে খুনের কথা স্বীকার করে অভিযুক্তরা জানায়, গলা কেটে খুন করার পর বারিকের দেহ এলাকারই মাখনা চাষের জমির পাশে থাকা জলাশয়ে পুঁতে রেখেছে । মঙ্গলবার দুপুরে বাসিরের ছেলে সাদ্দাম সেই জায়গা পুলিশকে দেখিয়ে দেয় । সেখান থেকেই উদ্ধার হয় বারিকের মুণ্ডহীন দেহ । দেহ দেখে তা শনাক্ত করেন বারিকের স্ত্রী-সহ পরিবারের সদস্যরা ।
আরও পড়ুন : Panihati Businessman Death : নিখোঁজ হওয়ার 21 দিনের মাথায় গলাকাটা দেহ উদ্ধার পানিহাটির ব্যবসায়ীর
যদিও এই বিষয়ে দলের জড়িত থাকার প্রসঙ্গকে অস্বীকার করে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মহম্মদ হজরত আলি বলেন, "এটা রাজনৈতিক বিবাদ নয় ৷ ওই দুই পরিবারের ব্যক্তিগত বিরোধ । ওদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ ছিল । আমরা গ্রামে আলোচনায় বসে বিরোধ মেটানোরও চেষ্টা করি । এই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে । আইন আইনের পথেই চলবে ।"
ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, "দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদের জেরেই এই ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি । মূল অভিযুক্তকে মঙ্গলবার বিহার-নেপাল সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয় । ওর বয়ান থেকেই আমরা জানতে পারি, অপহৃত ব্যক্তিকে খুন করে দেহ পুঁতে রেখেছে । আজ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে । এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । ঘটনায় বিহারের একজন মহিলার যোগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে । বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে । তবে অভিযোগপত্রে থাকা 15টি নামের বাইরেও কিছু নাম তদন্তে উঠে আসছে ।"
আরও পড়ুন : Basanti Murder : বিবাদ মেটাতে গিয়ে জামাইয়ের হাতে খুন শ্বশুর, গ্রেফতার অভিযুক্ত