মালদা, 14 জুলাই: আষাঢ়ের বেলাশেষেও বাড়ন্ত বর্ষা । জ্বলন্ত সূর্যের চাঁদিফাটা তাপে ব্যতিব্যস্ত সবাই । বিশেষ কাজ ছাড়া মানুষ নিজেদের ঘরেই বন্দি করে রেখেছে । প্রবল গরম আর আপেক্ষিক আর্দ্রতা থেকে বাঁচতে শুধু ঠাণ্ডা জলের গ্লাসে চুমুক । কিন্তু এই সময়েও পানীয় জল পাচ্ছেন না কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ (Malda Drinking Water Problem)। এলাকায় পানীয় জলের পাইপ লাইন আছে, শুধু আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলটাই নেই । গ্রামবাসীদের দাবি, এক বছর ধরে এভাবেই চলছে । কিন্তু জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর কিংবা নেতা-মন্ত্রীদের কোনও হেলদোল নেই । তাঁরা দ্রুত পানীয় জল সরবরাহের দাবি তুলছেন ।
কালিয়াচকের বিস্তীর্ণ অংশের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইড মিশে থাকায় প্রায় 35 বছর আগে ওই এলাকার দারিয়াপুরে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্প গড়ে তোলা হয় । সেই প্রকল্পের জল সুজাপুর, বামনগ্রাম মোসিমপুর ও গয়েশবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পৌঁছে দিতে বাখরপুরে তৈরি হয় জলাধার ।
এই জলাধারের পানীয় জল পাচ্ছিলেন এক লক্ষ মানুষ । কিন্তু বর্তমানে এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় জনসংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ । তার থেকেও বড় অভিযোগ, জলাধারের কাছাকাছি গ্রামগুলিতে অসংখ্য নতুন বাড়ি তৈরি হয়েছে । আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের পাইপ ফাটিয়ে সেই জল নিজেদের বাড়িতে তুলে নিচ্ছেন বাড়ি মালিকরা । পাইপ ফাটিয়ে জল নেওয়া হচ্ছে আরও অনেক জায়গায় । ফলে এই প্রকল্পের আওতায় থাকা দূরবর্তী গ্রামগুলিতে এক ফোঁটা জল যাচ্ছে না । কখনও জল বেরোলেও তাতে মিশে থাকছে ড্রেনের নোংরা । অভিযোগ, এতকিছু হলেও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর কিংবা প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ।
আরও পড়ুন : কেটেছে 18 বছর, আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল থেকে বঞ্চিত মালদার মানুষ
মোসিমপুরের বাসিন্দা মহম্মদ আকবর আলি বলছেন, দু'মাস ধরে গ্রামের কেউ জল পাচ্ছে না । নেতা-মাথা কেউ খবর নিচ্ছে না । কিনে কত জল খাওয়া যায়? আমরা সরকারের কাছে শুধু জলটা চাইছি । আর আমাদের কিছু চাওয়ার নেই । বালুপুরের মেহেরজান বিবি বলেন, "এক বছর ধরে পানীয় জল পাচ্ছি না । আমাদের শুধু জলেরই অসুবিধে । কলের জলে পা লাল হয়ে যাচ্ছে । অন্যের বাড়ি থেকে জল আনতে হচ্ছে । জল ছাড়া আমাদের কিছু চাওয়ার নেই ।"
বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । ফোনই ধরেননি কেউ । তবে জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ।