মালদা, 11 অগস্ট : চরম বিপদসীমা পেরিয়ে গেল গঙ্গা । এবার সংরক্ষিত এলাকাতেও জারি করা হল লাল সতর্কতা। গঙ্গার জলস্তর বৃদ্ধিতে ঘুম উড়েছে সেচ দফতরের। গতকাল থেকেই নদীর বাঁধগুলিতে শুরু হয়েছে তীক্ষ্ণ নজরদারি। রাতভর কাজ করে চলেছেন দফতরের কর্মী ও আধিকারিকরা। আজ ভোর থেকে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে ছুটে বেড়াচ্ছেন জেলা সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারও। এদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, নদীর জল বিভিন্ন এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি গঙ্গায় জেগে ওঠা চরগুলির। আরও কয়েকদিন গঙ্গার জলস্তর বাড়তে থাকবে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর। জেলার বাকি দুই বড় নদী ফুলহর ও মহানন্দারও জলস্তরও বেড়ে চলেছে। যদিও এখনও ওই দুই নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছোঁয়নি।
মৌসুমি অক্ষরেখার প্রভাবে কয়েকদিন ধরেই উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টি চলছে। সেই জল নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে গঙ্গার। গত পরশু থেকে জলস্তর বৃদ্ধির হার খুব বেশি। গতকাল সন্ধেয় নদীর জলস্তর ছিল 25.20 মিটার। রাতের মধ্যেই জলস্তর আরও 12 সেন্টিমিটার বেড়ে আজ সকালে হয় 25.32 মিটার। আজ দুপুর 12টায় গঙ্গা 25.35 মিটার উচ্চতায় বয়েছে। অর্থাৎ সেই সময় নদী চরম বিপদসীমা 25.30 মিটার থেকে 5 সেন্টিমিটার বেশি উচ্চতায় ছিল। আর 20 সেন্টিমিটার জলস্তর বাড়লে বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলবে ফুলহরও। আজ বেলা 12টায় তার উচ্চতা ছিল 27.23 মিটার। এভাবে জলস্তর বাড়লে দু’তিনদিনের মধ্যেই ফুলহর তার বিপদসীমা 27.43 মিটার উচ্চতায় পৌঁছে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে খানিকটা স্বস্তি দিচ্ছে মহানন্দা। আজ দুপুরে মহানন্দার জলস্তর ছিল 19.56 মিটার। তার বিপদসীমা 21.00 মিটার থেকে 44 সেন্টিমিটার নীচে। তবে মহানন্দার জলস্তরও ক্রমশ বাড়ছে।
এই মুহূর্তে গঙ্গার জল রতুয়া 1 নম্বর এবং মানিকচক ব্লকের বেশ কিছু গ্রামে ঢুকে পড়েছে। রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা, শ্রীকান্তটোলা, সুদামটোলা, কোতওয়ালি, জগবন্ধুটোলা, সম্বলপুর, আমিরচাঁদটোলা সহ অন্তত 15-16টি গ্রামে ঢুকে পড়েছে। মানিকচক ব্লকের জোতপাট্টা, রামনগর, গোপালপুর, বালুটোলা প্রভৃতি 7-8টি গ্রামেও এখন গঙ্গার জল। একই অবস্থা কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামে। তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি নদীতে জেগে ওঠা চরগুলিতে। বিশেষ করে বিহার সংলগ্ন গদাইচরের পরিস্থিতি খুব খারাপ। গঙ্গার জলস্তর অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় দুর্গম ওই চরের সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে ওই চর পুরোপুরি জলের তলায়। নিজেদের নিরাপদে রাখতে বিহারের মণিহারী ঘাটের দিকে রওনা দিয়েছেন বাসিন্দারা ।
বাঁধে নজরদারি ও ভাঙন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজ ভোর থেকেই গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন জেলা সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণবকুমার সামন্ত। ফোনে তিনি বলেন, “গঙ্গা আজ চরম বিপদসীমা ছাপিয়ে গিয়েছে। আরও দু’একদিন জলস্তর বাড়তে থাকবে বলেই আমাদের মনে হচ্ছে। গঙ্গার এভাবে জলস্তর বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেবে কি-না তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না। গঙ্গার সব জায়গাতেই বাঁধ রয়েছে। তবে নিচু কিছু অংশে মানুষের বসবাস রয়েছে । সেসব জায়গায় হয়তো জল ঢুকতে পারে । তবে বাঁধ ভেঙে বন্যার সম্ভাবনা আপাতত আমরা দেখছি না। জেলার কিছু জায়গায় গঙ্গার ভাঙন চলছে । তার মধ্যে বিপজ্জনক এলাকাগুলিতে আমরা ভাঙন রোধের কাজ করছি । বাঁধ ও ভাঙনের উপর আমরা 24 ঘণ্টা তীক্ষ্ণ নজর রেখেছি। যাতে কোনও সমস্যা হলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি। আর গঙ্গার জলস্তর বাড়লে গদাইচর কিংবা অন্য চরগুলিতে জল উঠবেই। কারণ, চরের উচ্চতা খুব বেশি থাকে না। ভূতনির কোশিঘাটে ভাঙনের একটু সমস্যা ছিল। আমরা অনেক চেষ্টা করে সেখানে ভাঙন রোধ করতে পেরেছি। তবে এখনই ফুলহর ও মহানন্দা নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। দুই নদীর জলস্তরই বিপদসীমার নিচে রয়েছে।”
রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের জঞ্জালিটোলা থেকে কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের পারলালপুর পর্যন্ত মালদা জেলায় গঙ্গার প্রবাহ। এই জেলা দিয়ে প্রায় 70 কিলোমিটার প্রবাহিত হওয়ার পর গঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পর্যন্ত মধ্যগতি শেষ করে মালদাতেই নিম্নগতিতে বইতে শুরু করেছে গঙ্গা। এরই প্রভাবে এই জেলা বারবার ভাঙনের শিকার হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। ভাঙন রোধের পাশাপাশি সেচ দফতর এবার বন্যা পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেয়, সেটাই এখন দেখার।