মালদা, 20 জানুয়ারি : অবশেষে ধর্মের কল বাতাসে নড়ল । হাইকোর্টের নির্দেশে বন্যাত্রাণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধান সোনামণি সাহার বাড়ি সিল করে দিল পুলিশ । এই ঘটনায় অস্বস্তিতে শাসক শিবির (Harishchandrapur Police seals Boroi TMC Panchayat Pradhan house) ।
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয়কুমার দাস জানিয়েছেন, "পলাতক প্রধানের খোঁজে আমরা শুধু হরিশ্চন্দ্রপুর নয়, বিহারের একাধিক জায়গাতেও খোঁজখবর নিয়েছি । কিন্তু কোথাও তাঁর সন্ধান মেলেনি । হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর বাড়ি সিল করা হয়েছে । বাড়িতে থাকা একাধিক জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । তাঁর সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ।"
2017-য় বন্যাত্রাণের টাকা লুটের অভিযোগ ওঠে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সোনামণি সাহার বিরুদ্ধে । এ নিয়ে প্রথমে ব্লক ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আবদুল মান্নান । কিন্তু প্রশাসন তাঁর অভিযোগের তদন্তে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ এনে শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মান্নান ।
আরও পড়ুন : 2017 Malda Flood Corruption :জামিন পেয়ে মালদায় বন্যাত্রাণের অর্থ নয়ছয়ে বিডিওকেও জড়ালেন তৃণমূল সদস্য
আদালতের নির্দেশে প্রধান সোনামণি সাহার বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেন বিডিও । তদন্তে উঠে আসে, বন্যাত্রাণের 76 লক্ষ টাকা দুর্নীতিতে সরাসরি জড়িত রয়েছেন প্রধান । তবে এফআইআর দায়েরের পরেই গা ঢাকা দেন সোনামণি সাহা ।
এরপর 2021-এর নভেম্বরের মাঝামাঝি আদালত সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করে এক মাসের মধ্যে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলে ৷ তাতেও প্রধান জনসমক্ষে আসেননি । তবে আইনজীবী মারফত আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান সোনামণি সাহা । তবে তা মঞ্জুর করেনি আদালত ৷
দীর্ঘদিন প্রধানের খোঁজখবর না পাওয়ায় 18 জানুয়ারি, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট সোনামণি সাহার বাড়ি সিল করার পাশাপাশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয় । এরপর হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ পদক্ষেপ করে ।
আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানালেও মামলাকারী আবদুল মান্নান বলেন, "আমার অভিযোগের ভিত্তিতে হাইকোর্ট প্রধানের বাড়ি সিল ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে । পুলিশ গতকাল সেই কাজ শুরু করেছে । কিন্তু যেখানে পুলিশ বলছে প্রধানকে পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে প্রধান হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলেন কীভাবে ?" তাঁর অভিযোগ, বর্তমানে যাঁরা প্রশাসন চালাচ্ছেন, তাঁরাই হয়ত পুলিশকে চাপে রেখেছেন । কারণ, এই ঘটনায় প্রধানের সঙ্গে শাসকদলের তাবড় নেতারা জড়িয়ে রয়েছেন । তাই আদালতের চাপে পুলিশ শুধু প্রধানকে নিয়ে পড়ে রয়েছে । তাঁর কথায়, "এখন পুলিশ আর নিরপেক্ষ নয়, দলদাসে পরিণত হয়েছে । আমি চাই, এই ঘটনায় যারা মূল অভিযুক্ত, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায় ।"
এ নিয়ে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সঞ্জীব গুপ্তা তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি । তিনি শুধু বলেন, "সংবাদমাধ্যমের মুখ থেকেই ঘটনাটি শুনলাম । আইন আইনের পথে চলবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতিকে কখনও প্রশ্রয় দেন না । এটা আদালতের বিচারাধীন বিষয়। আমরা আইন মেনে প্রশাসনকে সবরকম সহযোগিতা করব ।"
তৃণমূল নেতা একথা বললেও একটি প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে ৷ হাইকোর্টে সোনামণিদেবীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কার্যত প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার পরেও বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতে তাঁকেই কেন এখনও প্রধান হিসাবে রেখে দেওয়া হয়েছে ? তবে কি সর্ষের মধ্যে আরও ভূত লুকিয়ে রয়েছে ?