মালদা, 16 মে : গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'পক্ষের পড়ুয়াদের দাবি এখনও বর্তমান । শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের সাথে পড়ুয়াদের একাংশের দূরত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে । নিজেদের দাবিতে অনড় পড়ুয়ারা উপাচার্যের ঘরে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছে । অন্যদিকে সেই ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং পড়ুয়াদের অন্য একাংশ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে মৌন মিছিল বের করে ৷ তারা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে ডেপুটেশন দেয় ৷ গতকাল রাতে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে শারীরিক নিগ্রহ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইংরেজবাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে ।
উল্লেখ্য, ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগে সম্প্রতি স্নাতকোত্তরে ভরতি হন মহম্মদ ফরিদ মণ্ডল নামে এক পড়ুয়া । তাঁর ভরতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে । বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ওই বিভাগ-সহ আরও কয়েকটি বিভাগে ভরতি হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত অ্যালায়েড সাবজেক্টে অনার্স থাকতে হবে । পরে সেই বিষয়ে আরেকটি কোর্স করার পরই ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগে ভরতি হতে পারে পড়ুয়ারা । এই নিয়মে ভেরিফিকেশনের সময় আটকে যান ফরিদ । তাঁর অ্যালায়েড সাবজেক্ট ছিল জু়লজি । বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালায়েড বিষয় হিসেবে জ়ুলজি ছিল না । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ভুলবশত তালিকায় জ়ুলজি বিষয়টি ছিল না । কিন্তু জ়ুলজিতে অনার্স থাকলে ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগে ভরতি হওয়া যেতে পারে বলে জানান ফরিদ । এরপরই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠক ডাকা হয় । সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ফরিদের দাবি সঠিক । এরপরই তাঁকে ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন স্নাতকোত্তর বিভাগে ভরতি নেওয়া হয় । অন্যদিকে আর এক অংশ পড়ুয়াদের দাবি অন্যায়ভাবে কেন ওই পড়ুয়াকে ভরতি নেওয়া হয় । বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, একজন পড়ুয়ার জন্য কেন EC বৈঠক ডাকা হল তা নিয়ে বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা মঙ্গলবার রাতে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর ঘরে যান । তখনই বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে সরব একাংশ উপাচার্যের ঘরে আসে । দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয় । এরপর বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা উপাচার্যের ঘরেই অবস্থান শুরু করেন । বাংলা বিভাগের এম ফিল-এর ছাত্র মোহন ঘোষের বিরুদ্ধে উপাচার্য , রেজিস্ট্রার সহ আরও কয়েকজনকে শারীরিক নিগ্রহ করার অভিযোগ ওঠে যার জেরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন উপাচার্য স্বাগত সেন । তাঁকে এবং রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরিকে রাতেই ভরতি করা হয় মালদা মেডিকেলে । বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পঠনপাঠন ও কাজকর্ম হয়নি ।
বিষয়টি নিয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অচিন্ত্যকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গতকালের ঘটনার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মী সহ পড়ুয়ারা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনওভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না ৷ অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৷ তাই আমরা আজ নিঃশব্দ প্রতিবাদ জানাব৷ আমরা চাই, আমাদের প্রতিবাদ সারা দেশে ধ্বনিত হোক ৷ এখানে শুধু মালদা নয়, বিভিন্ন জেলার ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে ৷ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলতে পারি না ৷ এখানকার ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সন্তানতুল্য ৷ তাদের যাতে ভালো হয় , এখানে যেন পঠনপাঠনের পরিবেশ ফিরে আসে , এখানে যেন সবাই নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারে , সেটা প্রতিষ্ঠা করা আমাদের একমাত্র কাম্য ৷ পড়ুয়াদের আন্দোলন শুরুর পর থেকে সমস্ত অধ্যাপক ও অধ্যাপিকারা বারবার এসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন ৷ কিন্তু পড়ুয়াদের একাংশ সেই চেষ্টায় আমল দেয়নি ৷ আমরা শহরজুড়ে আমাদের মৌন প্রতিবাদ ছড়িয়ে দিয়েছি ৷ এই প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনে কোনও সমস্যা হয়নি ৷ যে ছাত্রছাত্রীরা আমাদের এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছে, তারা নিজেদের ইচ্ছেতেই এসেছে ৷ মৌনতাই আজ আমাদের অস্ত্র ৷ এখনও পর্যন্ত উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ৷ তবে আমার ধারণা, আজ তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে নিজের নিজের কোয়ার্টারে আসবেন ৷ ইতিমধ্যে তাঁদের পরিবারের লোকজন মালদায় এসে পৌঁছেছেন ৷ তাঁরা হয়তো উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন ৷ "
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়াদের মৌন মিছিল শেষ হয় জেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে ৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে ডেপুটেশন প্রদান করে গোটা ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবি জানানো হয় ৷